কাউন্সিলর হয়েই ফুলে ফেঁপে সুমন, এমপি হতে দৌড়ঝাঁপ
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনে ২০১৫ সালে ৩৯ নম্বর ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর নির্বাচিত হন জিয়াউল হক সুমন। বর্তমান মেয়াদেও তিনি কাউন্সিলর। গত আট বছরে কাউন্সিলর হয়ে আয় বেড়েছে আটগুণ এতেই ফুলে ফেঁপে উঠে তার সম্পদ।
শুধু ব্যাংকে জমা টাকাই রয়েছে সাড়ে ১৫ কোটি টাকার কাছাকাছি। হলফনামার মূল ফরমে এড়িয়ে গেছেন স্থাবর সম্পদের পরিমাণ। এবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন চট্টগ্রাম-১১ আসনে।
২০১৫ সালের মার্চে নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামায় দেখা যায়, তখন বছরে তার মোট আয় ছিল ২৬ লাখ ৮২ হাজার ৮৩৩ টাকা। এর মধ্যে ব্যবসা থেকে আয় হতো ৭ লাখ ৬২ হাজার ৮৩৩ টাকা এবং অন্য খাত থেকে আয় দেখানো হয়েছিল ১৯ লাখ ২০ হাজার টাকা। ওই সময়ে তার স্ত্রী কিংবা নির্ভরশীলদের নামে কোনো আয় ছিল না।
ওই সময় অস্থাবর সম্পদের মধ্যে জিয়াউল হক সুমনের নগদ টাকা ছিল ৮০ হাজার ৭৫০ টাকা। ওই সময়ে ব্যাংকে তার কোনো জমানো টাকা ছিল না। পোস্টাল সার্টিফিকেট, সঞ্চয়পত্র কিংবা স্থায়ী আমানত মিলে জমার পরিমাণ ছিল ৩০ হাজার টাকা। ২৫ লাখ টাকা মূল্যের তার একটি প্রাইভেটকার ছিল। ৫০ হাজার টাকার ইলেকট্রনিক সামগ্রী ও ৪০ হাজার টাকার আসবাবপত্র ছিল। তার স্ত্রীর ছিল দুই লাখ নগদ টাকা এবং ৬০ হাজার টাকার অলংকার।
ওই সময়ে তার কৃষিজমি না থাকলেও ১ কোটি ২২ লাখ ২১ হাজার ৪৫০ টাকা মূল্যের অকৃষি জমি ছিল পাঁচটি। তার স্ত্রীর নামে কোনো স্থাবর সম্পত্তি ছিল না। তবে সুমনের ৪০ লাখ টাকা ব্যক্তিগত ঋণ ছিল বলে হলফনামায় উল্লেখ করেন।
২০২৩ সালের ৩০ নভেম্বর সংসদ নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামায় দেখা যায়, জিয়াউল সুমনের বর্তমানে বার্ষিক আয় দুই কোটি ৭০ লাখ ৭০ হাজার ৪৬৫ টাকা। এর মধ্যে কৃষিখাতে সবচেয়ে বেশি বছরে দেড় কোটি টাকা আয় তার।
এরপর বাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট, দোকান ভাড়া খাতে আয় ৬৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা, ব্যবসা থেকে আয় আসে ৩০ লাখ ৩৪ হাজার ১৪৪ টাকা, শেয়ার, সঞ্চয়পত্র কিংবা ব্যাংক আমানতে আয় হয় ২০ লাখ ৯৬ হাজার ৩১০ টাকা। কাউন্সিলর হিসেবে সম্মানি পান বছরে দুই লাখ ৮০ হাজার টাকা।
২০১৫ সালে সুমনের স্ত্রীর কোনো আয় না থাকলেও বর্তমানে তার স্ত্রীর বছরে আয় ৭৭ লাখ ৬০ হাজার টাকা। এর মধ্যে কৃষিখাতে আয় ৩৫ লাখ টাকা, ব্যবসা থেকে ৩০ লাখ টাকা, ব্যাংকে ডিপিএস থেকে ৩ লাখ ৬০ হাজার এবং অন্য খাত থেকে আয় হয় আরও ৯ লাখ টাকা।
বর্তমানে জিয়াউল হক সুমনের নগদ টাকা রয়েছে ৮৭ লাখ ৩৫ হাজার ২৬৩ টাকা, ব্যাংকে জমা রয়েছে ১৫ কোটি ৪৮ লাখ ৩৫ হাজার ৭৪৯ টাকা, বন্ড, ঋণপত্র, বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার ১০০ টাকা মূল্যের পাঁচ হাজার। পোস্টাল সার্টিফিকেট, সঞ্চয়পত্র কিংবা স্থায়ী আমানতে বর্তমানে কোনো জমা নেই।
একটি প্রাইভেট গাড়ির কথা উল্লেখ করলেও তার মূল্য উল্লেখ করেননি। আগে না থাকলেও বর্তমানে তার ৬০ হাজার টাকার সোনা রয়েছে। তবে কী পরিমাণ সোনা তা উল্লেখ করেননি। অন্যদিকে আগের ৫০ হাজার টাকার ইলেকট্রনিক সামগ্রী ও ৪০ হাজার টাকার আসবাবপত্র এখনো রয়েছে তার।
নিজের মতো স্ত্রীরও অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে। বর্তমানে তার স্ত্রীর নগদ রয়েছে এক লাখ টাকা, ব্যাংকে জমা ৯৮ লাখ ৪১ হাজার, পোস্টাল, সেভিংস সার্টিফিকেট, সঞ্চয়পত্র কিংবা স্থায়ী আমানত ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকার, ২৫০০ সিসির তিনটি গাড়ি দেখানো হয়েছে হলফনামায়। তবে ৮ বছরের ব্যবধানে তার স্বর্ণালংকার কমেছে। বর্তমানে তার ৪০ হাজার টাকার সোনা রয়েছে।
স্থাবর সম্পদের হিসাবে তিনি নথিযুক্ত দেখিয়ে সম্পদের পরিমাণ কিংবা আর্থিক অঙ্ক এড়িয়ে গেছেন। এর মধ্যে কৃষিজমির হিসেবে ‘প্রযোজ্য নহে’, অকৃষি জমির ঘরে ‘নথি সংযুক্তি’, দালানের ঘরে ‘নথি সংযুক্তি’ এবং বাড়ি/অ্যাপার্টমেন্টের ঘরেও ‘নথি সংযুক্তি’ উল্লেখ করেছেন। তাছাড়া চা-বাগান, রাবার বাগান, মৎস্য খামারের ঘরে ‘নথি সংযুক্তি’ এবং অন্যান্য সম্পদের ঘরে ‘প্রযোজ্য নহে’ উল্লেখ করেছেন।
হলফনামায় তার স্ত্রীর নামে সরাসরি কোনো সম্পদ নেই। তবে যৌথ নামে কৃষিজমি, অকৃষি জমি, বাড়ি/অ্যাপার্টমেন্ট সব ঘরেই ‘নথি সংযুক্তি’ উল্লেখ করেছেন।
তবে ৪৫ লাখ ৭২ হাজার ২৩৯ টাকা তিনি ঋণ দেখিয়েছেন। এর মধ্যে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ৩৫ লাখ ২২ হাজার ২৩৯ টাকা, বনফুল থেকে অগ্রিম নেওয়া ৩ লাখ টাকা এবং ওয়ালটন থেকে অগ্রিম হিসেবে সাড়ে ৭ লাখ টাকা দেখিয়েছেন।