একাদশে অ-১৮ ও ‘৫’ বিদেশি– ফুটবলাঙ্গনের প্রতিক্রিয়া
২০২৪-২৫ ফুটবলে দু’টি নতুনত্ব থাকছে। প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবগুলোকে একাদশে একজন অ-১৮ খেলোয়াড় রাখতেই হবে এবং ৪ জন বিদেশি মাঠে নামানোর পর আরেক জন বিদেশি বদলি হিসেবে নামানোর সুযোগ পাবে। লিগ কমিটির গতকালের সভায় এই দু’টি বড় পরিবর্তন নিয়ে ফুটবলাঙ্গনে চলছে নানা আলোচনা।
চট্টগ্রাম আবাহনীর কোচ ও দেশের অন্যতম সেরা ফুটবল বিশ্লেষক মারুফুল হকের মতে, ‘দু’টি সিদ্ধান্তেই যৌক্তিকতা রয়েছে। খেলোয়াড় উঠে আসছে না এজন্য অ-১৮ কেউ সুযোগ পেয়ে তৈরি হতে পারলে অবশ্যই ভালো। অনেক সময় বিদেশিরা খারাপ খেললেও তাদের পরিবর্তে দেশি কাউকে নামাতে ইতস্তত করে এখন এই নিয়মের ফলে আরেক বিদেশি দ্বারা সেটা পূরণ সম্ভব হবে। এতে মৌলিকত্ব নষ্ট হবে না মাঠে চার জনই থাকবে।’
জাতীয় দলের সাবেক তারকা ফুটবলার ও শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের কোচ জুলফিকার মাহমুদ মিন্টুও নতুন দুই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘ক্লাবগুলো ৬ জন বিদেশি ফুটবলার আনে। দুই জনকে প্রতি ম্যাচেই বসিয়ে রাখতে হয়। অনেক ম্যাচে ইনজুরি ও বাজে পারফরম্যান্স করলেও বদলের সুযোগ থাকে না। এখন কোচ ও ম্যানেজম্যান্টের একজনকে ব্যবহারের সুযোগ থাকবে।’
একাদশে অ-১৮ একজন রাখা নিয়ে তার পর্যবেক্ষণ, ‘এই নিয়মে ত্রিশ বছর আগে নকীব, জাকিরের সৃষ্টি হয়েছে। আবার এটা শুরু হলে নিশ্চয়ই কোনো না খেলোয়াড় বেরিয়ে আসবে। বিসিএলে বয়স ভিত্তিক দল রয়েছে। তবে বিসিএল ও বিপিএলের মধ্যে তারতম্য ব্যাপক। প্রিমিয়ার লিগে একজন খেলোয়াড় খেলার সুযোগ পেলে তার পরিপক্বতা হবে অনেক।’
পেশাদার লিগ সর্বোচ্চ স্তর। এখানে ক্লাবগুলোর উপর বয়স ভিত্তিক একজনকে চাপিয়ে দেয়া কতটা যৌক্তিক এই প্রশ্নের উত্তরে বসুন্ধরা কিংসের স্প্যানিশ কোচ অস্কার ব্রুজন বলেন, ‘পূর্ণাঙ্গ নিয়মটি না পেলে আসলে সেভাবে মন্তব্য করা যাচ্ছে না। একাদশে একজন অ-১৮ রাখতে হলে স্কোয়াডে ৪-৫ জন খেলোয়াড় রাখতে হবে কারণ ইনজুরি, কার্ড নানা বিষয় থাকতে পারে। ফুটবলে উন্নয়নশীল দেশে এ রকম নিয়ম নতুন কিছু নয়। ভারত সহ অনেক দেশেই এমন নীতি ছিল।’
এক ম্যাচে ৫ জন বিদেশি খেলানোর সুযোগকে অস্কারও ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। লিগের ক্লাগেুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভালো মানের বিদেশি তার হাতেই।
ঘরোয়া ফুটবলে আবাহনী-মোহামেডানের সেই দ্বৈরথ এখন পরিণত হয়েছে আবাহনী-কিংসে। বাফুফের পেশাদার লিগ কমিটির চেয়ারম্যান বসুন্ধরা কিংসের সভাপতি ইমরুল হাসান। লিগ কমিটির গতকালের নতুন দুই সিদ্ধান্তে আবাহনীর প্রতিক্রিয়া এ নিয়ে ফুটবলাঙ্গনে বেশ আগ্রহ।
