ঘোষণা ছাড়াই ডায়ালাইসিস সেবা বন্ধ, বিপাকে রোগী ও স্বজনরা
দিনাজপুর এম. আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই ডায়ালাইসিস সেবা বন্ধ হয়ে গেছে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে হাসপাতালের পরিচালকের কক্ষের সামনে প্রতিবাদ জানিয়েছেন রোগী ও তাদের স্বজনেরা। অর্ধশতাধিক রোগী হাসপাতালের পরিচালকের কক্ষের সামনে বসে জীবন বাঁচানোর জন্য ডায়ালাইসিস সেবা চালুর দাবি জানান তারা।
পূর্ব ঘোষণা ছাড়া হাসপাতালে ডায়ালাইসিস সেবা বন্ধ করে দেয়ায় বিপাকে পড়েছেন সেবা প্রত্যাশীরা। তারা জানান, প্রায় ৪ মাস ধরেই হাসপাতালে ডায়ালাইসিস সেবায় বিঘ্ন ঘটছে। এখানে আগে মাত্র ৪০০ টাকা দিয়েই ডায়ালাইসিসের সুবিধা পেতো রোগীরা। কিন্তু এখানে ডায়ডলাইজার, ব্লাড লাইন, স্যালাইনসহ যাবতীয় ওষুধপত্র সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। সর্বশেষ রেনাল কেয়ার-এসি ও রেনাল কেয়ার-বি ফ্লুইড (পানি) রোগীদের সরবরাহ করা হতো। চলতি মাসের ২ তারিখ থেকে সেটি সরবরাহেরও বিঘ্ন ঘটতে থাকে। এতদিন বাইরে থেকে রোগীর স্বজনরা এসব কিছু কিনে এনে ডায়ালাইসিস করাতেন। এতে তাদেরকে একজনের প্রতিবার ডায়ালাইসিস করাতে প্রায় ২৯০০ টাকা খরচ হতো।
দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার রাঙ্গামাটি এলাকা থেকে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রুবিয়া বেগম বলেন, পানি পাচ্ছি না, ডাইলাইজার পাচ্ছি না। কিছুই পাচ্ছি না। না পেলে আমাদের অসুবিধা হচ্ছে, বাঁচবো না তাহলে। এখন সবকিছুই বন্ধ করে দিয়েছে। কিভাবে ডায়ালাইসিস দিবো, সংসারের সবকিছুই তো শেষ হয়ে যাচ্ছে ডায়ালাইসিস করতে করতে। তাহলে কেমন করে চলবো বলে প্রশ্ন রাখেন তিনি।
হাসপাতালে কথা হলে দিনাজপুরের বীরগঞ্জ থেকে আসা রোগী হরে কৃষ্ণ রায় বলেন, আমি ১২ বছর ধরে ডায়ালাইসিস করি। কিন্তু এখন এখানে ডায়ালাইসিস বন্ধ হয়ে গেছে। আমি একেবারে নি:স্ব হয়ে গেছি। আমার স্ত্রী ক্যান্সারের রোগী। কয়েকদিনের মধ্যে তাকে একটা ইনজেকশন দিতে হবে ঢাকায়। দাম ৪ লাখ টাকা। আমার চিন্তাও সেও শয্যাশায়ী হয়ে পড়েছে। এখন আমার ডায়ালাইসিস হচ্ছে না। কি করবো বুঝতে পারছি না। আমাদের দিকে কেউই তাকায় না।
সেবা না পেয়ে ডায়ালাইসিসের রোগীরা হাসপাতালের পরিচালকের কক্ষের সামনে বসে পড়েন। প্রায় এক ঘণ্টা পর রোগীদের সঙ্গে কথা বলেন পরিচালক ডা. এটিএম নুরুজ্জামান। তাদেরকে প্রয়োজনীয় পানি সরবরাহ করার আশ্বাস দেয়া হলে তারা পুনরায় ডায়ালাইসিস ওয়ার্ডে ফিরে যান।
মোবাইল ফোনে কথা হলে হাসপাতালের পরিচালক জানান, রোগীরা এসে আমার কাছে কথা বলেছেন। আমাদের ফ্লুইড শেষের দিকে। বাজারেও পাওয়া যাচ্ছে না, আমরাও কিনতে পারছি না। আমরা কষ্ট করে কিছু ম্যানেজ করেছি। বাজারে পর্যাপ্ত নাই। অনেক কষ্টে ম্যানেজ করা হয়েছে। এগুলো দিয়ে চার থেকে পাঁচ দিন যাবে। আরও সংগ্রহ করার চেষ্টা চলছে বলেও জানান তিনি।