জাতীয় ভোটের ‘বিরোধ’ পড়বে উপজেলা ভোটে
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটার বাড়ানো ও নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করতে এবার দলীয়ভাবে মনোনয়ন দেবে না আওয়ামী লীগ। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও দলীয় প্রার্থীদের সঙ্গে ভোটে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী। এতে দীর্ঘ সময় পর ভোটার উপস্থিতি কিছুটা বেড়েছিল জাতীয় নির্বাচনে। সেই কৌশল কাজে লাগিয়ে এবার উপজেলা নির্বাচনে দলীয়ভাবে প্রার্থী না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগের দলীয় নেতাকর্মীরা জানান, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় ও দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ঘিরে অন্তর্দ্বন্দ্ব তীব্র আকার ধারণ করেছিল। সেই কোন্দল এখনো জিইয়ে রয়েছে। জাতীয় নির্বাচনে দলীয় ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করা নেতারা এখন উপজেলা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এই নিয়ে তৃণমূলের পুরোনো বিভেদ নতুন করে মাথা চাড়া দিয়ে ওঠেছে। আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে সেই বিভেদ আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কার কথা জানালেন তারা।
গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। বিএনপিবিহীন এই নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ দেখাতে দলীয় প্রার্থীর বাইরে নিজ দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। ভোটের মাঠে আওয়ামী লীগের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী। এ নিয়ে তৃণমূলে চরম বিভেদ দেখা দেয়। চট্টগ্রামের ১৬ আসনের বেশির ভাগ আসনেই আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থীদের সঙ্গে দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। প্রার্থীদের পক্ষে-বিপক্ষে থাকা নেতারা এখন উপজেলা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
চট্টগ্রাম-৮ আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী ছিল না। এ আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছাড় দেয় আওয়ামী লীগ। কিন্তু আওয়ামী লীগ স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুচ ছালাম ও বিজয় কুমার চৌধুরীকে ঘিরে মাঠে সরব ছিলেন দলীয় নেতাকর্মীরা। সেই রেশ এখনো রাজনীতির মাঠে জিইয়ে রয়েছে। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল আমিন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান রেজাউল করিম, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিউল আলম শফি, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মো. জাহেদুল হক জোরেসোরে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তাদের মধ্যে উপজেলা চেয়ারম্যান বিজয় কুমারের পক্ষে ছিলেন। অন্যরা ছিলেন সংসদ সদস্য ছালামের পক্ষে। দুই বলয় ছাড়াও বোয়ালখালীর রাজনীতিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের প্রভাব রয়েছে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল আমিন চৌধুরী বলেন, ‘এবার দলীয় প্রতীক না থাকার ঘোষণায় যে কেউ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন। জনগণকে যোগ্য প্রার্থী নির্বাচিত করার সুযোগ করে দিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মফিজুর রহমান পূর্বকোণকে বলেন, ‘নির্বাচন অংশগ্রহণ ও প্রতিযোগিতামূলক করতে দলীয় প্রতীক দেওয়া হচ্ছে না। জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের কোনো প্রার্থী থাকবে না। দলীয় নেতাকর্মীরা যেকোনো প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে পারবে। প্রার্থী ও নেতাকর্মীরা সহনশীল থাকলে বিভেদ সৃষ্টি হবে না।’
দক্ষিণ চট্টগ্রামের পটিয়া, সাতকানিয়া, বাঁশখালী, চন্দনাইশ ও বোয়ালখালী আসনে দলীয় এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ঘিরে উত্তপ্ত ছিল আওয়ামী লীগের রাজনীতি। বাঁশখালীতে সাবেক সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী ও বর্তমান সংসদ সদস্য মুজিবুর রহমানের মধ্যে বাহাস শুরু হয়েছে। এ নিয়ে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজনীতি। এরইমধ্যে শুরু হয়েছে উপজেলা নির্বাচনের ডামাডোল। নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন সংসদ সদস্য মুজিবুর রহমানের পক্ষে থাকা সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক সিকদার, মোস্তাফিজুর রহমানের পক্ষের খোরশেদ আলম এবং আরেক প্রার্থী আবদুল্লাহ কবির লিটনের পক্ষের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান চৌধুরী মো. গালিব।
বাঁশখালী ছাড়াও পটিয়া ও সাতকানিয়া আসনে দলীয় প্রার্থী এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ঘিরে সহিংসতার ঘটনা বেশি ছিল। পটিয়া উপজেলার সম্ভাব্য প্রার্থীদের সকলেই বর্তমান সংসদ সদস্য মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীর পক্ষে ছিলেন। তবে সাবেক হুইপ সামশুল হক চৌধুরী পরাজিত হওয়ায় তার ঘনিষ্টদের তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না।
সাতকানিয়া আসনের সংসদ সদস্য এম এ মোতালেবের প্রধান নির্বাচনী সমন্বয়ক ছিলেন ডা. আ ম ম মিনহাজুর রহমান। উপজেলা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি। এছাড়া পরাজিত প্রার্থী আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দীন নদভীর পক্ষে থাকা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কুতুব উদ্দিন চৌধুরী, আওয়ামী লীগ নেতা নুরুল আবছার চৌধুরী ও গোলাম ফারুক ডলারও নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
চন্দনাইশ আসনে সংসদ সদস্য ও প্রতিমন্ত্রী নজরুল ইসলামের পক্ষে ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহেদুল ইসলাম জাহাঙ্গীর। স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুর জব্বারের পক্ষে ছিলেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো. কাসেম। দুইজনই এখন উপজেলা নির্বাচনের জন্য মাঠে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন।