অংকুর বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ
নগরীর নাসিরাবাদ এলাকায় অবস্থিত অংকুর সোসাইটি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সজল কুমার দত্তের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলেছেন প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরত শিক্ষকেরা।
সম্প্রতি বিদ্যালয়ের সভাপতি সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বরাবর শিক্ষকদের পাঠানো এক চিঠিতে সুনির্দিষ্ট ২৩টি অভিযোগ তুলে ধরা হয়। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, দীর্ঘ তিন বছর যাবত বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা প্রধান শিক্ষকের বিভিন্ন অনিয়ম এবং দুর্ব্যবহারের শিকার হচ্ছেন।
মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) সকাল থেকে ক্লাস বর্জন করে বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা প্রধান শিক্ষককে তার নিজ কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে রাখেন।
প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি বরাবর প্রেরিত অভিযোগপত্রে শিক্ষকরা উল্লেখ করেন, সরকারি কারিকুলামের বাহিরে গিয়ে একক সিদ্ধান্তে প্লে—৫ম শ্রেণি পর্যন্ত বুক লিস্ট প্রণয়ন করেছেন প্রধান শিক্ষক।
এছাড়া প্রাথমিক শাখায় অতিরিক্ত বিষয় অন্তর্ভুক্ত করে শিক্ষক সংকট তৈরি করে ৬ জন (প্রথমে ৪ জন, পরে ২ জন) অতিরিক্ত অস্থায়ী শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়। সেই নিয়োগে কোনো পেপারে বিজ্ঞপ্তি ছিল না। শোনা যায় এখানেও টাকা পয়সার লেনদেন হয়েছে। মাউশি প্রদত্ত রুটিন অনুসরণ না করে মনগড়া রুটিন প্রণয়ন করে এককভাবে লাইব্রেরি ক্লাস রুটিনে অন্তভূক্ত করা হয়েছে। অথচ স্কুলে রুটিন প্রণয়ন কমিটি আছে।
লিখিত অভিযোগে আরও বলা হয়, দরজা বন্ধ করে অভিভাবকদের সঙ্গে ঘণ্টার পর ঘণ্টার আলাপচারিতায় মত্ত থাকেন প্রধান শিক্ষক। কিন্তু শিক্ষকরা বিদ্যালয়ে প্রয়োজনে ওনার সঙ্গে দেখা করতে পারেন না। টোকেনের মাধ্যমে কোনো কোনো শিক্ষকের সঙ্গে দেখা করেন আবার কোনো কোনো শিক্ষক টোকেন নিয়েও দেখা করতে পারেন না।
২০২৪ সালে বিভিন্ন শ্রেণিতে চাহিদার বাইরে গিয়ে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি করিয়ে ভর্তি বাণিজ্য করা হয়েছে এবং প্রধান শিক্ষক নিজেই শিক্ষার্থীর হাজিরা খাতায় নাম তুলে দেন। কিন্তু শিক্ষকদের ভর্তি কোটা দেওয়া হয়নি। মিটিংয়ের নামে শিক্ষকের সঙ্গে অশালীন ভাষা ব্যবহার করা হয় ও ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করা হয় বলেও শিক্ষকেরা লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেছেন।
এতে আরও উল্লেখ করা হয়, নারী শিক্ষকদের সঙ্গে ছুটি নিয়ে বাজে ব্যবহার করেন প্রধান শিক্ষক। জরুরি ভিত্তিতে ছুটির প্রয়োজন হলে প্রধান শিক্ষক বা সহকারী প্রধান শিক্ষক কাউকেই ফোনে পাওয়া যায় না। প্রধান শিক্ষকের ইচ্ছা অনুযায়ী শিক্ষকদের বেতন কর্তন করা হয়।
টেন্ডার ব্যতীত, কমিটি ব্যতীত আর্থিক সব প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে কিন্তু শিক্ষকদের আর্থিক যেকোনো সমস্যা বললেই কমিটি নেই বলে দোহাই দেয়। অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগকৃত শিক্ষকদের এবং অফিস কর্মকর্তাদেরকে উপরের শ্রেণিতে শ্রেণি শিক্ষক করা হয়েছে, যেখানে সিনিয়র শিক্ষকদের বছরের পর বছর নিচের দিকের শ্রেণিগুলোতে শ্রেণি শিক্ষক হিসেবে ফেলে রাখা হয়েছে।
শিক্ষকরা অভিযোগ করেন, কল্যাণ তহবিলের নামে একটি ফান্ড গঠন করা হয়েছে, যার টাকা কোন খাত থেকে আসে এবং কোন খাতে ব্যয় করা হয় তার কোনো পরিষ্কার জবাব নেই।
এছাড়া এসএসসি পরীক্ষা, সরকারী নিয়োগ পরীক্ষা, কোচিং ইত্যাদি ক্ষেত্রে শিক্ষকদের সম্মানি প্রদানে স্বচ্ছতার অভাবসহ প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ২৩টি অভিযোগ তুলে ধরা হয়।
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও শিক্ষক প্রতিনিধি শাহীন আখতার বলেন, আমরা গতকাল প্রধান শিক্ষককে তার কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করেছিলাম। পরে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি বরাবর প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ২৩টি অভিযোগ তুলে ধরি। ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি দেশের বাইরে আছেন। তিনি দেশে ফিরে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানিয়েছেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সজল কুমার দত্তের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি।