শতাধিক পরিবারের জীবিকা পিঁপড়ার ডিমে
ব্যতিক্রম এক পেশা লাল পিঁপড়ার ডিম সংগ্রহ করা। বেঁচে থাকার জন্য কত বিচিত্র কাজই না করতে হয় মানুষকে। আর এ পিঁপড়ার ডিম সংগ্রহের পেশা থেকেই দুবেলা দুমুঠো খাবারের জোগান দিচ্ছে শতাধিক পরিবারের। খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙ্গা উপজেলার দুর্গম পাহাড়ে ঘুরে গোমতী ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড রঙমিয়া পাড়াসহ স্থানীয় শতাধিক মানুষ একযুগেরও বেশি ধরে লাল পিঁপড়ার ডিম সংগ্রহ করে মাছ শিকারিদের কাছে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহী করছেন।
বন জঙ্গলে কিংবা লোকালয়ের বিভিন্ন গাছ থেকে তারা সংগ্রহ করেন এসব পিঁপড়ার ডিম। মাছ শিকারিদের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি উপাদান হচ্ছে লাল পিঁপড়ার ডিম। এসব ডিম সংগ্রহের পর তা বিক্রি করে যা উপার্জন হয়, তা দিয়েই চলে তাদের সংসার।
গত বৃহস্পতিবার উপজেলার আঁকাবাঁকা পাহাড়ি মেঠোপথ ধরে বিভিন্ন স্থানে ঘুরে দেখা যায় লাল পিঁপড়ার ডিম সংগ্রহ ও সংরক্ষণের কর্মযজ্ঞ। লাল পিঁপড়ার ডিম সংগ্রহকারীরা হাতে-হাতে লম্বা বাঁশ ও বাঁশের তৈরি ঝুড়ি নিয়ে প্রতিদিন সকাল হলেই বেরিয়ে পড়ে উপজেলার দূর দূরান্তের বিভিন্ন পাহাড়, বন-জঙ্গলে।
ডিম সংগ্রহকারী মো. জসীম উদ্দিন বলেন, পিঁপড়ার ডিম সংগ্রহ ও সংরক্ষণের কাজটি খুব সতর্কতার সাথে করতে হয়। কৃষিকাজের পাশাপাশি জীবিকা নির্বাহের মাধ্যম হিসেবে একাজ বেছে নিয়েছি। সারাদিনে তিনি এক থেকে দেড় কেজি পর্যন্ত ডিম সংগ্রহ করতে পারেন।
তিনি আরও বলেন, লাল পিঁপড়ার ডিম সংগ্রহ করে পাইকারি দামে প্রতি কেজি ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেন তারা। আর পিঁপড়ার ডিম বিক্রি করে যা টাকা পায় তাতেই চলে তাদের সংসার। সাধারণত মেহগনি, আম, লিচু, কনক ও কড়াইসহ দেশীয় গাছগুলোতে লাল পিঁপড়ার বাসা পাওয়া যায় বলেও জানান তিনি।
লাল পিঁপড়ার ডিম সংগ্রহকারীদের কাছ থেকে পাইকারি দামে এসব ডিম ক্রয় করেন স্থানীয় তিন ব্যবসায়ী। তারা হলেন একই এলাকার মো. জাহাঙ্গীর হোসেন, মো. জাকির মিয়া ও মো. মনির হোসেন। তারা জানান, এক যুগেরও বেশি ধরে লাল পিঁপড়ার ডিম সংগ্রহকারীদের কাছ থেকে ডিম কিনে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করেন।
একসময় এ পেশায় লোকজন কম ছিল বলে তখন প্রচুর ডিম পাওয়া যেত। এ পেশায় লোকজন বাড়লেও নির্বিচারে গাছ কাটার কারণে পিঁপড়ার বাসা কমে গেছে। নির্বিচারে গাছ কাটা বন্ধের দাবি জানিয়েছে বিচিত্র পেশার মানুষগুলো।