নির্বাচন নিয়ে মানুষের অনাস্থা দূর হয়নি: রাশেদ খান মেনন
নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত সংসদ সদস্য, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেছেন, দেশি-বিদেশি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন হলেও নির্বাচন নিয়ে মানুষের অনাস্থা দূর হয়নি।
মঙ্গলবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণ নিয়ে ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে মেনন এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, নানা জটিল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত নির্বাচনটি ছিল দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র ও অসাংবিধানিক ধারার বিরুদ্ধে এবং বিশেষভাবে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে একটি রাজনৈতিক বিজয়।
তিনি বলেন, ‘কালোটাকার প্রভাব, বিশেষ সংস্থার নিয়ন্ত্রণ, কোনও কোনও ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের অসহায়ত্ব, শহরাঞ্চলগুলোতে ভোটারদের নগণ্য উপস্থিতি নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতাকে ক্ষুণ্ন করেছে। কিন্তু তা কোনোক্রমেই নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে না।’
আওয়ামী লীগের দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থীর ব্যবস্থাটা রাজনীতিতে কী প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হবে, সেটা দেখার বিষয় বলে উল্লেখ করেন মেনন বলেন, ‘রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থার কথা বলছেন। এ ব্যবস্থায় ধনীরা থাকবেন, মধ্যবিত্ত, সাধারণ মানুষ নয়। সেই লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যানের জন্য জামানত এক লাখ টাকা এবং ভাইস চেয়ারম্যানের জন্য ৭৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে। কার্যকর স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা করতে চাইলে এই সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হবে।’ না হলে উপজেলা নির্বাচনে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ হবে না বলে মনে করেন তিনি।
দেশি-বিদেশি চক্রান্তের কথা উল্লেখ করে সংসদ সদস্য মেনন বলেন, ‘নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনের নামে ভিসানীতি, শ্রমিক অধিকার নীতি প্রয়োগের হুমকি দিয়ে আসছিল। এই পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে তখনই বলেছিলাম— অবাধ নির্বাচন নয়, সরকার পরিবর্তনই তাদের লক্ষ্য। এদেশে তাদের স্বাভাবিক সহযোগী ছিল বিএনপি-জামায়াত। তারা দেশের অভ্যন্তরে সরকার পতনের আন্দোলনের নামে সব ধরনের অরাজকতা সৃষ্টি করার প্রয়াস নিয়েছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ় রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ও জনগণের প্রতিরোধে তাদের সব ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়েছিল।’
তিনি বলেন, ‘সরকারের সামনে প্রধান চ্যালেঞ্জ দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ। বাজার সিন্ডিকেট না ভাঙার কোনও কারণ নেই। কারণ, কারা বাজার নিয়ন্ত্রণ করে সরকারের তা জানা। অন্য দলকে এ ব্যাপারে দোষ দিয়ে লাভ নেই। নিজের মানুষের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরা এ ব্যাপারে গণ-বণ্টন ব্যবস্থার পূর্ণ রেশনিং চালু করার কথা বলেছিলাম। সরকারকে বিষয়টা আরেকবার বিবেচনার জন্য বললাম।’
রাশেদ খান মেনন বলেন, বিএনপি ও গণফোরামের বন্ধুরা আজ জল ঘোলা করে হলেও সংসদে এসেছে। কিন্তু তাতে আত্মতৃপ্তির অবকাশ নেই। বরং নির্বাচনকে যথাযথ মর্যাদায় ফিরিয়ে আনার কাজটিই করতে হবে। কারণ রোগ এখন উপজেলা নির্বাচন পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। পাঁচ দফার উপজেলা নির্বাচনে ওয়ার্কার্স পার্টি, এমনকি আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের অভিজ্ঞতা করুণ। নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের বলেও কোনো লাভ হচ্ছে না। বরং তাদের যোগসাজশ রয়েছে।
রোহিঙ্গা সমস্যা খুবই প্রাসঙ্গিক বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘মানবতা থেকে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়া হলেও তারা আজ বাংলাদেশের নিরাপত্তা ও সামাজিক স্থিতিশীলতার প্রতি প্রত্যক্ষ হুমকিতে পরিণত হয়েছে। মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধের অবশ্যাম্ভাবী প্রতিক্রিয়া বাংলাদেশের ওপর পরছে। এই হুমকির মুখে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও অখণ্ডতা রক্ষা করা আজ কর্তব্য।’
সামনের চ্যালেঞ্জগুলো অতি কঠিন হবে দাবি করে মেনন বলেন, ‘কোনও একক দলের পক্ষে এটা মোকাবিলা সম্ভব নয়। প্রয়োজন ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস, জনগণকে ঐক্যবদ্ধ ও সংগঠিত করা। শত্রু সাম্রাজ্যবাদ-মৌলবাদ। এ ব্যাপারে কোনও দ্বিধা থাকলে এখনই ঝেড়ে ফেলুন। মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ জয়ী হবেই।’
বাজেটের প্রসঙ্গ টেনে রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘ব্যাংক ঋণের ওপর সুদের হার এক অংকের ওপর না যাওয়ার কথা দিয়েও সরকার রাখেনি। ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করলেও, মাত্র কয়েকদিন আগেই খেলাপি ঋণ আদায়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের পরামর্শে বাংলাদেশ ব্যাংক যে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে তাতে ওই ঋণ খেলাপিদের বরং পুরস্কারের ব্যবস্থা করা হয়েছিল।’