চট্টগ্রাম

অগ্নিঝুঁকিতে চট্টগ্রামের অর্ধশত মার্কেট, পানির উৎস নেই আশপাশে

চট্টগ্রামের রিয়াজউদ্দিন বাজারে চলতি মাসের ৮ ফেব্রুয়ারি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের ৬টি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এতে বড় ধরনের ক্ষতি থেকে রক্ষা পায় রিয়াজউদ্দিন বাজার। তবে পানির অভাবে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে বেগ পেতে হয়েছে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যদের।

এর আগে ২ ফেব্রুয়ারি জহুর হকার্স মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ২০২৩ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লায় সমবায় মার্কেটে আগুন লেগে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। ওই বছরের ১২ জানুয়ারি রিয়াজউদ্দিন বাজারের নুপুর মার্কেটে, ২০২১ সালের ২১ সেপ্টেম্বর বাজারের হোটেল সফিনায়, ২০২০ সালে ৩০ আগস্ট চৌধুরী প্লাজায় এবং ২০১৯ সালে ১৯ অক্টোবর জহুর হকার্স মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।

এসব ঘটনার পর ফায়ার সার্ভিস থেকে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র রাখতে ও ওয়াটার স্টেশন করার নির্দেশনা থাকলেও আমলে নেয়নি মার্কেটগুলো। বারবার অগ্নিকাণ্ডের শিকার বৃহত্তর রিয়াজউদ্দিন বাজারের নাম রয়েছে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনার তালিকায়।

এরপরও যেন হুঁশ নেই কারও। নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করেই একটির সঙ্গে আরেকটি ঘেঁষে নির্মাণ হয়েছে ভবন। সেই আগের মতোই এখনো অপ্রশস্ত সড়ক; নেই অগ্নি নির্বাপণের কোনো ব্যবস্থা।

নগরীর রিয়াজউদ্দিন বাজারে মার্কেট রয়েছে অন্তত ২০০টি দোকান। যেখানে দোকান রয়েছে ১০ হাজারেরও বেশি। এর মধ্যে সিংহভাগ মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি যাওয়ার সুযোগ নেই। নেই পানির উৎস। অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রও নেই অধিকার দোকানে। রিয়াজউদ্দিন বাজারের ভেতরে আগুন লাগলে নিয়ন্ত্রণে আনা কঠিন হবে। সেখানে ওয়াটার স্টেশন নেই। ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি যাওয়ার মতো রাস্তাও নেই।

ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ বলছে, রিয়াজউদ্দিন বাজার, জহুর হকার ও খাতুনগঞ্জসহ অন্তত ৪২টি মার্কেট এবং শহরের ১২টি বস্তি আগুনের মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে। ভবনের কাজ শুরুর আগে ফায়ার সার্ভিসের কাছ থেকে অনাপত্তিপত্র নেওয়ার যে বিধান আছে, ৯৩ শতাংশ ভবনের সেই অনাপত্তি পত্র নেই। ভবন নির্মাণ শেষ হওয়ার পর ফায়ার সার্ভিসের কাছ থেকে অগ্নিনিরাপত্তা বিষয়ক ছাড়পত্র নেওয়ার বিধান আছে। ৯৭ শতাংশ ভবনের সেই ছাড়পত্রও নেই। ৯৭ শতাংশ ভবনে অগ্নিনিরাপত্তা নিশ্চিতের কোনো ব্যবস্থাই নেই।

নগরীর পৌর জহুর হকার্স মার্কেটও রয়েছে অগ্নি ঝুঁকির তালিকায়। জহুর হকার্সের লালদিঘী প্রান্তে রয়েছে ফায়ার অ্যাসেম্বেলি জোন। এই জোন রাখা হয়েছে যাতে মার্কেটে আগুন লাগলে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি প্রবেশ করে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করতে পারে। কিন্তু ওই ফায়ার অ্যাসেম্বলি জোনকে বানানো হয়েছে গাড়ি পার্কিং জোন।

রিয়াজউদ্দিন বাজার বণিক কল্যাণ সমিতির সভাপতি ছালামত আলী চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের মার্কেটে আগুন লাগলে তিনপুলের মাথার মসজিদের পুকুর থেকে পানি নেওয়া যায়। এছাড়া প্রত্যেক দোকানে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র আছে। এরপরও পানির নিশ্চয়তার জন্য স্টেশন রোডের ওদিকে একটা পানির ট্যাংক করার কথা। সেটি হয়ে গেলে আর পানির সমস্যা থাকবে না।’

পৌর জহুর হকার্স মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম বলেন, ‘আমাদের দোকানে ফায়ার এক্সটিংগুইশার রয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের নির্দেশনা মেনে সব করা হয়েছে।’

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স চট্টগ্রামের উপসহকারী পরিচালক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘রিয়াজউদ্দিন বাজারের মার্কেটগুলোতে অগ্নিনির্বাপক রাখতে আমাদের নির্দেশনা রয়েছে। ওয়াটার স্টেশন করার নির্দেশনা থাকলেও তারা সেটি করছে না। কোনোভাবে মার্কেটের ভেতরে আগুন লাগলে ম্যাসাকার হয়ে যাবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d