আন্তর্জাতিক

ইয়েমেনে হামলার পর ইরানকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ব্যক্তিগত বার্তা’

লোহিত সাগরে ইসরায়েল সংশ্লিষ্ট সব জাহাজকে লক্ষ্যবস্তু করছে ইয়েমেনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হুথি। এর জেরে ইরান-সমর্থিত এই গোষ্ঠীর অবস্থানে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। আর এরপরই ইরানকে ‘ব্যক্তিগত বার্তা’ পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নিজেই এই তথ্য সামনে এনেছেন। শনিবার (১৩ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, ইয়েমেনের হুথিদের ওপর দ্বিতীয় দফায় হামলা চালানোর পরে এই গোষ্ঠীটি সম্পর্কে ইরানকে একটি ‘ব্যক্তিগত বার্তা’ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে এই বিষয়ে বিশদ আরও কোনও বিবরণ তিনি দেননি।

বাইডেন বলেছেন, ‘আমরা এটি (ইরানকে) ব্যক্তিগতভাবে পাঠিয়েছি এবং আমরা নিশ্চিত, আমরা ভালোভাবে প্রস্তুত।’

ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস এবং ইসরায়েলের যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ওই অঞ্চলে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার ক্রমবর্ধমান ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। ওই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বিরোধী ইরানের মিত্ররাও লেবানন, সিরিয়া এবং ইরাক থেকে মার্কিন স্বার্থকে লক্ষ্যবস্তু বানানোয় এতে নতুন করে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।

এর মাঝেই হুথিদের সাথে পশ্চিমা দুই পরাশক্তির হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনায় ব্যাপক উদ্বেগ বৃদ্ধি পেয়েছে।

হুথি বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রিত স্থাপনায় আমেরিকান এবং ব্রিটিশ বিমান থেকে কয়েক ডজন হামলার একদিন পরই শনিবার ভোরের দিকে ইয়েমেনে আবারও নতুন করে হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। ওয়াশিংটন বলেছে, তারা ইয়েমেনে হুথি নিয়ন্ত্রিত রাডার স্থাপনায় আঘাত করেছে।

অবশ্য ইরান লোহিত সাগরে হুথিদের হামলায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছে। তবে তেহরান হুথিদের অস্ত্র সরবরাহ করছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে এবং যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, লোহিত সাগরে বিভিন্ন জাহাজে হামলায় সক্ষম করার জন্য ইরানী গোয়েন্দারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

বিবিসি বলছে, অস্ট্রেলিয়া এবং কানাডাসহ পশ্চিমা মিত্র দেশগুলোর সমর্থনে গত শুক্রবার ভোররাতে প্রায় ৩০টি হুথি অবস্থানকে লক্ষ্য করে যুক্তরাজ্য-যুক্তরাষ্ট্র যৌথভাবে বিমান হামলা চালায়। এর একদিন পরে টমাহক ল্যান্ড অ্যাটাক ক্রুজ মিসাইল ব্যবহার করে ইয়েমেনের হুথি রাডার সাইটে আবারও হামলার কথা জানায় ইউএস সেন্ট্রাল কমান্ড।

তবে হুথির একজন মুখপাত্র বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, লোহিত সাগরে জাহাজ চলাচলকে প্রভাবিত করার যে সক্ষমতা তাদের রয়েছে, সেটির ওপর হামলার কোনও উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়েনি।

হুথিরা মূলত ইয়েমেনের শিয়া মুসলিম সংখ্যালঘু জাইদি নামের উপ-সম্প্রদায়ের সশস্ত্র গোষ্ঠী। বেশিরভাগ ইয়েমেনি হুথিদের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় বসবাস করে। পাশাপাশি সানা এবং ইয়েমেনের উত্তরে হুথিরা লোহিত সাগরের উপকূলরেখাও নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।

মূলত ইসরায়েলি আগ্রাসন শুরুর পর থেকে গত প্রায় তিন মাস ধরে লোহিত সাগরে ইসরায়েল সংশ্লিষ্ট ও ইসরায়েলগামী জাহাজে অব্যাহতভাবে হামলা চালিয়ে আসছে হুথি বিদ্রোহীরা। ইরান সমর্থিত সশস্ত্র এই গোষ্ঠী জানিয়েছে, যতদিন গাজায় ইসরায়েলের বর্বরতা চলবে ততদিন তারা হামলা চালিয়ে যাবে।

এদিকে বাণিজ্যিক জাহাজ লক্ষ্য করে হুথিদের এসব হামলার কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে এর অনেক প্রভাব পড়েছে। লোহিত সাগর থেকে মিসরের সুয়েজ খাল হয়ে যেসব জাহাজ ইউরোপে যেত; সেসব জাহাজকে এখন আফ্রিকা ঘুরে যেতে হচ্ছে।

এতে করে আগের তুলনায় জাহাজকে আরও ১০দিন বেশি চলতে হচ্ছে। এমনকি এশিয়া থেকে ইউরোপ যেতে ৯ লাখ ১০ হাজার ডলারের অতিরিক্ত জ্বালানিও লাগছে। আর এ কারণে জিনিসপত্রের দামও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d