চট্টগ্রাম

ঊর্ধ্বমূল্যের ডলারে পণ্য আসার আগেই অস্থির খাতুনগঞ্জ

গেলো ৮ মে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরামর্শে ক্রলিং পেগ পদ্ধতিতে ডলারের দাম এক লাফে সাত টাকা বৃদ্ধি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। স্বাভাবিকভাবেই আমদানিনির্ভর পণ্যের ওপর ডলারের এই মূল্যবৃদ্ধির নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করছেন অর্থনীতিবিদরা।

তবে বিদেশ থেকে কোন পণ্য আমদানির শুরুতে এলসি (লেটার অব ক্রেডিট) খুলতে হয় আমদানিকারককে। এরপর দেশে পণ্য আসতে ন্যূনতম দুই সপ্তাহ থেকে কয়েক মাস সময় লেগে যায়। তাই এক লাফে ডলারের দাম সাত টাকা বাড়লেও এখনই বাজারে এর প্রভাব পড়ার কথা নয়। কিন্তু ডলারের বিপরীতে টাকার সবচেয়ে বড় এই পতনের পর বেশকিছু পণ্যের দাম বেড়ে গেছে ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে।

গতকাল সোমবার সরেজমিনে খাতুনগঞ্জ পরিদর্শন করে দেখা গেছে, গেলো পাঁচদিনে পাইকারিতে আমদানি করা হলুদ, শুকনো মরিচ, এলাচ, চিকন জিরা, আদা, রসুন, পেঁয়াজ, গোলমরিচ, ছোলাসহ নানা পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে এলাচ, আদা ও হলুদের।

সপ্তাহখানেক আগেও খাতুনগঞ্জে ৩৪শ-৩৫শ টাকা কেজি দামে বিক্রি হয়েছিল এলাচ। গেলো কয়েকদিনের ব্যবধানে ৪শ-৫শ টাকা বেড়ে বর্তমানে ৩৮শ-৩৯শ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে মসলাজাত পণ্যটি। অবশ্য এর কয়েকদিন আগেও বড় লাফ দিয়েছিল এলাচের দাম। সেসময় একসঙ্গে দেড় হাজার টাকা বেড়ে ৫০০ টাকা কমে যায় দাম। এরপর ফের বাড়লো পণ্যটির দাম। তবে এলাচের দাম বৃদ্ধির পেছনে স্লিপ ব্যবসাকেও দুষছেন ব্যবসায়ীরা।

২০-৩০ টাকা দাম বেড়েছে ভারত থেকে আমদানি করা শুকনো মরিচের। গতকাল সোমবার ৩২০-৩৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে সবচেয়ে ভালো মানের শুকনো মরিচ। মরিচের মতো হলুদের দামও বেড়েছে কেজিতে ২০-২২ টাকা। বর্তমানে খাতুনগঞ্জে ১৬০-১৬২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে ভারতীয় হলুদ।
এছাড়াও কেজিতে ৩০ টাকা বেড়ে চিকন জিরা ৭৩০, আদা ২০ টাকা বেড়ে ২০০-২১০, রসুন ১০ টাকা বেড়ে ১৯০-২০০, পেঁয়াজ ১৫ টাকা বেড়ে ৭৫-৮০, গোলমরিচ ৫-১০ টাকা বেড়ে ৭৮০, ছোলা ৫ টাকা বেড়ে ৯৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে খাতুনগঞ্জে।

এসব পণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কথা বললেও এর যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন ভোক্তারা। তবে ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ বলছেন পুরনো এলসি করা পণ্য আমদানির পর বর্তমান হারেই ডলারের মূল্য পরিশোধ করতে হচ্ছে। তাতেই বাড়ছে দাম।

দাম বৃদ্ধির বিষয়ে চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দীন বলেন, বাজার এখন টালমাটাল। অনেক পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। এটা ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণে হচ্ছে। তবে এলসি খোলার পর পণ্য আসতে ১-২ মাস সময় লাগে। এখনই কেন দাম বাড়ছে বুঝতে পারছি না।

তবে চাক্তাই আড়তদার ও ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. আবুল কাশেম জানান, ডলারের দাম বৃদ্ধির পূর্বে যেসব পণ্যের এলসি খোলা হয়েছিল, এখন সেসব পণ্য দেশে আসছে। কিন্তু মূল্য পরিশোধ হয় পণ্য দেশে আসার পর। তাই এখনকার হারেই মূল্য পরিশোধ করতে হচ্ছে। এজন্য দাম বেড়ে যাচ্ছে।

ব্যবসায়ীরা দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে বিভিন্ন কথা বললেও কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) বলছে, ‘ডলারের মূল্যবৃদ্ধি’ পণ্যের দাম বাড়ানোর উপলক্ষ মাত্র। সংগঠনটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন বলেন, এখন ডলারের দাম বাড়লেও এর প্রভাব পড়ার কথা অন্তত দুই মাস পর। কারণ এখন এলসি খুললে পণ্য আসবে অনেক পরে। মূলত ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম বৃদ্ধির অজুহাত খোঁজেন সবসময়। তাই এটাকেও একটা সুযোগ হিসেবে নিয়ে মসলাসহ বেশকিছু পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। তাদের থামাতে তদারকি বৃদ্ধির বিকল্প নেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d