রাজনীতি

আহ্বায়ক কমিটিতে বন্দি দক্ষিণ জেলা বিএনপির রাজনীতি

আহ্বায়ক কমিটিতে বন্দি হয়ে আছে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির রাজনীতি। জেলার মতো উপজেলা ও পৌরসভায় চলছে আহ্বায়ক কমিটি নির্ভর রাজনীতি। এতে ভেঙ্গে পড়েছে সাংগঠনিক কার্যক্রম।

দক্ষিণ জেলা বিএনপির তিন মাসের আহ্বায়ক কমিটি প্রায় পাঁচ বছর পার করলেও সম্মেলনের প্রস্তুতি নেই।

বরং যাকে কোন্দল নিরসনের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তাকে ঘিরে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে অভ্যন্তরীণ কোন্দল।

জানা যায়, ২০১৯ সালের ২ অক্টোবর দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। কোন্দল এড়াতে ৬৫ সদস্যের এ কমিটির আহ্বায়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল নগর বিএনপি নেতা আবু সুফিয়ানকে। আহ্বায়ক কমিটি করার প্রায় দুই বছর পর ৯টি উপজেলা ও পৌরসভা কমিটি গঠন করা হয়। অনৈতিক সুবিধা নিয়ে কমিটি গঠন করার অভিযোগ তুলে পাল্টা কমিটি ঘোষণা করেন সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আলী আব্বাস, সদস্য অধ্যাপক শেখ মহিউদ্দিন ও লিয়াকত আলী। ওই সময় দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে তিন নেতাকে ২০২১ সালের ১০ জানুয়ারি দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। এরপর ২০২৩ সালের ৭ মে আহ্বায়ক কমিটির চার নম্বর সদস্য এনামুল হক এনামকে এক নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক করে কেন্দ্রীয় বিএনপি।

এদিকে সাড়ে তিন বছর পার হলেও উত্তর সাতকানিয়া সাংগঠনিক ইউনিটের কমিটি দিতে পারেনি জেলা বিএনপি। এই ইউনিটে সিনিয়র নেতা বেশি থাকার অজুহাতে কমিটি গঠনে সময়ক্ষেপণ করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে দক্ষিণ জেলা বিএনপির অধীনে ‘উত্তর সাতকানিয়া’ নামে সাতকানিয়া উপজেলার খাগরিয়া, কালিয়াইশ, কেওচিয়া, ধর্মপুর, বাজালিয়া ও পুরানগড় ইউনিয়ন নিয়ে নতুন ইউনিটের অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় বিএনপি।

উত্তর সাতকানিয়া সাংগঠনিক ইউনিট ঘোষণার পর নতুন করে এসব ইউনিয়নের নেতাকর্মীদের মধ্যে চাঞ্চল্য তৈরি হয়। ইউনিট ঘোষণা হওয়ার পর কমিটি গঠনের বিজ্ঞপ্তি জারি করে দক্ষিণ জেলা বিএনপি। ইউনিটটির আহ্বায়ক পদ পেতে ১১ জন এবং সদস্য সচিব পদ পেতে ২৪ জন নেতা আগ্রহী হয়ে জীবনবৃত্তান্তও জমা দের। তবে তিন বছর অতিবাহিত হওয়ার পরও কমিটি না হওয়ায় হতাশা বিরাজ করছে ইউনিটটিতে।

অভিযোগ রয়েছে, উত্তর সাতকানিয়া সাংগঠনিক উপজেলা বিএনপির কমিটি নিয়ে আর্থিক লেনদেন চলছে। এই ইউনিটে পদ প্রত্যাশী কয়েকজন নেতার কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিচ্ছেন জেলা বিএনপির সিনিয়র এক নেতা। তবে যেসব আহ্বায়ক কমিটি করা হয়েছে তারমধ্যে পটিয়া ও লোহাগাড়া উপজেলা ছাড়া আর কোনও উপজেলা বা পৌরসভা তাদের আওতাধীন ইউনিয়ন বা ওয়ার্ড কমিটি গঠন করতে পারেনি।

দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতিতে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মোস্তাক আহমেদ খান নিষ্ক্রিয় থাকলেও তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক কোনও ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি জেলা বা কেন্দ্রীয় বিএনপিকে। এর কারণ হিসেবে নেতারা বলছেন, আবু সুফিয়ানের নির্বাচনী এলাকা বোয়ালখালী উপজেলার বাসিন্দা মোস্তাক আহমেদ। তার বিরুদ্ধে যদি সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয় তাহলে ভবিষ্যতে আবু সুফিয়ানের জন্য গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়াতে পারে মোস্তাক। এতে সংসদ নির্বাচনেও বেকায়দায় পড়তে হতে পারে আবু সুফিয়ানকে।

তৃণমূল নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, নগর বিএনপির নেতা আবু সুফিয়ানকে জেলা বিএনপির কোন্দল নিরসনের জন্য দায়িত্ব দিলেও তিনি দলকে আরো কোন্দলের দিকে ঠেলে দিয়েছেন। তার পছন্দে যেসব উপজেলা-পৌরসভায় কমিটি গঠন করা হয়েছে তারাও রাজনীতি থেকে অনেকটা নিষ্ক্রিয়। এর মধ্যে অন্যতম সাতকানিয়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক জামাল হোসেন। গত বছরের ২৮ অক্টোবর থেকে রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় তিনি। পাশাপাশি আবু সুফিয়ান তার নির্বাচনী এলাকা বোয়ালখালীতে প্রতিপক্ষ নিজ দলের এরশাদ উল্লাহর অনুসারী নেতাদের উপজেলা ও পৌরসভা বিএনপির কমিটিতে জায়গা দেননি। এতে কোন্দল মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।

এক দশক আগে ২০০৯ সালে সম্মেলনের মাধ্যমে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির কমিটি গঠিত হয়। কমিটিতে জাফরুল ইসলাম চৌধুরী সভাপতি ও অধ্যাপক শেখ মোহাম্মদ মহিউদ্দিন সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে ২০১০ সালে এ কমিটি পুনর্গঠন করা হয়। পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় সভাপতি ঠিক রেখে গাজী শাহজাহান জুয়েলকে সাধারণ সম্পাদক এবং শেখ মহিউদ্দিনকে সিনিয়র সহ-সভাপতি করা হয়। পরে ১৫১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়।

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান বলেন, ‘সাংগঠনিক কার্যক্রম একটি চলমান প্রক্রিয়া। কিন্তু বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে আমরা করতে পারছি না। উত্তর সাতকানিয়া কমিটি গঠনে সমস্যা আমাদের অভ্যন্তরীণ’।

তিনি বলেন, এখন স্বাভাবিক রাজনৈতিক কার্যক্রম চালানো যাচ্ছে না। যার কারণে তিন মাসের কমিটির বয়স পাঁচ বছর হয়ে যাচ্ছে। রাজনৈতিক কার্যক্রম চালানোর সুযোগ থাকলে কিংবা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে তিন মাসের মধ্যেই আমরা কমিটি গঠন করে দিতে পারতাম। আমাদের তো এখন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত আদালতে হাজিরা দিতেই সময় যায়। কোনও জায়গায় একসঙ্গে ৫-১০ জন বসতে পারছি না। এটা শুধু দক্ষিণের না, সারা বাংলাদেশেই একই সমস্যা।

কেন্দ্রীয় বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম বলেন, আন্দোলনের কারণে আমাদের সাংগঠনিক কার্যক্রমে ধীরগতি ছিল। এখন আন্দোলন ও সাংগঠনিক কার্যক্রম একসঙ্গে চলবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d