ধর্ম

মা-বাবার বন্ধুদের সঙ্গে ভালো আচরণ করবেন যে কারণে

পৃথিবীতে মানুষ আগমনের বাহ্যিক মাধ্যম হচ্ছে মা-বাবা। জন্মের আগ থেকেই তারা সন্তানের প্রতি অনুগ্রহকারী। জন্মের পূর্বে মা গর্ভে ধারণের কষ্ট সহ্য করেন। জন্মের সময় প্রসব বেদনা মেনে নেন। এত কষ্টের ধকল সয়ে দুনিয়ায় নিয়ে আসার পর দেড় থেকে দুবছর নিজের শরীরের এক অংশ পান করান। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আমি মানুষকে তার পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহারের আদেশ দিয়েছি। তার জননী তাকে কষ্টসহকারে গর্ভে ধারণ করেছে এবং কষ্টসহকারে প্রসব করেছে। তাকে গর্ভে ধারণ করতে ও তার স্তন্য ছাড়তে লেগেছে ত্রিশ মাস। (এই পুরো সময় সব ধরনের কষ্ট সহ্য করেছেন)।’ (সুরা আহকাফ, আয়াত, ১৫)।

মা-বাবার এ অনুগ্রহগুলো এমন যা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও দ্বারা সম্ভব নয়। তাই তাদের এ অনুগ্রহের কথা আল্লাহ নিজের ইবাদতের পরই বলেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আপনার প্রভু নির্দেশ দিয়েছেন যে, তোমরা আল্লাহ ছাড়া আর কারও ইবাদত করবে না। মা-বাবার সঙ্গে সদাচরণ করবে। তোমার জীবদ্দশায় যদি তাদের যেকোনো একজন বা উভয়জন বার্ধক্যে উপনীত হন তখন (তাদের কোনো কথায় বা আচরণে বিরক্ত হয়ে) উফ্ বলো না। তাদের ধমক দিও না। (তথা তারা কষ্ট পাওয়ার মতো কোনো কথা বা কাজ যেন তোমার দ্বারা প্রকাশ না পায়) বরং তাদের সঙ্গে কথা বলার সময় সম্মানসূচক শব্দ ব্যবহার করো। তাদের সামনে দয়াবনত হয়ে বিনয়ের বাহু বিছিয়ে দাও। আর তাদের জন্য এ বলে দোয়া করো। হে প্রভু! আপনি তাদের প্রতি দয়া করুন যেমন তারা আমাকে দয়া দিয়ে লালন-পালন করেছেন। (সুরা বনি ইসরাইল : ২৪)

একজন আদর্শ সন্তানের উচিত সবসময় মা-বাবার সেবার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন করা। মা-বাবা মারা গেলে তাদের বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে সদাচারের মাধ্যমে আল্লাহর প্রিয় হওয়ার চেষ্টা করা উচিত। এ বিষয়টিতে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে একাধিক হাদিসে।

হজরত আবু উসাঈদ রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে বসেছিলাম। এ সময় বনু সালাম গোত্রের এক ব্যক্তি এলো। সে বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আমার মা বাবার মৃত্যুর পর কি তাদের সেবা করার কোনো সুযোগ আছে আর?

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যা। মা-বাবার জন্য দোয়া করা, তাদের মাগফিরাত (গুনাহ মাফ) কামনা করা, তাদের কৃত ওয়াদা পালন করা, যে রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয়ের সঙ্গে তারা সুসম্পর্ক রক্ষা করতেন, তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রক্ষা করা এবং তাদের বন্ধু-বান্ধবের প্রতি ভক্তি শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করা। (আবু দাউদ, ইবনে মাজা, ইবনে হাব্বান, আত-তারগীব ওয়াত তারহীব, ১২৬৭)

হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে দীনার রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, মক্কার পথে হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমরের সঙ্গে এক ব্যক্তির দেখা হলো। আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর তাকে সালাম করলেন, তাকে তার গাধায় চড়ালেন এবং নিজের মাথার পাগড়ি খূলে তাকে পরালেন। আমি তাকে বললাম, ওরাতো বেদুঈন, ওরা অল্পে তুষ্ট হয়। তিনি বললেন, এই ব্যক্তির বাবা আমার আব্বা ওমর ইবনুল খাত্তাবের প্রিয় বন্ধু ছিলেন। আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, বাবার প্রিয়জনদেরকে সম্মান ও সদ্ব্যবহার করাই সবচেয়ে উত্তম ও সদ্ব্যবহার। (মুসলিম, আত-তারগীব ওয়াত তারহীব, ১২৬৮)

হজরত আবু বুরদা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আমি মদিনায় গেলে হজরত ওমরের ছেলে আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আমার কাছে এলো এবং বললো, আমি আপনার কাছে কেন এসেছি তা কি জানেন? আমি বললাম, না জানি না। সে বললো, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি তার বাবার কবরে চলে যাওয়ার পরও তার সেবা করতে চায়, সে যেন বাবার মৃত্যুর পর তার ভাই ও প্রিয়জনদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করে। (আত-তারগীব ওয়াত তারহীব, ১২৬৯)

হজরত ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বললেন, আমি একটি মারাত্মক গুনাহের কাজ করে ফেলেছি। আমার কি তওবা করার কোনো অবকাশ আছে? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার কি কোনো খালা আছে? সে বললো, হ্যা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাহলে তার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করো। ( তিরমিজি, ইবনে হিব্বান, হাকেম, আত-তারগীব ওয়াত তারহীব, হাদিস, ১২৬৬)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d