হরতাল-অবরোধে হোটেলের ৮০ ভাগ বুকিং বাতিল, শঙ্কায় কুয়াকাটার পর্যটন ব্যবসায়ীরা
বিএনপিসহ বিরোধীদলগুলোর হরতাল-অবরোধ ও আন্দোলনের প্রভাবে পটুয়াখালীর কুয়াকাটার পর্যটন ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
আজ শুক্রবার ও আগামীকাল শনিবারের কমপক্ষে ৮০ ভাগ আগাম বুকিং বাতিল হয়েছে ইতোমধ্যে। মৌসুমের শুরুতেই লোকসানের শঙ্কায় পড়েছেন সেখানকার পর্যটন ব্যবসায়ীরা।
সাধারণত সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে কুয়াকাটায় দেশি-বিদেশি পর্যটকদের সমাগম ঘটে এবং হোটেল-মোটেলসহ পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা এ সময়ে ব্যবসায় লাভের মুখ দেখেন।
বৃহস্পতিবার কুয়াকাটার বেশ কয়েকটি হোটেল-মোটেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হরতাল ও অবরোধের কারণে সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে কুয়াকাটায় পর্যটকদের আনাগোনা কমে গেছে। আগাম বুকিংও বাতিল করছেন অনেকে।
কুয়াকাটা গেস্ট হাউসের পরিচালক ও কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোতালেব শরীফ দ্য বলেন, ‘আমার হোটেলে কক্ষ আছে ২২টি। ৭০ জন একসঙ্গে হোটেলে অবস্থান করতে পারেন। হরতাল-অবরোধের কারণে এখন হোটেল খালি। পর্যটকরা পরিবার-পরিজন নিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ভ্রমণে আগ্রহী নন বলেই এ পরিস্থিতি।’
তিনি জানান, শুক্রবার ও শনিবারের জন্য যে পর্যটকরা বিভিন্ন হোটেল-মোটেলে আগাম বুকিং দিয়েছিলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ৮০ ভাগ আগাম বুকিং বাতিল হয়েছে।
আবাসিক হোটেল খান প্যালেসের ম্যানেজার আব্দুস সাকুর জানান, এ সপ্তাহে তার হোটেলে বুকিং নেই বললেই চলে। শুক্রবারের জন্য ১০-১২টি রুম বুকিং আছে, বাকিগুলো খালি। শনিবারের সব বুকিং বাতিল করেছেন পর্যটকরা।
কুয়াকাটা সাগরতীরে অবস্থিত আবাসিক হোটেল সৈকতে ৪০টি রুমের ২০টি বুকিং দেওয়া ছিল আগামী ৩ ও ৪ নভেম্বর শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে। কিন্তু চলমান আন্দোলনের কারণে ১৫টি বুকিং বুধবার রাতে বাতিল করেছেন পর্যটকরা। বাকি পাঁচটির বুকিং বাতিলের আশঙ্কা করছে হোটেল কর্তৃপক্ষ।
হোটেলের পরিচালক কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ মো. জিয়া রহমান বলেন, ‘দেশে হঠাৎ রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে পর্যটন মৌসুমের শুরুতেই পর্যটন ব্যবসায় ধস নেমে আসতে পারে বলে আশঙ্কা করছি। এ মৌসুমে বিশেষ করে সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে কুয়াকাটা পর্যটকে মুখরিত হওয়ার কথা থাকলেও হোটেল-মোটেল, রেস্টুরেন্টসহ পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের এখন বেহাল দশা।’
‘পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর থেকে সপ্তাহের বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবারের জন্য চার-পাঁচ দিন আগেই ৭০ শতাংশ রুম বুকিং হয়ে যেত। কিন্তু চলতি সপ্তাহে বড় ধাক্কা খেয়েছি,’ যোগ করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘আমার হোটেলের কর্মচারী ২০ জন। তাদের পারিশ্রমিক, হোটেলের বিদ্যুৎ বিলসহ দৈনিক কমপক্ষে ২০ হাজার টাকা খরচ আছে। এ অবস্থা চললে হোটেল বন্ধ করতে বাধ্য হব। কর্মীরাও কাজ হারিয়ে বিপাকে পড়বেন।’
এই পর্যটন ব্যবসায়ী আরও বলেন, ‘অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর পর্যটকদের ভালো সাড়া মিলেছিল। কিন্তু অবরোধসহ রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে তাতে ভাটা পড়েছে। কুয়াকাটার ১৩০টি আবাসিক হোটেলের অবস্থাই প্রায় একইরকম।’
যোগাযোগ করা হলে ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব কুয়াকাটার (টোয়াক) সভাপতি রুমান ইমতিয়াজ তুষার বলেন, ‘দেশের পরিস্থিতির সঙ্গে কুয়াকাটার পর্যটন ব্যবসা সম্পর্কিত। মৌসুমের শুরুতেই বড় ধাক্কা লেগে গেল। এখানে কমপক্ষে পাঁচ হাজার লোক সরসরি পর্যটন সেবায় জড়িত। তাদের সঙ্গে পরিবারের লোক আছে আরও কমপক্ষে ২৫ হাজার। এভাবে চলতে থাকলে বেকারত্ব বাড়বে।’
তিনি আরও বলেন, ‘পর্যটনের সঙ্গে নিরাপত্তা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। দেশের পরিস্থিতি নিরাপদ না হওয়া পর্যন্ত কুয়াকাটায় পর্যটক আসবে না। এ কারণে আবাসিক হোটেলগুলো ক্ষতির সম্মুখীন হবে। এ সময়টাতে কুয়াকাটায় পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড় থাকে। হোটেল-মোটেলে কোনো সিট ফাঁকা থাকে না। আর এ বছর মৌসুমের শুরুতে কুয়াকাটায় কোনো পর্যটক নেই। হোটেলের সব রুম খালি পড়ে আছে।’
কুয়াকাটা স্থানীয় পর্যটনমুখী ব্যবসায়ীরা জানান, ভরা পর্যটন মৌসুমের এই তিন মাসে তাদের লোকসান কাটিয়ে লাভের মুখ দেখার আশায় অপেক্ষা করে থাকেন। বর্তমানে তাদের সে আশার গুড়েবালি।
কুয়াকাটা ট্যুর গাইড পরিচালক কে এম বাচ্চু বলেন, ‘আমাদের এখানে ২০টি ট্যুরিজম বোট (নৌকা) আছে। প্রতিটি বোটের ১০ জন স্টাফ আছে। সেই স্টাফদের বেতন কীভাবে দেবেন, বর্তমানে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন বোট মালিকরা।’