রাজনৈতিক নয়, অধিকার আদায়ের আন্দোলন করছি র্যাবকে পোশাক শ্রমিকরা
ঢাকা: ন্যূনতম মজুরির অধিকার আদায়ে তিনদিন ধরে চলা রাজধানীর মিরপুরে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-৪)। এ সময় শ্রমিকরা তাদের দাবি ও অভিযোগ তুলে ধরেন।শ্রমিকরা বলেন, আমাদের আন্দোলন কোনো রাজনৈতিক আন্দোলন নয়। আমরা অধিকার আদায়ের আন্দোলন করছি।
বুধবার (১ নভেম্বর) দুপুর ২টার দিকে রাজধানীর পূরবী সিনেমা হলের পাশে প্রধান সড়কে পোস্ট অফিসের সামনে র্যাব-৪’র অধিনায়কের নেতৃত্বে এই ব্যাটেলিয়নের কর্মকর্তারা শ্রমিকদের সঙ্গে অন্তত আধা ঘণ্টা কথা বলেন।
শ্রমিকরা র্যাবের কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বলছেন, আমাদের দাবি অধিকার আদায়ের। আমরা কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মী না। গত পাঁচ বছর ধরে বেতন বাড়ে না; তাই বেতন বাড়ানোর দাবিতে আমরা আন্দোলন করছি। কোনো রাজনৈতিক দল আমাদের দেখে না।
র্যাবের কর্মকর্তাদের সামনে নিজেদের দাবির বিষয়ে শ্রমিকরা বলেন, গত কয়েক দিন ধরে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে কারখানার সামনে আন্দোলন করছিলাম। মঙ্গলবার স্থানীয় কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা আমাদের ওপর হামলা চালায়। বেতন বাড়ানোর দাবি করা কি অন্যায়? অথচ, তারা আমাদের ওপর গুলি করলো, নির্যাতন করলো। কেউ এই বিষয় নিয়ে কথা বলছে না। আমরাই শুধু মার খেলাম। মালিক পক্ষ তো এলো না। মারও খেলো না। তারাই আমাদের আন্দোলন থামাতে এই হামলা করিয়েছে। এ সময় শ্রমিকরা রাজনৈতিক নেতাদের হামলায় দুজন শ্রমিক নিহতের কথা র্যাবকে জানায়। র্যাব তাদের সকল অভিযোগের তদন্তের আশ্বাস দিয়েছে।
শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলা শেষে র্যাব-৪’র অধিনায়ক (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ আবদুর রহমান বলেন, কি কারণে শ্রমিকরা রাস্তা অবরোধ করে রেখেছে। তাদের দাবি দাওয়ার বিষয়ে আমরা শুনেছি। তারা বেশ কিছু অভিযোগ করেছেন। আমরা তাদের ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ে তদন্তের কথা বলেছি। এটা যদি সত্যি হয়ে থাকে অবশ্যই তদন্তের মাধ্যমে দায়ীদের বিরুদ্ধে আমরা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।
শ্রমিক নিহতের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমরা এখন জানলাম। শ্রমিকরা বলছে, তাদের দুজন ভাই মারা গেছে। দুয়েকটা ছবি তারা দেখিয়েছে। কিন্তু মারা গেছে এমন কোনো তথ্য তারা দেখাতে পারেনি। সত্যতা যাচাইয়ের বিষয় আছে। আসলে এ ধরনের পরিস্থিতিতে নানা ধরনের গুজব ছড়ায়। বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখবো। কারা হামলা করছে সে বিষয় তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। তারপর আমরা বলতে পারবো। কেউ জড়িত থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
র্যাব-৪’র অধিনায়ক অধিনায়ক (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ আবদুর রহমান বলেন, শ্রমিকরা কোনো সহিংসতা করবে না। তাদের দাবির অগ্রগতি দেখলে তারা আন্দোলন থেকে সরে যাওয়ার আশ্বাস দিয়েছে।
এর আগে, সকাল ৮টার দিকে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন পোশাকশ্রমিকরা। এতে মিরপুর ১০, ১১, ১২ এবং ১ ও ২ নম্বরের আশপাশের এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। শ্রমিকরা রাস্তায় কোনো যানবাহন দেখলেই ঘুরিয়ে দেন।
সকাল ৮টার দিকে পল্লবী থানাধীন পূরবী বাসস্ট্যান্ড থেকে ১২ নম্বর বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত সড়কে কয়েক হাজার শ্রমিক লাঠিসোঁটা নিয়ে অবস্থান নেন। এরপর তারা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে মিরপুর ১০, ১১, ১২, ১৩ ও ১৪ নম্বরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করেন।
এদিকে শ্রমিক অসন্তোষের কারণে কারখানা বন্ধ ঘোষণা করতে দেখে গেছে এই এলাকায়। মঙ্গলবারই বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে ইপিলিয়ন আ্যাপারেলসসহ বেশ কয়েকটি কারাখানা।