দেশজুড়ে

সন্তানকে বুকে জড়িয়েই পুড়ে মারা যান পপি

মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও তিন বছরের শিশু সন্তান ইয়াসিনকে বুকে জড়িয়ে পুড়ে মারা গেলেন নাদিরা আক্তার পপি (৩৫)। বাঁচার চেষ্টা করেও বাঁচতে পারেন নি মা ও ছেলে।

মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) ভোরে রাজধানীর তেজগাঁও রেলওয়ে স্টেশনে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনে দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে পুড়ে মারা যান নারী-শিশুসহ চারজন।

ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে নিহত পপির ভাই হাবিবুর রহমান বলেন, নেত্রকোণা জেলা সদরের বাড়ি থেকে ঢাকায় ফিরছিলাম একই পরিবারের সদস্য ও স্বজনসহ ৯ জন।

সোমবার রাতে আমরা মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসে উঠে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা করি। এর মধ্যে বিমান+বন্দর স্টেশনে নেমে যান পরিবারের ৯ সদস্যের পাঁচজন। এরপর ট্রেন বিমানবন্দর থেকে কমলাপুরের উদ্দেশে রওনা শুরু করে। আমরা ‘জ’ বগিতে ছিলাম। হঠাৎ ধোঁয়ায় ভরে যায় কামরা। ‘আগুন আগুন’ বলে চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু হয় চারদিকে। তেজগাঁও স্টেশনে ট্রেন থামতে থামতে সবাই হুড়োহুড়ি করে নেমে যান। এর মধ্যে আমার বড় ভাগিনা মাহিমকে নিয়ে আমিও নেমে যাই। কিন্তু আমার বড় বোন নাদিরা আক্তার পপি ও তিন বছরের ছোট ভাগিনা ইয়াসিন বের হতে পারেনি।

তিনি আরও জানান, আগুন নেভানোর পর চারজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তার মধ্যে আমার বোন ও ভাগনে ছিল। যখন আমার বোনের মরদেহ উদ্ধার করা হয় তখনও তার বুকে জড়ানো ছিল আমার ভাগনে। দুজন একসঙ্গে পুড়ে মারা গেছে। এসব কথা বলছিলেন আর কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন হাবিবুর রহমান।

নিহত শিশুর বাবা মিজানুর রহমান জানান, আমি পেশায় হার্ডওয়্যার ব্যবসায়ী। নেত্রকোণা গ্রামের বাড়িতে ঘুরতে গিয়েছিল আমাদের পরিবারের নয়জন সদস্য। ব্যবসার কাজের জন্য আমার যাওয়া হয়নি তাদের সঙ্গে। পরিবারের পাঁচজন সদস্য এয়ারপোর্ট স্টেশনে নেমে যায়। তখন ট্রেনে ছিল আমার শ্যালক হাবিবুর রহমান, আমার স্ত্রী নাদিরা আক্তার পপি, আমার বড় ছেলে মাহিম এবং আমার তিন বছরের আদরের ছেলে ইয়াসিন। আমার শ্যালক হাবিব আমাকে ফোন দিয়ে জানায় তেজগাঁও রেল স্টেশনে ট্রেনটি পৌঁছার একটু দূরেই নাকি ট্রেনের তিনটি বগিতে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। পরে তেজগাঁও রেল স্টেশনে ট্রেনটি থেমে গেলেও আগুন জ্বলতে থাকে। ট্রেন থেকে আমার শ্যালক ও আমার বড় ছেলে নামতে পারলেও ধোঁয়ার কারণে ওই জ্বলন্ত ট্রেনে আটকা পড়ে আমার স্ত্রী ও ছোট ছেলে মারা যায়। সে কি বীভৎস অবস্থা! আমি খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে দেখি আমার শিশু সন্তানকে কোলে জড়িয়ে ধরে আছে স্ত্রী। তাদের সমস্ত শরীর পুড়ে অঙ্গার হয়ে গেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d