আন্তর্জাতিকধর্ম

মোদির শাসনামলে ভারতীয় মুসলিমদের অবস্থা কী?

ছয় বছর আগের ঘটনা। ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় শহর আগ্রার একটি স্কুল থেকে এক মুসলিম শিক্ষার্থী মুখ ভার করে বাড়ি ফিরে আসে। নয় বছর বয়সী ওই শিক্ষার্থী তার মাকে জানায়, সহপাঠীরা তাকে ‘পাকিস্তানি সন্ত্রাসী’ বলে ডেকেছে। লেখক ও পরামর্শক রিনা আহমেদ এই দিনটিকে গুরুত্বের সঙ্গে স্মরণে রেখেছেন। তার ছেলে জানায়, যখন তাদের শিক্ষক ক্লাস থেকে বের হয়ে যেতেন, তখন তার সহপাঠীরা তাকে উপহাস করত। ছেলেদের একটি গ্রুপ তাকে ‘পাকিস্তানি সন্ত্রাসী’ আখ্যায়িত করে খুন করার কথাও বলে। কিছু সহপাঠীরা তাকে নর্দমার কিট বলেও ডাকত।

এ ঘটনার পর ছেলেটির মা স্কুলে অভিযোগ জানায়। কিন্তু কর্তৃপক্ষ জানায়, এটা আপনার কল্পনা। এমন কিছু ঘটেনি। এরপরই রিনা আহমেদ তার ছেলেকে স্কুল থেকে নিয়ে আসেন। বর্তমানে ছেলেটির বয়স ১৬ বছর এবং বাড়িতে বসেই সে লেখাপড়া করছে।

রিনা আহমেদ বলেন, আমি আমার ছেলের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িকতার অভিজ্ঞতা পেলাম। এই শহরে আমিও বড় হয়েছি। কিন্তু কখনো এমন ঘটনা ঘটেছে বলে আমাদের স্মরণে নেই।

২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদির হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ক্ষমতায় আসে। ওই সময় থেকে ভারতের ২০ কোটি মুসলিম কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। উগ্র হিন্দু জনতা সন্দেহজনক গরু ব্যবসায়ীদের মারধর করছে এবং মুসলিম মালিকানাধীন ছোট ব্যবসায়ীদের লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে। এছাড়া মসজিদের বিরুদ্ধেও তারা আপত্তি জানাচ্ছে। ইন্টারনেটে মুসলিম নারীদের নিলামে তোলা হচ্ছে। কট্টর হিন্দুত্ববাধী দলগুলো এবং ভারতের মূল ধারার গণমাধ্যম লাভ জিহাদের মাধ্যমে ইসলাম বিদ্বেষকে উস্কে দিচ্ছে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, মুসলিম পুরুষদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তারা হিন্দু নারীদের বিয়ে করে ইসলামে ধর্মে রূপান্তর করছে।

অভিযোগ রয়েছে, বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর মুসলিম বিদ্বেষ ব্যাপক আকারে বেড়েছে। হিন্দুদের ভারতে মুসলিম হওয়া নামের একটি নতুন বইয়ের লেখক জিয়া উস সালাম বলেন, মুসলিমরা এখন দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হয়ে উঠেছে। নিজ দেশে তারা এখন অদৃশ্য সংখ্যালঘু। তবে বিজেপি ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলছে, সংখ্যালঘুদের সঙ্গে কোনো ধরনের খারাপ ব্যবহার করা হচ্ছে না।

আবারও ফিরে আসা যাক রিনা আহমেদের কাছে। তিনি কয়েক দশক ধরে পরিবার নিয়ে আগ্রাতে বসবাস করে আসছেন। তিনি লক্ষ্য করেছেন তার অনেক হিন্দু বন্ধু থাকলেও তাদের মধ্যে একটা পরিবর্তন এসেছে। অন্যদিকে, কালেম আহমেদ কুরেসি, যিনি সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার থেকে জুয়েলারি ডিজাইনার এবং গায়ক হয়েছেন, তিনি সাত প্রজন্মের একজন আগ্রার বাসিন্দা। আগ্রার বিভিন্ন স্থানে গিয়েছেন তিনি।

রুবাব নামে একটি গানের যন্ত্র ব্যবহার করেন কুরেসি। যেটি মূলত আফগানিস্তানে ব্যবহার করা হয়। একদিন তিনি এক হিন্দু লোকের সঙ্গে একটি ট্যাক্সি ভাড়া করে দিল্লি থেকে আগ্রা আসছিলেন। তিনি হঠাৎ লক্ষ্য করলেন হিন্দু লোকটি একটি পিস্তল বের করছেন। এ দৃশ্য দেখে কুরেসি ভয় পেয়ে গেলেন। তিনি বুঝতে পারলেন তার নামের ফলে লোকটি এ ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে।

তবে বিজেপির জাতীয় মুখপাত্র সাঈদ জাফর ইসলাম বলেন, ভারতীয় মুসলিমদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। কারণ, কিছু মিডিয়া উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ইসলাম ভীতিকে ছড়িয়ে দিচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d