আবাহনী ক্লাবের ম্যানেজার ও সাবেক জাতীয় ফুটবলার কাজী নজরুল ইসলাম অবশ্য এটি স্বাভাবিকভাবেই নিয়েছেন,’ আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো কোনো চিঠি বা কিছু পাইনি। মিডিয়ার মাধ্যমে বিষয়টি জেনেছি। এটাকে বিরুপভাবে নেয়ার কিছু নেই। ৬ জন বিদেশি খরচ করে এনে দুই জন বসিয়ে রাখার যৌক্তিকতা নেই। নতুন নিয়মে আরকেজনকে ব্যবহার করা যাবে আর অ-১৮ প্রথম দিকে হয়তো ক্লাবগুলো অল্প সময়ে খেলাবে। দ্বিতীয় লেগের দিকে বিশ্বাস অনেক খেলোয়াড় অভিজ্ঞতা ও পরিপক্বতা অর্জন করে বেশি সময় মাঠে থাকতে পারবে। এর মাধ্যমে জাতীয় দলের পাইপলাইন তৈরি হবে। ‘
মারুফ লিগ কমিটির সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা পেলেও টেকসই নীতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, ‘আমরা বলছি পেশাদার লিগ। সেটাও এক যুগের বেশি হয়েছে এখনো আমাদের লিগের কাঠামোই ঠিক হয়নি। রেলিগেশন,দলবদল, বিদেশি কোটা, ভেন্যু কোনো কিছুই সুনির্দিষ্ট ছকে নেই। নির্দিষ্ট ফরম্যাটে না থাকলে কোনো দিন সুফল আসবে না।’
ফুটবল লিগে ফিরছে তিন যুগ আগের প্রথা!
জাতীয় দলের সাবেক এই কোচ পরবর্তী দলবদলকে উদাহরণ হিসেবে দেখিয়ে বলেন, ‘২৯ মে এবার লিগ শেষ। দুই দিন পরই নতুন দলবদল। বাংলাদেশের আর্থ সামাজিক প্রেক্ষাপটে পরবর্তী লিগে অনেক ক্লাবই সংকটে পড়বে। সমাপ্ত মৌসুমের আর্থিক বিষয়াদি সম্পন্ন করবে না পরবর্তী মৌসুমে দল গড়বে এক উভয় সংকট অবস্থায় পড়বে অনেক ক্লাবই।’
মারুফের সঙ্গে এই পয়েন্টে আবাহনী ম্যানেজার নজরুল ভিন্ন একটি বিষয়ের অবতারণা করেছেন, ‘লিগ শেষ হওয়ার দুই দিন পরই নতুন দলবদল এটি আসলে কঠিনই। খেলোয়াড়দের সঙ্গে এখনই কথা বলতে হবে যদি কোনো ক্লাব দল গড়তে চায়। সেক্ষেত্রে বর্তমান দলের অনেককে ক্লাব রাখবে না তাদের সঙ্গে কথা না বললে চলমান লিগে প্রভাব পড়বে।’ বাংলাদেশের সংস্কৃতিতে লিগের অর্ধ শেষ হওয়ার পরই অনেক খেলোয়াড় ও অনেক ক্লাবই পরবর্তী দল গঠনের প্রাথমিক কাজ সেরে ফেলে।
বিশ্বকাপ ফুটবল ও বড় টুর্নামেন্টগুলোর পর ফিফা ট্যাকনিক্যাল স্টাডি গ্রুপের মাধ্যমে টুর্নামেন্ট বিশ্লেষণ করে। উন্নত অনেক দেশেই ঘরোয়া লিগের চুলচেরা বিশ্লেষণ করে ট্যাকনিক্যাল বিভাগ। ট্যাকনিক্যাল রিপোর্টের মাধ্যমেই ঐ ফেডারেশনগুলো লীগ ও ঘরোয়া কাঠামোর পরিবর্তন-সংস্কারের সিদ্ধান্ত নেয়। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ নিয়ে এ রকম কোনো ট্যাকনিক্যাল রিপোর্ট নেই। কর্তাদের ইচ্ছেতেই ফরম্যাট ও নীতির পরিবর্তন হয়।
বাফুফের নতুন ট্যাকনিক্যাল ডাইরেক্টর সাইফুল বারী টিটু পরবর্তী লিগ থেকে ডাটা এনালাইসিস করতে চান, ‘এটা অবশ্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমাদের স্বল্প লোকবল রয়েছে এর মধ্যেও আমি পরবর্তী বিপিএল ও বিসিএল লিগে একটি ট্যাকনিক্যাল রিপোর্ট তৈরি করতে চাই। যার মাধ্যমে আশা করি জাতীয় দল ও সামগ্রিক ফুটবলে ভূমিকা রাখতে পারবে।’