বাঁশখালীতে অবৈধভাবে বনের ২ হাজার গাছ কাটলেন ইউপি চেয়ারম্যান!
তীব্র গরমে এখন অতিষ্ঠ জনজীবন। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রচণ্ড গরম সহনীয় পর্যায়ে আনতে পারে গাছ। এমন অবস্থায় বাঁশখালীতে বন বিভাগের প্রায় ২ হাজার গাছ কাটার অভিযোগ উঠেছে পুকুরিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আসহাব উদ্দিনের বিরুদ্ধে।
মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) সকালে পুকুরিয়া ইউনিয়নের একাইত্যা পুকুর পাড় এলাকার পূর্বে পাহাড়ি এলাকা থেকে এসব গাছ কাটা হয়। অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে কাটা গাছ জব্দ করেছে পুলিশ। এ ব্যাপারে বন বিভাগ বাদী হয়ে মামলার প্রস্তুতি চলছে।
জানা গেছে, বন বিভাগের পাহাড় ও চা বাগানের জায়গা থেকে গাছগুলো কেটে ফেলা হয়। কেটে ফেলা গাছগুলো ইউক্যালিপটাস, আকাশমনি, সেগুন, গর্জন ও মেহগনি প্রজাতির বলে জানা গেছে। মঙ্গলবার সকালের দিকে চেয়ারম্যান নিজে উপস্থিত থেকে কয়েকশত শ্রমিক দিয়ে এসব গাছ কাটেন বলে অভিযোগ।
খবর পেয়ে মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) সকালে রামদাস মুন্সি হাট পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ তপন কুমার বাগচি ও কালিপুুর রেঞ্জ কর্মকর্তা মনোয়ার হোসেনের নির্দেশে পুকুরিয়া বন বিট কর্মকর্তা মোহাম্মদ আশরাফুল আলম, সাধনপুর বন বিট কর্মকর্তা মো. এহসানসহ বন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছান।
তীব্র তাপদাহের মাঝে চেয়ারম্যানের এই গাছ কাটার ঘটনায় এলাকায় তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
এ বিষয়ে ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আমজাদ হোসেন বলেন, ‘চেয়ারম্যান আসহাব উদ্দিন প্রভাব কাটিয়ে ভূমিহীন উচ্ছেদ করে অনুমানিক ২০০ একর সরকারি পাহাড় ও ১৫০ একর সরকারি চর দখল করে রেখেছেন বরুমছড়ায়। গাছ কাটার ঘটনা আমার ওয়ার্ডে হলেও বন বিভাগের লোকজন গাছগুলো আমার জিম্মায় দেয়নি।’
এ বিষয়ে পুকুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মনির উদ্দিন বলেন, ‘ঘটনাস্থল ৪ নম্বর ওয়ার্ডে হলেও গাছগুলো জব্দ করার পর ৮নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মনিরুল মান্নানের জিম্মায় দেওয়া হয়েছে। মনিরুল মান্নান চেয়ারম্যান আসহাব উদ্দিনের অনুগত লোক হিসেবে পরিচিত। নির্বিচারে প্রায় ২ হাজারের অধিক গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। গাছগুলোর মূল্য প্রায় ৭৫ লাখ হবে। চেয়ারম্যান আসহাব উদ্দিন প্রায় ১০০ একরের মতো সরকারি খাস খতিয়ানভুক্ত পাহাড়ি জায়গা দখল করে রেখেছেন।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুকুরিয়া বন বিট কর্মকর্তা আশরাফুল আলম বলেন, ‘সরকারি যত গাছ আছে তা বিক্রি করতে হলে বন বিভাগের অনাপত্তিপত্র নিতে হবে ও বন বিভাগ কর্তৃক মূল্য নির্ধারণ করিয়ে নিতে হবে। এসব নিয়ম না মানলে সেটি অবৈধ হিসেবে গণ্য হবে। কিন্তু পাহাড়ের গাছ কাটার বিষয়ে বন বিভাগের কাছে কেউ অনুমতি বা অনাপত্তিপত্র নেয়নি। তার মানে এটা সম্পূর্ণ অবৈধ।’
তিনি আরও বলেন, ‘ওখানে গাছের সংখ্যা কয়টি হবে জানা নেই। জব্দ করার সময় আমরা গাছের সংখ্যা গণনা করিনি। এ ঘটনায় মামলার প্রক্রিয়া চলছে। যে জমি থেকে গাছগুলো কাটা হয়েছে সেই জমির মালিকানা নিয়ে জটিলতা আছে। চেয়ারম্যান নিজের জমি দাবি করে গাছগুলো কেটেছেন। অনুমতির কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেনি চেয়ারম্যান। তাই গাছগুলো জব্দ করেছি। তবে স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ওই জমি সরকারি খাস খতিয়ানভুক্ত।’
ঘটনাস্থল ৪ নম্বর ওয়ার্ড হলেও কেন ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্যকে গাছগুলো জিম্মায় দেওয়া হলো— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা তাৎক্ষণিক যাকে ঘটনাস্থলে হাজির পেয়েছি, তার জিম্মায় দিয়েছি। আমজাদ মেম্বার তো তখন ঘটনাস্থলে ছিলেন না।’
এদিকে অভিযোগ প্রসঙ্গে জানার জন্য পুকুরিয়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আসহাব উদ্দিনকে ফোন দেওয়া হলে তিনি এ প্রতিবেদকের সাথে দুর্ব্যবহার করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমার জায়গা থেকে আমি গাছ কেটেছি। অনুমতি নিবো কেন? এ বিষয়ে তোকে অনুমতিপত্র দেখাবো কেন? আমি রোপন করেছি। আমি ঘেরা বেড়া দিয়েছি। আমি কাটতে পারবো না কেন? তুই কি বলতে চাচ্ছিস? আমি তোকে কী করি দেখ।’
বাঁশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তোফায়েল আহমদ বলেন, ‘বৃক্ষনিধন চরম অন্যায় ও আইনবিরোধী কাজ। যেখানে সরকার তাপদাহ নিয়ন্ত্রণে কোটি কোটি টাকার গাছ লাগাচ্ছে, সেখানে চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে গাছ কাটার ঘটনা খুবই নিন্দনীয়।’