অর্থনীতি

দুর্বল ব্যাংক টেনে তুলতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন নীতিমালা

সমস্যা জর্জরিত ও দুর্বল ব্যাংকের সংকট কাটিয়ে তোলার পদক্ষেপের অংশ হিসেবে বিশেষ পরিকল্পনা নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক; সমস্যার ধরন অনুযায়ী ব্যাংকগুলোকে ভাগ করা হবে চারটি ‘শ্রেণিতে’।

পাঁচ সূচকের মাধ্যমে এক থেকে চার পর্যন্ত এসব শ্রেণি বা ক্যাটাগরিতে তালিকাভুক্ত করে সংকটগ্রস্ত ব্যাংকগুলোর মান উন্নয়নের নীতি ঠিক করা হবে।

মঙ্গলবার ‘প্রমোম্পট কারেক্টিভ অ্যাকশন (পিসিএ)’ নামের একটি কাঠামোর আওতায় কোন ব্যাংক কোন ক্যাটাগরিতে যাবে এবং কীভাবে বিশেষ নজরদারি করা হবে তা জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

দেশে কার্যরত সব ধরনের দেশি ও বিদেশি ব্যাংকের শাখার উপর ‘পিসিএ’ বাস্তবায়ন হবে। পাঁচ সূচকে লাগাতার পতন হলে সব ক্যাটেগরির ব্যাংকগুলোকে ‘অনিরাপদ’ ও ‘আর্থিকভাবে অস্বাস্থ্যকর বা দুর্বল’ হিসেবে চিহ্নিত করবে বাংলাদেশ ব্যাংক।

পরপর দুই ক্যাটাগরিতে অবনতি হলে তা সবচেয়ে ‘দুর্বল’ বা ‘খারাপ’ ব্যাংক হিসেবে চিহ্নিত করা হবে।

পিসিএ নিয়ে সার্কুলারে বলা হয়েছে, দুর্বল ব্যাংক হিসেবে শনাক্ত হওয়া ব্যাংকের মান উন্নয়নে পিসিএ এর আওতায় ‘ডিরেক্টিভস অব বাংলাদেশ ব্যাংক-ডিওবিবি বা ডব’ ইস্যু করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। দুর্বলতা কাটিয়ে ব্যাংকের মান উন্নয়নে সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ব্যর্থ হলে একীভূত করার মতো পদক্ষেপও নিতে পারবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এমন পদক্ষেপের কারণ ব্যাখ্যায় সার্কুলারে বলা হয়েছে, আর্থিক স্থিতিশীলতা এবং আর্থিক খাতে জনগণের আস্থা ধরে রাখার অংশ হিসেবে সমস্যা প্রকট হওয়ার আগেই ব্যাংকের দুর্বলতা শনাক্ত করা জরুরি। শুরুতেই সমস্যার সমাধানে উদ্যোগ নিলে ক্ষতি কম হয়। সমস্যা প্রকট হয়ে গেলে তা সমাধানেও বেশি সময় লাগে এবং কষ্টসাধ্য পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যেতে হয়।

সার্কুলারে আরও বলা হয়েছে, একটি ব্যাংক বন্ধ করে দেওয়া খুবই ব্যয়বহুল এবং জটিল ও বেদনাদায়ক প্রক্রিয়া। এমন প্রেক্ষাপটে দুর্বল ব্যাংক বা ব্যাংকগুলোর সমস্যা সমাধানে দ্রুত সংশোধনের পদক্ষেপ জরুরি।

বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, ‘পিসিএ’ এর আওতায় আর্থিক সূচকগুলোর কোনোটিতে অবনতি বা অস্থিতিশীল হলেই তা শনাক্ত করে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা ও পরিচালক পর্ষদকে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সমাধানের উদ্যোগ নিতে বলবে বাংলাদেশ ব্যাংক।

সার্কুলারে বলা হয়েছে, আর্থিক সূচকের বাইরেও ব্যবস্থাপনা, মুনাফার পরিবর্তে বড় ধরনের লোকসান, দায় শোধে ব্যর্থতা, বারবার বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অমান্য ও পরিপালন করতে গড়িমসি, জাল-জালিয়াতির ঘটনা, পরিচালক পর্ষদের অনিরাপদ কর্মকাণ্ড দেখা দেওয়া ব্যাংককে পিসিএ ফ্রেমওয়ার্কের আওতায় আনবে বাংলাদেশ ব্যাংক।

যে পাঁচ সূচক দিয়ে ক্যাটাগরি নির্ধারণ করা হবে সেগুলো উল্লেখ করা হয়েছে সার্কুলারে। সেগুলো হচ্ছে-ব্যাংকের সিআরএআর (ক্যাপিটাল টু রিক্স ওয়েটেড অ্যাসেটস রেশিও), টিয়ার-১ ক্যাপিটাল রেশিও, কমন ইক্যুইটি টিয়ার-১ (সিইটি১) রেশিও, নিট নন পার্ফমিং লোন (এনপিএল) বা নিট খেলাপি ঋণ এবং করপোরেট গর্ভনেন্স বা সুশাসন।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঠিক করা সূচক অনুযায়ী, খেলাপি ঋণ ৫ শতাংশ হলেই সেটি দুর্বল ব্যাংক হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়ে ক্যাটেগরি-১ এ স্থান পাবে।

খেলাপি ঋণ ৫-৮ শতাংশের নিচে থাকলে ক্যাটেগরি-১, ৮ থেকে ১১ এর হলে ক্যাটেগরি-২, ১১ থেকে ১৪ এর নিচে ক্যাটেগরি-৩ এবং ১৪ শতাংশের উপরে হলে ওই ব্যাংককে ক্যাটেগরি-৪ এ রাখা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d