ফের মুখোমুখি হচ্ছেন বাইডেন-ট্রাম্প
যুক্তরাষ্ট্রে আগামী নভেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আবারও দেখা যাবে জো বাইডেন ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বৈরথ। মঙ্গলবার এ দুই প্রবীণ রাজনীতিক নিজ নিজ দলের পক্ষ থেকে প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থিতা নিশ্চিত করেছেন। প্রাথমিক বাছাইয়ে প্রয়োজনীয় সংখ্যক প্রতিনিধির সমর্থন আদায়ের মাধ্যমে ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে বাইডেন ও রিপাবলিকান পার্টি থেকে ট্রাম্প মনোনয়ন নিশ্চিত করেন।
এর আগে ২০২০ সালের নির্বাচনেও তারা মুখোমুখি হয়েছিলেন। মার্কিন নির্বাচনে পরপর দুই দফায় দুটি বড় দলের একই প্রার্থীর এ ধরনের লড়াই খুব একটা দেখা যায় না। দেশটির নির্বাচনের ইতিহাসে ৭০ বছর পর এমনটা ঘটল। দল দুটির গ্রীষ্মকালীন অধিবেশনে আনুষ্ঠানিকভাবে দুই প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হবে।
গতকাল বুধবার বিবিসি এসব তথ্য জানিয়েছে। প্রার্থিতা নিশ্চিত হওয়ায় বাইডেন তাঁর সমর্থকদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন। ৮১ বছর বয়সী প্রেসিডেন্ট মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বলেন, পুনরায় নির্বাচনে লড়াইয়ের সুযোগ পাওয়ায় তিনি সম্মানিত। এমন একসময় ভোটাররা তাঁর প্রার্থিতা নিশ্চিত করলেন, যখন ‘ট্রাম্প অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে বড় হুমকি হয়ে উঠেছেন।’
দেশটির অর্থনৈতিক অগ্রগতি ইতিবাচক উল্লেখ করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ফেরার রাস্তার মধ্যভাগে রয়েছে। তবে গণতন্ত্র অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে। তিনি বিশ্বাস করেন, মার্কিন জনগণ ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাওয়াকে বেছে নেবেন।
প্রেসিডেন্ট পদে দলের মনোনয়ন পেতে বাইডেনকে কার্যত তেমন কোনো বাধার মুখে পড়তে হয়নি। তবে তাঁর বয়সের কারণে অনেকের উদ্বেগ রয়েছে। অন্যদিকে, ৭৭ বছরের ট্রাম্প রিপাবলিকান ভোটারদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়, যা তাঁকে সহজেই প্রাথমিক বাছাইয়ে এগিয়ে দিয়েছে।
দ্বিতীয় দফায় নির্বাচিত হলে তিনি অভিবাসন আইন কঠোর করা ও সীমান্ত ‘পুরোপুরি বন্ধ করা’র ঘোষণা দিয়েছেন। এ ছাড়া অপরাধ দমন, অভ্যন্তরীণ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উৎপাদন বৃদ্ধি, আমদানিতে করারোপ, ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান ও ‘যুক্তরাষ্ট্র প্রথম’ নীতি আবারও চালুর অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন।
প্রার্থিতার জন্য প্রয়োজনীয় ১ হাজার ২১৫ প্রতিনিধির ভোটের জায়গায় ট্রাম্প পেয়েছেন ১ হাজার ২২৮টি ভোট। বাছাই পর্বে ট্রাম্পের সঙ্গে খানিকটা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিলেন জাতিসংঘে সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালি। তিনি ৯১ জনপ্রতিনিধির সমর্থন পেয়েছেন।
বিজয়ের পর ট্রাম্প বলেন, ‘এটা অনেক বড় একটি দিন। তবে, আমাদের আবার কাজে ফিরতে হবে। কারণ, দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে খারাপ প্রেসিডেন্টকে আমরা পেয়েছি। এজন্য উদযাপন করে সময় নষ্ট করা যাবে না। আমরা উদযাপন করব আট মাস পর, যখন ভোট শেষ হবে।’
বাইডেন ও ট্রাম্পের এ দ্বৈরথ মোটেও অপ্রত্যাশিত ছিল না। তবে এক জরিপে দেখা গেছে, আবারও এ দু’জনের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে অনেক মার্কিনি অখুশি। প্রধান দুটি দলের বাছাই পর্বের রীতি একই ধরনের হলেও ডেমোক্র্যাট দলের প্রার্থিতার জন্য ১ হাজার ৯৬৮ প্রতিনিধির সমর্থন পেতে হয়। বাইডেন পেয়েছেন ২ হাজার ৯৯ জনের সমর্থন।
মঙ্গলবার জর্জিয়া, মিসিসিপি ও ওয়াশিংটনের প্রাথমিক বাছাইয়ে জয়লাভের মধ্য দিয়ে বাইডেন ও ট্রাম্প প্রার্থিতা নিশ্চিত করেন। আলজাজিরা লিখেছে, তাদের এ পুনঃদ্বৈরথ যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বিভাজনকে আরও প্রকট করতে পারে। ইউনিভার্সিটি অব সিডনির যুক্তরাষ্ট্রবিষয়ক স্টাডিজ সেন্টারের অধ্যাপক ব্রেন্ডন ও’কনোর বলেন, এটা বিস্ময়কর যে, রিপাবলিকান পার্টি তৃতীয়বারের মতো ট্রাম্পকে প্রার্থী করেছে।
সাধারণত এসব ক্ষেত্রে নতুন প্রার্থীকেই মনোনয়ন দেওয়া হয়। হতে পারে ট্রাম্প তাঁর সহকর্মীদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করতে সক্ষম হয়েছেন। তিনি এটা দেখিয়েছেন, তাঁকে চ্যালেঞ্জ করাটা কঠিন; কেউ চ্যালেঞ্জ করলে অপমানিত হতে হবে। আর বাইডেন তো এ বয়সে নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে ইতিহাস গড়তে যাচ্ছেন। আগামী ৫ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।