রাজনীতি

জনপ্রিয়তা থাকলে আগুনসন্ত্রাসের প্রয়োজন কেন?

জনমুখী রাজনীতি করলে যেকোনো সরকারের অধীনে নির্বাচনে সফল হওয়া সম্ভব বলে মনে করেন ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের সভাপতি ড. মো. হাবিবুর রহমান। বিদেশি শক্তি নিজের স্বার্থে বাংলাদেশে দুর্যোগ কায়েম করছে বলে মন্তব্য করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চক্ষু বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শহীদ বুদ্ধিজীবী কন্যা ডা. নুজহাত চৌধুরী। জনসংযোগ না থাকলে অপরাজনীতি সন্ত্রাসের পথে, গণতন্ত্রবিরোধী পথে যায় বলে মনে করেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর।

শুক্রবার সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও অপরাজনীতি শীর্ষক আলোচনা সভায় তারা এসব কথা বলেন। জাতীয় প্রেসক্লাবের কাজী আকরাম খাঁ হলে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে এডুকেশন রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ফোরাম অব বাংলাদেশ ইআরডিএফবি।

সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদকে বিনাপুঁজির ভালো ব্যবসা বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন সভার প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের সভাপতি ড. মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘ ধর্মান্ধতা আর অশিক্ষার সুযোগ নিয়ে এসব দেশে বিস্তৃত হচ্ছে।’ জনমুখী রাজনীতি করলে যেকোনো সরকারের অধীনে নির্বাচনে সফল হওয়া সম্ভব, তার উদাহরণ হিসেবে ১৯৭০এর নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের জয়লাভের কথা মনে করিয়ে দেন ড. মো. হাবিবুর রহমান। হৃদয়ে দেশাত্মবোধ থাকলে সকলকে অপরাজনীতি না করার আহ্বান জানান তিনি।

কেন বিএনপির ‘টেক ব্যাক বাংলাদেশ’ প্রশ্ন তুলে ড. মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘পেছনে ফিরে গেলে স্বার্থসিদ্ধি করা যায়। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে একবার ‘টেক ব্যাক বাংলাদেশ’ হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে দেশের অগ্রগতি রুখে দিতে কারাগারের মতো সুরক্ষিত স্থানে চার নেতাকে হত্যা করা হয়েছিলো, বলেন তিনি।’

হত্যাকাণ্ডকে অপরাজনীতির নিকৃষ্টতম পথ হিসেবে উল্লেখ করেন ডা. নুজহাত চৌধুরী বলেন, ‘১৯৭০এর নির্বাচনে জয় পেয়েও বঙ্গবন্ধুকে যে ক্ষমতা নিতে দেওয়া হয়নি, তার মধ্য দিয়েই এই অঞ্চলে অপরাজনীতির গোড়াপত্তন হয়। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা, শিশু রাসেলকে হত্যা অপরাজনীতির নিকৃষ্টতম উদাহরণ বলে মত দেন তিনি। সেই অপরাজনীতি এখনো চলমান, তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর ১৮-১৯ বার হত্যাচেষ্টা হয়েছে এবং পুলিশ হত্যা হয়েছে বলে সভায় বলেন তিনি। রাজনীতিতে জনপ্রিয়তা ও জনগণের মাঝে ভিত্তি থাকলে মানুষকে পিটিয়ে মারা বা আগুনসন্ত্রাসের কী প্রয়োজন, প্রশ্ন তুলে নুজহাত চৌধুরী বলেন, যে দলের জন্ম গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় হয়নি, যে দল কোনো বিদেশি স্বার্থে এবং দেশের ভেতরের স্বার্থান্বেষী মহলের স্বার্থে তথাকথিত রাজনীতি করে, সেই কার্যকলাপই অপরাজনীতি।

বাংলাদেশে বিদেশি স্বার্থ না থাকলে স্বাধীন দেশের নির্বাচন ও বিচার প্রক্রিয়ায় বিদেশি শক্তি নাক গলাচ্ছে কেন, প্রশ্ন তুলে নুজহাত চৌধুরী জানতে চান, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে বিদেশি শক্তির নাক গলানোর, বিরোধিতা করার অর্থ কী? কান টানলে যেভাবে মাথা আসে, সেভাবে বিএনপিকে টানলে জামায়াতে ইসলামী আসবে, জামায়াতকে টানলে হেনরি কিসিঞ্জার আসবে, জানান তিনি। গণতান্ত্রিক পথ থেকে সরে আসা যাবে না বলে জানিয়ে ডা. নুজহাত চৌধুরী বলেন, অপরাজনীতি সবসময় রক্তপাত, সন্ত্রাসেই পর্যবসিত হয় এবং জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটায়। বাঙালি নিজের মঙ্গল বুঝলে ভোট ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি তাদের সমর্থন থাকবে বলা আশা প্রকাশ করেন তিনি।

