চট্টলবীর মহিউদ্দিন চৌধুরীর মৃত্যুবার্ষিকী আজ
আন্দোলন সংগ্রামে অদম্য কণ্ঠস্বর, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক সিটি মেয়র চট্টলবীর এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ২০১৭ সালের ১৫ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় নগরীর একটি হাসপাতালে তিনি ইন্তেকাল করেন।
মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে নগর আওয়ামী লীগ ও তার পরিবার। কর্মসূচির শুরুতে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় নগরীর চশমা হিল কবরস্থানে মরহুমের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও চশমাহিল জামে মসজিদে খতমে কোরআন, দোয়া ও মিলাদ মাহফিল আয়োজন করা হয়েছে। সকাল ১১টায় কাজীর দেউড়িস্থ ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হবে।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি এতে প্রধান অতিথি থাকবেন। চট্টলবীর এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ১৯৪৪ সালের ১ ডিসেম্বর রাউজান উপজেলার গহিরা গ্রামের বক্স আলী চৌধুরী বাড়ির রেল কর্মকর্তা হোসেন আহমদ চৌধুরী এবং বেদুরা বেগমের ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬২ সালে এসএসসি পাশ করেন। রাজনীতির হাতেখড়ি হয় জহুর আহমদ চৌধুরীর হাত ধরে। স্কুলজীবনেই ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়েন তিনি।
দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে উত্থান-পতন ও নানা ঘটনাপ্রবাহে চট্টলবীর-এ পরিণত হয়েছিলেন এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। সাংসারিক জীবনে দুই পুত্র ও চার কন্যা সন্তানের জনক মহিউদ্দিন চৌধুরী নানা ঘাত-প্রতিঘাত মোকাবিলা করলেও জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত তার মনোবল ও সাহস ছিল অটুট। ১৯৬৮ ও ’৬৯ সালে চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করা মহিউদ্দিন একাত্তরে গঠন করেন ‘জয় বাংলা’ বাহিনী।
বঙ্গবন্ধুর ডাকে স্বাধীনতা সংগ্রামে সাড়া দিয়ে পাকবাহিনীর হাতে অসংখ্যবার গ্রেপ্তার ও নিপীড়িত হন। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে গিয়ে আইএসআই (পাকিস্থানের গোয়েন্দা সংস্থা) কর্তৃক চট্টগ্রাম নেভাল একাডেমি সদর দপ্তরের কাছ থেকে আটক হয়ে চার মাস অমানুষিক নির্যাতন সহ্য করেন। তিনি শহীদ হয়েছেন ভেবে ফাতেহা দিয়েছেন বাবা। এরই মাঝে মানসিক রোগীর অভিনয় করে চট্টগ্রাম কারাগার থেকে পালিয়ে যান ভারতে। সেখানে সশস্ত্র প্রশিক্ষণ শেষে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন সম্মুখ সমরে। যুদ্ধ করেন ভারত-বাংলা যৌথবাহিনীর মাউন্টেন ডিভিশনের অধীনে। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে শ্রমিক রাজনীতিতে যুক্ত হন। যুবলীগের নগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক পদ পান। ধীরে ধীরে হয়ে ওঠেন বঙ্গবন্ধুর প্রিয়ভাজন। নব্বইয়ের গণআন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা রেখে গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল শক্তির অন্যতম সংগঠক বলে বিবেচিত হন সর্বমহলে। চট্টগ্রামে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, বন্দর রক্ষা আন্দোলন ও অসহযোগ আন্দোলনেও তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন।
পাঁচ দশকের রাজনৈতিক জীবনে অনেক অর্জন থাকলেও ১৯৯৪ সালে প্রথমবার চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র প্রার্থী হয়েই মহিউদ্দিন চৌধুরী বিজয়ী হন। ২০০০ সালে দ্বিতীয় দফায় এবং ২০০৫ সালে তৃতীয় দফায় মেয়র নির্বাচিত হন তিনি। তার আমলে নগরীর শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পরিচ্ছন্নতা খাতে সেবা এখনো চট্টলাবাসী ভুলতে পারে না। চট্টলবীর মহিউদ্দিন চৌধুরী মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন।