জাতীয়

পদ্মা সেতু হয়ে ট্রেনের ভাড়া কমল

ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত চালু হওয়া রেলসেবায় ভাড়া কমিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। এই পথে আন্তনগর ট্রেনে (নন-এসি) ভাড়া ছিল ৩৫০ টাকা। তা কমিয়ে ২৩৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ফলে ভাড়া কমল ১১৫ টাকা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১০ অক্টোবর ঢাকা-ভাঙ্গা পথে রেল চলাচল উদ্বোধন করেন। তবে যাত্রী নিয়ে ট্রেন চলাচল এখনো শুরু হয়নি। আগামী ১ নভেম্বর থেকে যাত্রীসহ ট্রেন চলাচল শুরু হবে।

শুরুতে চলবে দুটি ট্রেন—সুন্দরবন এক্সপ্রেস ও বেনাপোল এক্সপ্রেস। এর মধ্যে সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনটি ঢাকা থেকে ভাঙ্গা, রাজবাড়ী, কুষ্টিয়া ও যশোর হয়ে খুলনায় যাবে। অন্যটি একই পথ ধরে যাবে বেনাপোল পর্যন্ত। নভেম্বরের শেষ দিকে ট্রেন আরও বাড়বে বলে রেলের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

রেলের মহাপরিচালক মো. কামরুল আহসান বলেন, যাত্রীদের সুবিধার জন্য ভাড়া কমানো হয়েছে।

ঢাকা-ভাঙ্গা পথে রেলের আগের ভাড়া ঠিক করা হয়েছিল এ মাসের শুরুতে। সেই ভাড়া বাসের চেয়ে বেশি ছিল। পাশাপাশি ঢাকা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে দক্ষিণ–পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোয় চলাচলকারী ট্রেনের চেয়ে ভাড়া বেশি পড়েছিল পদ্মা সেতু হয়ে চলাচলকারী ট্রেনের। বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা হয়।

তখন ভাড়া প্রস্তাবের ক্ষেত্রে ঢাকা থেকে প্রতিটি গন্তব্যের বাস্তব দূরত্বের সঙ্গে পদ্মা সেতু এবং গেন্ডারিয়া থেকে কেরানীগঞ্জ পর্যন্ত উড়ালপথের জন্য বাড়তি দূরত্ব যোগ করে রেলওয়ের ভাড়া নির্ধারণ সংক্রান্ত কমিটি। এর ফলে ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট বা ঢাকা-রাজশাহী পথের তুলনায় ঢাকা-ভাঙ্গা পথে যাত্রীদের বাড়তি ভাড়ার বোঝা চাপে।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, পদ্মা সেতুর প্রতি কিলোমিটারকে ২৫ কিলোমিটার দূরত্ব ধরে প্রথমে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছিল। একে রেলওয়ে ‘পন্টেজ চার্জে’র জন্য বাড়তি দূরত্ব বলছে। আর গেন্ডারিয়া থেকে কেরানীগঞ্জ পর্যন্ত উড়ালপথের প্রতি কিলোমিটারকে ধরা হয়েছিল ৫ কিলোমিটার। এ জন্যই ঢাকা থেকে ভাঙ্গার প্রকৃত দূরত্ব ৭৭ কিলোমিটার হলেও ভাড়া নির্ধারণের ক্ষেত্রে পড়ে যায় ৩৫৩ কিলোমিটার।

উল্লেখ্য, রেলপথের মধ্যে কোনো সেতু বা সমজাতীয় অবকাঠামো পড়লে ভাড়ার সঙ্গে বাড়তি মাশুল নির্ধারণ করা হয়, যাকে ‘পন্টেজ চার্জ’ বলে। বঙ্গবন্ধু সেতুর ক্ষেত্রে প্রতি কিলোমিটারের জন্য বাড়তি ‘পন্টেজ চার্জ’ ধরা হয়েছে প্রায় পৌনে ১৭ কিলোমিটার।

ভাড়া বেশি পড়ার পর তা পর্যালোচনার জন্য সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে রেল। কমিটি গেন্ডারিয়া-কেরানীগঞ্জ পর্যন্ত উড়ালপথের ‘পন্টেজ চার্জ’ সাময়িকভাবে বাদ দেওয়ার প্রস্তাব করে। আর পদ্মা সেতুর ক্ষেত্রে তা ১০ শতাংশ কমানোর সুপারিশ করে।

রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী ‘পন্টেজ চার্জে’র ক্ষেত্রে ছাড় দেয়। ফলে ভাড়া কমে যায়।

ট্রেনের টিকিটের সাতটি শ্রেণি আছে। প্রত্যেক শ্রেণিতেই ভাড়া কমানো হয়েছে। এখন ঢাকা থেকে ভাঙ্গা জংশন পর্যন্ত শোভন শ্রেণির ভাড়া ধরা হয়েছে ১৯৫ টাকা, প্রথম শ্রেণির আসন ৩১০ টাকা, প্রথম শ্রেণির বার্থের ভাড়া ৩৬৫ টাকা, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত (এসি) আসনের ভাড়া ৪৬৫ টাকা এবং এসি বার্থ শ্রেণির ভাড়া ৬৯৫ টাকা।

শোভন চেয়ারে ঢাকা থেকে যশোরের ভাড়া ছিল ৫৬৫ টাকা, যা এখন ৪৫৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ঢাকা থেকে খুলনা পথে ৬১৫ টাকার জায়গায় ভাড়া ৫০০ টাকা দিতে হবে যাত্রীদের।

রেলওয়ের সূত্র বলছে, ভাড়ার এই ছাড় সাময়িক। ভাঙ্গা থেকে গোপালগঞ্জ ও নড়াইল হয়ে যশোর পর্যন্ত নতুন রেললাইন তৈরি হচ্ছে। সেটা চালু হতে পারে আগামী বছর জুনে। তখন এই পথে রেল চলাচল শুরু হলে খুলনা ও বেনাপোল পর্যন্ত দূরত্ব কমবে। তখন ‘পন্টেজ চার্জ’ আগের জায়গায় ফিরিয়ে নেওয়া হবে।

২০২২ সালের ২৫ জুন পদ্মা সেতু চালু করা হয়। দ্বিতল এই সেতুর ওপর দিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। সেতুর ভেতরে রয়েছে ট্রেন চলাচলের পথ। পদ্মার দুই পাড়ে যোগাযোগ স্থাপন করতে নেওয়া হয় আলাদা প্রকল্প, যা পদ্মা সেতু রেল লিংক প্রকল্প নামে পরিচিত।

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ৩ মে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়। অনুমোদনের সময় প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় ৩৪ হাজার ৯৮৮ কোটি টাকা। বর্তমানে এই প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি টাকায়। চীনের অর্থায়নে ওই দেশেরই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রেলপথ নির্মাণের কাজটি করছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d