নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে চক্রান্তে- প্রধানমন্ত্রী
প্রতিটি পণ্যের উৎপাদন বেড়েছে জানিয়ে দাম বৃদ্ধির যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।ইচ্ছা করে বাজারে পণ্য না এনে চক্রান্ত চলছে বলে তার সন্দেহ। যারা এমন করছে তাদেরকে খুঁজে বের করার নির্দেশও দিয়েছেন তিনি। জেল হত্যা দিবসে গতকাল শুক্রবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের আলোচনায় এসব কথা বলেন সরকার প্রধান।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার তৃতীয় মাসে ৩ নভেম্বর মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনাকারী চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমেদ, এইচ এম কামারুজ্জামান ও মনসুর আলীকে কারাগারে হত্যা করা হয়। এই দিনটিকে আওয়ামী লীগ জেল হত্যা দিবস হিসেবে পালন করে।
সেই হত্যার স্মরণে এই আলোচনায় বঙ্গবন্ধু কন্যার বক্তব্যে প্রাধান্য পায় জাতীয় নির্বাচন, বিএনপির আন্দোলন এবং নিত্যপণ্যের দরে ঊর্ধ্বগতি; যেটি নিয়ে এই মুহূর্তে সাধারণ মানুষের মধ্যে আলোচনা ব্যাপক। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মালপত্র থাকার পরে বাজারে না এনে জনগণের পকেট কাটার চেষ্টা করে। এদেরকেও খুঁজে বের করতে হবে। খবর বিডিনিউজের।
নানাভাবে চক্রান্ত করছে বলে সতর্ক করে তিনি বলেন, মাছ, মাংস, ডিম, তরিতরকারি, সবজি, চাল, প্রত্যেকটার উৎপাদন বেড়েছে। তাহলে কীসের অভাব হবে? চক্রান্ত কীভাবে হচ্ছে? তার ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, রেখে দেবে (পণ্য), কিন্তু বাজারে আনবে না। না এনে দাম বাড়িয়ে সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলবে। এটাই তারা করে যাচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। উৎপাদন এতটুকু কমেনি, সেটা আলু বলেন, চাল বলেন, পেঁয়াজ বলেন, সবই উৎপাদন আমরা বাড়িয়েছি।
অবরোধ আগেও দিয়েছিল : তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং সরকারের পতন দাবিতে বিএনপির টানা অবরোধ নিয়েও কথা বলেন শেখ হাসিনা। গত সপ্তাহে ৭২ ঘণ্টার পর আগামী সপ্তাহের রবি ও সোমবারও এই কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে। বিরোধী দলটির পক্ষ থেকে এই কর্মসূচি আরও দেওয়ার হুঁশিয়ারিও এসেছে।
শেখ হাসিনা ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বিএনপি–জামায়াত জোটের আন্দোলনের কথা স্মরণ করে বলেন, এর আগেও অবরোধ দিয়েছিল। অবরোধ দিয়ে খালেদা জিয়া তার অফিসে বসে থাকত। ৬০–৬৫ জন নিয়ে তারা অবরুদ্ধ হয়েছিল শেষ পর্যন্ত। মানুষ কিন্তু সেই অবরোধ মানে নাই। ২০১৩ সালে এই ঘটনা ঘটিয়েছে, ২০১৪ সালের নির্বাচন বানচাল করার জন্য একই ঘটনা ঘটিয়েছে। ২০১৫–তে ঘটিয়েছে। হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করা, আগুনে পোড়ানো, হাজার হাজার গাছ কেটে রাস্তা কেটে একটা ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছিল। আজকে বিএনপির যে অগ্নিসন্ত্রাস, তাদের যে বীভৎস চেহারা, তারা যে পিটিয়ে পিটিয়ে পুলিশ হত্যা করে… তার কী অপরাধ ছিল?
যারা গাড়িতে আগুন দেয় তাদের ধরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সে সময় বাংলাদেশের জনগণ যখন প্রতিরোধ করেছিল তখনই তারা থেমেছে। এখন আমি বলব, সময় এসে গেছে, এই অগ্নিসন্ত্রাসীরা, যে যেখানে থাকুক, যারাই এভাবে আগুন দেবে, জনগণের উপর অত্যাচার করবে, গাড়ি, বাস–ট্রাকে আগুন দেবে, সঙ্গে সঙ্গে তাদের প্রতিরোধ করতে হবে। কারো ওপর নির্ভর করলে হবে না, জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে।
বিএনপি কাকে নিয়ে নির্বাচন করবে? : শেখ হাসিনা মনে করেন, বিএনপি নেতৃত্বের সমস্যায় ভোটে আসছে না। দুর্নীতির একাধিক মামলায় সাজা হওয়ার কারণে চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ভোটে অংশ নেওয়ার যোগ্যতা না থাকার বিষয়ে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি কাকে নিয়ে নির্বাচন করবে? নির্বাচন করলে তাদের নেতা কে? কাকে প্রধানমন্ত্রী করবে? কাকে দিয়ে মন্ত্রিসভা করবে?
খালেদা জিয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সে তো এতিমের টাকা আত্মসাতের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত। আর এখন তো অসুস্থ। তারেক রহমানের প্রসঙ্গে বলেন, বাংলাদেশে অস্ত্র চোরাকারবারির একটা স্বর্গরাজ্য গড়ে তুলেছিল। যে পুলিশ ধরেছে (১০ ট্রাক অস্ত্র), তাকেই আবার শাস্তি দিয়েছে। সে সাজাপ্রাপ্ত, মানি লন্ডারিংয়ের (অর্থ পাচার) মামলায় সাজাপ্রাপ্ত। মানি লন্ডারিংয়ের তথ্য বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার কাছ থেকে পাওয়া। আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই এসে তারেকের বিরুদ্ধে সাক্ষী দিয়ে যায়। সেই সাক্ষ্যতে তার সাজা হয়েছে। ২০০৭ সালে মুচলেকা দিয়ে রাজনীতি না করার প্রতিশ্রুতিতে তারেক জিয়া চলে যায়। শোনা যায়, সেখানে জুয়া খেলে কোটি কোটি পাউন্ড কামাই করে। জুয়া খেলা নাকি তার সোর্স অব ইনকাম।
বিএনপির প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী নিয়ে অনিশ্চয়তার বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এ কারণে তারা নির্বাচন চায় না। নির্বাচন বন্ধ করে দিয়ে একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি করতে চায়। কোনো কোনো মহল থেকে তারা যথেষ্ট উসকানিও পায়।
আদালতে সাজাপ্রাপ্ত তারেক রহমানকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করায় বিএনপির সমালোচনা করে তিনি বলেন, বিএনপিতে আর কোনো নেতা ছিল না? বিএনপি ভোটে এলেও জিততে পারবে না বলে মনে করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ওরা জানে নির্বাচন করলে কোনোদিন ক্ষমতা আসতে পারবে না। ২০০৮ সালের নির্বাচনে তো মাত্র ২৯টা সিট পেয়েছিল। এখন তাদের অপকর্মের জন্য মানুষ আরো বিমুখ।
আমরা ওয়াদা রাখি : শেখ হাসিনা বলেন, আমরা যে ওয়াদা দেই, সে ওয়াদা রাখি। আমরা দিয়েছিলাম দিন বদলের সনদ। ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। আজকে আমরা উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে দেশে গড়ে তুলব।