টাকা সঞ্চয় করার দিন আজ
আজ ৩১ অক্টোবর ‘বিশ্ব সঞ্চয় দিবস’ বা ‘বিশ্ব মিতব্যয়িতা দিবস’। পরিবার ও জাতির কল্যাণে সকলকে মিত্যব্যয়ি হওয়ার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে এ দিবস পালন করা হয়।
১৯২৪ সালে ৩০ অক্টোবর ইতালির মিলানে অনুষ্ঠিত বিশ্বের বিভিন্ন সঞ্চয় ব্যাংকের প্রতিনিধিদের প্রথম বিশ্ব কংগ্রেসে গৃহীত এক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দিবসটি পালন শুরু হয়। দিনটি আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করেছিলেন একজন ইতালীয় অধ্যাপক ফিলিপ্পো রাভিজা। ১৯২৫ সালে প্রথম বিশ্ব সঞ্চয় দিবস পালিত হয়।
এ দিবসের তাৎপর্য হলো, বিশ্ব অর্থনীতির জন্য ব্যক্তিগত সঞ্চয়ের গুরুত্ব সবার কাছে উপস্থাপন করা। বর্তমানে যুদ্ধ, আর্থিক মন্দা, নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতিতে ভবিষ্যতের শঙ্কা এড়িয়ে যাওয়া যায় না। এ ক্ষেত্রে সঞ্চয়ের গুরুত্ব আরও বেশি।
বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলো সঞ্চয় দিবস পালনে বিশেষ জোর দিয়ে থাকে। এসব দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। বিশ্বজুড়ে মানুষকে সঞ্চয়ী করে তোলার পেছনে যেমন রয়েছে প্রত্যেক নাগরিকের সুরক্ষিত জীবনের নিশ্চয়তা, তেমনি বিশ্ব অর্থনীতিকে একটি শক্তিশালী ভিত্তিতে গড়ে তোলার প্রয়াস।
অপচয়কারীরা নিজের জন্য তো নয়ই, বরং সমাজ, পরিবার ও জাতির জন্যও কিছু করতে পারে না। বিজ্ঞানী ফ্রাকলিনের এই প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘ছোট ছোট ব্যয় থেকে সাবধান হও। একটি ছোট ছিদ্র মস্তো বড় জাহাজকে ডুবিয়ে দিতে পারে’।
অপব্যয়রোধ ও সঞ্চয় ব্যক্তি, সমাজ এবং সর্বোপরি জাতির জন্য কল্যাণকর। এই সঞ্চিত অর্থ ব্যবহৃত হতে পারে যে কোনো উন্নয়নমূলক কাজে, যা দিতে পারে স্বনির্ভরতা। মিতব্যয় সম্পর্কে সূরা ফুরকানের ৬৭ নম্বর আয়াতে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘রহমানের বান্দা তারাই … যারা ব্যয়ের সময় অপব্যয় করে না আবার কার্পণ্যও করে না। বরং এ দু’য়ের মাঝে মধ্যপন্থায় তারা থাকে।’
মিতব্যয় প্রসঙ্গে সূরা বনি ইসরাইলের ২৬-২৯ নম্বর আয়াতে আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘অপচয় করো না। অপচয়কারীরা শয়তানের ভাই। … তুমি (কার্পণ্য করে) তোমার হাত ঘাড়ে আটকে রেখ না; আবার (অধিক ব্যয় করতে যেয়ে) তা সম্পূর্ণ প্রসারিত করো না। তাহলে তুমি নিন্দিত ও নিঃস্ব হয়ে যাবে।’
ইসলামি স্কলাররা অপচয় বা অপব্যয়ের বিভিন্ন পরিচয় দিয়েছেন। হজরত ইবনে মাসউদ ও ইবনে আব্বাসের (রা.) মতে, ‘অপ্রয়োজনে ব্যয় করাই হল অপব্যয়।’ আয়ের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে প্রয়োজন অনুপাতে ব্যয় করা ইসলামের নির্দেশ। সম্পদ থাকতে নিজে কষ্ট করা, স্ত্রী ও সন্তানকে কষ্টে রাখা, নিকটতম আত্মীয়-স্বজনদের দেখাশোনা না করা, পাড়া-প্রতিবেশিদের খোঁজ-খবর না নেওয়া হারাম। এগুলোই কৃপণতা। আবার অঢেল সম্পদ থাকলে প্রয়োজনের অধিক অতিরিক্ত ব্যয় করা অপব্যয়ের শামিল।
বর্তমানে যুদ্ধ, আর্থিক মন্দা, নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতিতে ভবিষ্যতের শঙ্কা এড়িয়ে যাওয়া যায় না। তাই প্রতিটি মানুষকেই নিজের এবং পরিবারের কথা ভেবে সঞ্চয়ে উৎসাহী হওয়া উচিত।
সঞ্চয়ের প্রবণতা বাড়লে শুধু নিজের বা পরিবারের উন্নতি হয় না, এটি একটি দেশের অর্থনীতেকে আরও শক্তিশালী করে তুলতে পারে। এ কারণে বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলো সঞ্চয় দিবস পালনে বিশেষ জোর দিয়ে থাকে।