মহানবী সা.-এর ভাষাগত দক্ষতা যেমন ছিল
মাতৃভাষা আল্লাহর সেরা দান। আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে মানুষকে মনের ভাব ব্যক্ত করতে মাতৃভাষা দান করেছেন। ভাষা অন্যান্য প্রাণীর ওপর মানুষের শ্রেষ্ঠত্বের অন্যতম দিক। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘দয়াময় আল্লাহ, তিনিই শিক্ষা দিয়েছেন কোরআন, তিনিই সৃষ্টি করেছেন মানুষ, তিনিই তাকে শিখিয়েছেন ভাব প্রকাশ করতে। (সুরা আর-রহমান, আয়াত : ১-৪)
আল্লাহ তাআলা সব নবীকে তাঁর স্বজাতির ভাষা দিয়ে প্রেরণ করেছেন। তাঁরা নিজ নিজ জাতিকে মাতৃভাষায় আল্লাহর পথে আহ্বান করেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘আর আমি প্রত্যেক রাসুলকে স্বজাতির ভাষাতেই পাঠিয়েছি, যাতে সে তাদের কাছে বর্ণনা দেয়।’ (সুরা ইবরাহিম, আয়াত : ০৪)
আবু জর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ প্রত্যেক নবীকে তাঁর স্বজাতির ভাষায় প্রেরণ করেছেন।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ২১৪১০)
নবীজি (সা.)-এর ভাষাগত দক্ষতা- শায়খ আবদুল হক মুহাদ্দিস দেহলভি (রহ.) মহানবী (সা.)-এর ভাষাগত দক্ষতা সম্পর্কে লেখেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর মুবারক ভাষার বিশুদ্ধতা, একই বাক্যে বহু বাক্যের সমাবেশ, অভূতপূর্ব বাচনভঙ্গি, অমূল্য নির্দেশ ও সমাধান এত বেশি থাকত যা কোনো গবেষক ও চিন্তাবিদ কোনো সীমা ও গণনার মধ্যে আবদ্ধ করতে পারবে না। তাঁর ভাষার মাধুর্য, গভীরত্ব ও সৌন্দর্য ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। কেননা আল্লাহ রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর চেয়ে অধিক শুদ্ধ ও সুমধুর ভাষার অধিকারী কাউকে সৃষ্টিই করেননি।
একবার ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) মহানবী (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করেন যে হে আল্লাহর রাসুল, না আপনি বাইরে ভিনদেশে কোথাও গেছেন, না আপনি বিভিন্ন লোকজনের সঙ্গে ওঠা-বসা করেছেন, তবু আপনি এত সুন্দর শুদ্ধভাষা কোথা থেকে পেলেন? রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ইসমাইল (আ.)-এর ভাষা ও পরিভাষা যা দুষ্প্রাপ্য ও বিলীন হয়ে গিয়েছিল তা আমার কাছে জিবরাইল (আ.) নিয়ে আসেন এবং তা আমি আত্মস্থ করেছি। উপরন্তু তিনি বলেন, আমার প্রভু আমাকে (আদব) ভাষা শিক্ষা দিয়েছেন, ফলে আমার ভাষাকে অতি উত্তম করে দিয়েছেন। যে শিক্ষা আরবি ভাষা, তার শুদ্ধতা, অলংকার, সৌন্দর্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত তাকে আরবরা আদব বলে। (মাদারিজুন নুবুওয়াহ)