চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামে গরমে তীব্র জ্বরে কাবু শিশুরা

প্রতিদিনের মতো মা-বাবার সঙ্গে রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে সাড়ে তিন বছর বয়সী শিশু আইরিন সুলতানা সিজদা। মধ্যরাতে হঠাৎ তার মা খেয়াল করেন, মেয়ে ঠিকমতো ঘুমাচ্ছে না। ছটফট করছে। গায়ে হাত দিতেই দেখেন, জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে। থার্মোমিটার দিয়ে মেপে দেখেন, জ্বর ১০৪ ডিগ্রি! এতে চোখ কপালে ওঠে তাঁর। রাতভর মাথা ধুয়ে ও জলপট্টি দিয়েও মেয়ের জ্বর কমেনি। উল্টো সকালে জ্বর আরও বেড়ে পেরিয়ে যায় ১০৫ ডিগ্রির ঘর। এতে ঘাবড়ে যায় পুরো পরিবার। স্থানীয় একজন চিকিৎসককে দেখিয়ে ওষুধ খাওয়ালেও কোনোভাবে জ্বর কমে না সিজদার। উল্টো এর সঙ্গে যোগ হয় খাবারে অরুচি, সর্দি-কাশিসহ নানা শারীরিক সমস্যা। তাই তিন দিনের মাথায় মেয়েকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে বাধ্য হন চট্টগ্রাম নগরের পাথরঘাটার বাসিন্দা মা কানিজ সুলতানা। মেয়ের এমন উচ্চ তাপমাত্রার জ্বর আর কখনও দেখেননি তিনি। অন্য দুই সন্তানও এমন জ্বরে কখনও আক্রান্ত হয়নি।

তীব্র তাপদাহের কারণে এমন উচ্চ তাপমাত্রার জ্বরে শুধু এই শিশুই নয়, আক্রান্ত হচ্ছে তার মতো বেশির ভাগ শিশু। কাবু হচ্ছে ১০৪ থেকে ১০৬ ডিগ্রি পর্যন্ত উচ্চ তাপমাত্রার জ্বরে। অনেককে ভর্তি হতে হচ্ছে হাসপাতালে।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের তথ্যমতে, শিশু ওয়ার্ডের ৭০ শয্যার বিপরীতে কয়েক দিন ধরে প্রতিদিন রোগী ভর্তি থাকছে ১৬০ থেকে ১৮০ জন। চট্টগ্রামের বিশেষায়িত মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালে প্রতিদিন নতুন রোগী ভর্তি হচ্ছে ৫০ থেকে ৭০ জন। রোগীর চাপ বেড়েছে হাসপাতালের বহির্বিভাগেও। রোগীর বাড়তি চাপের কারণে অনেক শিশুকে মেঝেতে রেখেও চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। এ কারণে চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত চেম্বারেও বেড়েছে রোগীর চাপ। স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েক গুণ রোগী হওয়ায় অনেক রোগীর সিরিয়ালও নতুন করে নিচ্ছেন না কেউ কেউ। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ল্যাব ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারেও প্রতিনিয়ত বাড়ছে শিশু রোগীর সংখ্যা।

শিশু বিশেষজ্ঞদের মতে, অতিরিক্ত গরমে শিশুরা প্রচুর ঘামে। এতে তৈরি হচ্ছে পানিশূন্যতা। এ জন্য তাদের প্রচুর পানি খাওয়াতে হবে। শিশুর শরীরের তাপমাত্রা হঠাৎ করে বেড়ে গেলে অবশ্যই ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে। তাদের সুতির কিংবা পাতলা কাপড় পরাতে হবে। গরমের কারণে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ছে। তাই জরুরি প্রয়োজন ছাড়া শিশুদের ঘর থেকে বাইরে বের না করা উচিত।

সরেজমিন কয়েকটি হাসপাতাল ঘুরে অনেক অভিভাবককে অসুস্থ সন্তানদের নিয়ে চিকিৎসকদের চেম্বারে ছুটতে দেখা গেছে। অতিরিক্ত গরমে নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। জ্বরের পাশাপাশি সর্দি-কাশি, শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়াতেও আক্রান্ত হচ্ছে।

চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, অতিরিক্ত গরমের কারণে শিশুদের দিকে বাড়তি খেয়াল রাখতে হবে। প্রচণ্ড গরমের মধ্যে তাদের কোনোভাবেই ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা পানি জাতীয় কিছু খাওয়ানো যাবে না। এই সময়ে বাইরের খাবার পরিহার করতে হবে। শিশুদের বেশি বেশি তরল খাবার খাওয়াতে হবে। সামান্য অস্বাভাবিকতা দেখা দিলেই চিকিৎসক দেখাতে হবে। স্থানীয় ফার্মেসি থেকে নিজেদের ইচ্ছামতো ওষুধ খাওয়ানো যাবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d