ধর্ম

ভালো নাম মানে শুভ সূচনা

নাম ব্যক্তি বা বস্তুর চিহ্ন। এটি কোনো কিছুকে চেনা ও পরখ করার উপায়। নাম দ্বারা একজন থেকে অন্যজনকে পৃথক করা যায়। তাই ব্যক্তি ও বস্তুর নাম রাখার ক্ষেত্রে পৃথিবীর সব ধর্ম, সভ্যতা ও সংস্কৃতির ঐক্য রয়েছে। একটি সুন্দর নাম অনেক ধন-সম্পদের চেয়েও উত্তম।

নাম রাখার ব্যাপারে ইসলাম একটু বেশি সচেতন হওয়ার তাগিদ দিয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) শিশুর জন্মের সপ্তম দিন নবজাতকের উত্তম ও সুন্দর অর্থবোধক নাম রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। (তিরমিজি ২১১০)

রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘কিয়ামতের দিন তোমাদের নিজ নাম ও পিতার নামে ডাকা হবে। সুতরাং তোমরা সুন্দর নাম রাখো। ’ (আবু দাউদ, হাদিস ৪৩০০)

তবে ইসলামে নাম রাখার কয়েকটি স্তর আছে—

এক. ‘আবদুল্লাহ’ ও ‘আবদুর রহমান’ এ দুটি নাম রাখা সর্বোত্তম। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহর কাছে সর্বাধিক প্রিয় নাম হলো আবদুল্লাহ ও আবদুর রহমান। ’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস ১৩৯৮)

দুই. মহান আল্লাহর উবুদিয়্যাত তথা দাসত্বের অর্থজ্ঞাপক নাম রাখা উত্তম। যেমন—আবদুল আজিজ (আজিজ তথা মহাপরাক্রমশালীর বান্দা), আবদুর রহিম (পরম করুণাময়ের বান্দা), আবদুল মালিক (রাজাধিরাজের বান্দা) ইত্যাদি নামগুলোতে আল্লাহর দাসত্বের অর্থ রয়েছে। এগুলো রাখা উত্তম। তবে বর্তমানে এমন নাম রাখা হলে বেশির ভাগ মানুষ পুরো নাম ব্যবহার করে না। আবদুল আজিজকে আজিজ নামেই ডাকা হয়। এতে অর্থ বিকৃত হয়ে গুনাহ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই এজাতীয় নাম না রাখাই ভালো। (মা’আরেফুল কোরআন, ভূমিকা দ্রষ্টব্য)

তিন. নবী-রাসুলদের নামে নাম রাখা উত্তম। প্রিয় নবী (সা.)-এর দুটি নাম রয়েছে মুহাম্মাদ ও আহমাদ। এ ছাড়া অন্য নবীদের নাম রাখা যায়। তবে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর উপনাম ‘আবুল কাসেম’ অন্যদের জন্য রাখা নিষিদ্ধ। (বুখারি, হাদিস ৫৮৩৩)।

চার. নেককার ও ঈমানদার মনীষীদের নামে নাম রাখা উত্তম। সাহাবি, তাবেইন ও তাবে তাবেইনসহ মুসলিম মনীষীদের নামে নাম রাখা যায়।

পাঁচ. এগুলো ছাড়াও ইসলাম সুন্দর ও অর্থবোধক যেকোনো নাম রাখার অনুমতি দিয়েছে।

ইয়াহিয়া ইবনে সাঈদ (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) এক উটনীর দুধ দোহনের জন্য লোকদের জিজ্ঞেস করেন, এ উটনীকে কে দুধ দোহন করবে এক ব্যক্তি উঠে দাঁড়াল। তিনি তাকে জিজ্ঞেস করেন, তোমার নাম কী সে বলল, তার নাম হলো মুররাহ। তিনি বলেন, বসো। এরপর তিনি জিজ্ঞেস করেন, এ উটনীকে কে দুধ দোহন করবে অন্য এক ব্যক্তি উঠে দাঁড়াল। তিনি তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার নাম কী সে বলল, তার নাম হারব। তিনি বললেন, বসে পড়ো। অতঃপর তিনি জিজ্ঞেস করলেন, এ উটনীকে কে দুধ দোহন করবে এক ব্যক্তি উঠে দাঁড়াল। তিনি তাকে জিজ্ঞেস করেন, তোমার নাম কী সে বলল, তার নাম ইয়ায়িশ। তিনি বলেন, ঠিক আছে, তুমিই দুধ দোহন করো। (জামউল ফাওয়ায়েদ)

প্রথম দুই ব্যক্তিকে দুধ দোহনে বাধা দেওয়ার কারণ হলো, প্রথম দুই নামের ভাবার্থ অপছন্দনীয় এবং সর্বশেষ নামের ভাবার্থ পছন্দনীয়। প্রথম নাম মুররাহ। মুররাহ মানে তিতা বস্তু। আর তিতা নিশ্চয়ই সবার পছন্দনীয় নয়। দ্বিতীয় নাম হারব মানে যুদ্ধ। এটা স্বতঃসিদ্ধ কথা যে যুদ্ধ কোনো পছন্দনীয় কাজ নয়। পক্ষান্তরে ইয়ায়িশ শব্দ জীবন্ত থাকার অর্থবোধক। মহানবী (সা.) এ নাম পছন্দ করেছেন। এর মানে হলো, ইসলাম ব্যক্তি বা বস্তুর সুন্দর নাম চায়। ইসলাম মানুষকে আশাবাদী করতে চায়। সেই আশা জেগে ওঠে সূচনাতেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d