একাত্তর পরবর্তী সময়ে মজুতদাররা যেভাবে দেশকে অস্থির করেছিলো, আজকের মজুতদারেরাও একইভাবে থাবা বিস্তার করছে বলে আশঙ্কা জানান জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর। তিনি বলেন, ‘তারা দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি দিয়ে অপরাজনীতির বিস্তারে ভূমিকা রাখছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কখনোই সন্ত্রাসের পথে হাঁটেননি। বরং জনসংযোগ না থাকলে অপরাজনীতি সন্ত্রাসের পথে, গণতন্ত্রবিরোধী পথে যায়।’

পশ্চিমাদের অর্থে দেশের দরিদ্র ও নারীদেরকে কৌশলে জঙ্গিবাদে যুক্ত করা হচ্ছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস-এর উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. খন্দকার মোকাদ্দেম হোসাইন। পার্বত্য চট্টগ্রামে জঙ্গিদের ঘাঁটি করা নিয়েও উদ্বিগ্ন তিনি। এসব জঙ্গিরা ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা, পাকিস্তান, আফগানিস্তানের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলে জানিয়ে তিনি বলেন,‘ আমাদের শত্রু-মিত্র চিহ্নিত করার সময় হয়েছে।’

আজ যারা মানবাধিকারের কথা তুলছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার সময় মানবাধিকার কোথায় ছিলো, প্রশ্ন তোলেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, ‘সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মকে ব্যবহার করে রাজনীতি, শিক্ষার্থীর হাতে অস্ত্র তুলে দেয়া, পুলিশকে পিটিয়ে হত্যা করাই অপরাজনীতি।’ বিএনপির ‘টেক ব্যাক বাংলাদেশ’ স্লোগানের ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘মানুষ মেরে গাছে ঝুলিয়ে রাখা, দুর্নীতিতে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়া, ২৪ ঘণ্টায় ১২ ঘণ্টাই বিদ্যুৎহীন থাকা, জঙ্গি হামলার বাংলাদেশে ফিরে যেতে চাই কি না।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেখানো পথে ডিজিটাল স্মার্ট বাংলাদেশ অর্জনের সিদ্ধান্ত ভোটের মাধ্যমে নেয়ার পক্ষে মত দেন ড. মিজানুর রহমান।

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে যুক্ত হতে বাংলাদেশে শিক্ষা, গবেষণা আর উন্নয়ন একসাথেই চলমান থাকবে। বিদেশিরা কেন আমাদের দেশে সন্ত্রাসকে উস্কে দিচ্ছে।’ ফিলিস্তিনে বোমাবর্ষণ নিয়ে বিদেশিদের কেন কোনো বক্তব্য নেই, অথচ বাংলাদেশে অপরাজনীতি কেন বিস্তৃত হতে দেয়া হচ্ছে, জানতে চান ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন।

উদ্বোধনী বক্তব্যে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য, অধ্যাপক ড. আব্দুল জব্বার খান বলেন,‘ দেশের সার্বভৌমত্বে মাঝেমধ্যে বিদেশি শক্তির আঘাত আসে। মার্কিন বিশেষ ভিসানীতিকে আমাদের দ্বাদশ নির্বাচনকে প্রভাবিত করার অপচেষ্টা। ইন্ডেমনিটি অধ্যাদেশ দিয়ে দেশে অপরাজনীতির যে গোড়াপত্তন হয়েছিলো, তাকে সবচেয়ে নিকৃষ্ট রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস। বিভিন্ন সময়ে দেশের মাথাপিছু আয়ের দৃষ্টান্ত সামনে এনে তিনি দেখান, অসাংবিধানিক সরকারের অধীনে দেশের উন্নতি হয় না। আসন্ন নির্বাচনের সময় বিষয়টি সবার মনে রাখা জরুরি বলে জানান তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d