ফেরেশতা কারা, তাদের পরিচয় কী?
ফেরেশতা আল্লাহর বিস্ময়কর সৃষ্টি। আল্লাহ তাআলা নুর বা ঐশী জ্যোতি থেকে তাদের সৃষ্টি করেছেন।
তারা আল্লাহর অতি সম্মানিত ও পুণ্যবান সৃষ্টি। তারা সবসময় আল্লাহর ইবাদতে মগ্ন থাকেন। পানাহার, বৈবাহিক ও জৈবিক চাহিদা থেকে তারা পুরোপুরি মুক্ত থাকেন। তারা পুরুষও নন, নারীও নন। আল্লাহর হুকুমে ফেরেশতারা বিভিন্ন আকার ও রূপ ধারণ করতে পারেন। মানুষের মতো রক্ত-মাংসের সৃষ্টি না হওয়ায়, তাদের কামনা-বাসনা, পানাহারের প্রয়োজনীয়তা ও ঘুম-বিশ্রাম কিছুই নেই। তাদের সংখ্যা মোট কত, তা আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানেন না।
ফেরেশতা শব্দের কথা
‘ফেরেশতা’ মূলত একটি ফার্সি শব্দ। আরবির ‘মালাকুন’ (একবচন) ও ‘মালাইকা’ (বহুবচন)-এর প্রতিশব্দ এটি। কোরআন ও হাদিসে ‘মালাইকা’ শব্দটিই ব্যবহৃত হয়েছে। এর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে বার্তাবাহক।
ইসলামের পরিভাষায় ফেরেশতা এমন ‘নুরানি’ (আলোকিত) সৃষ্টির নাম, যারা যেকোনো সময় বিভিন্ন রূপ-আকৃতি ধারণ করতে পারেন। তারা কখনো আল্লাহর নির্দেশের বিরুদ্ধাচরণ করেন না। বরং সর্বদা আল্লাহর নির্দেশ আত্মসমর্পিত থাকেন। (কাওয়াইদুল ফিকহ, সাইয়েদ মুহাম্মদ আমিমুল ইহসান, পৃষ্ঠা ৫০৪)
ফেরেশতাদের প্রতি ঈমান
ফেরেশতাদের অস্তিত্ব বিশ্বাস করা ঈমানের অন্যতম স্তম্ভ। আল্লাহ ইরশাদ, ‘…কেউ আল্লাহ, তার ফেরেশতা, তার কিতাবসমূহ, তার রাসুলগণ ও পরকালে বিশ্বাস না করলে সে তো মারাত্মকভাবে পথভ্রষ্ট হয়ে পড়বে। ’ (সুরা নিসা, আয়াত : ১৩৬)
ফেরেশতাদের সম্মানের কথা উল্লেখ করে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘(এ কোরআন) মহান, পূত-পবিত্র লিপিকরের ( ফেরেশতার) হাতে লিপিবদ্ধ। ’ (সুরা আবাসা, আয়াত : ১৫-১৬)
ফেরেশতা সৃষ্টির ব্যাপারে হাদিস শরিফে এসেছে, ‘ফেরেশতাদের সৃষ্টি করা হয়েছে, আল্লাহর নুর বা ঐশী আলো থেকে। ’ (মুসলিম শরিফ, হাদিস নং : ২৯৯৬)
ফেরেশতাদের রূপ-বৈশিষ্ট্য
ফেরেশতাদের ডানা রয়েছে। অনায়াসে তারা যেখানে-সেখানে বিচরণ করতে পারেন। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘সব প্রশংসা আকাশ ও পৃথিবীর স্রষ্টা আল্লাহর, যিনি ফেরেশতাদের বার্তাবাহক করেন, যারা দুই দুই, তিন তিন বা চার চার পক্ষবিশিষ্ট। তিনি সৃষ্টিতে যা ইচ্ছা বৃদ্ধি করেন। আল্লাহ সব বিষয়ে সর্বশক্তিমান। (সুরা ফাতির, আয়াত : ০১)
ফেরেশতারা অত্যন্ত সুন্দর আকৃতির অধিকারী। মহান আল্লাহ হজরত জিবরাঈল (আ.) সম্পর্কে ইরশাদ করেছেন, ‘তাকে (হজরত মুহাম্মদ (সা.) শিখিয়েছে শক্তিশালী ও প্রজ্ঞাবান এমন একজন (ফেরেশতা), যে নিজে (সুন্দর আকৃতিতে) স্থির ছিল। ’ (সুরা নাজম, আয়াত : ৫-৬)
ফেরেশতাদের রূপ ও সৌন্দর্য উপমা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তাই হজরত ইউসুফ (আ.)-কে দেখে নারীরা বলেছিল, ‘…অদ্ভুত আল্লাহর মাহাত্ম্য! এ তো মানুষ নয়, এ তো এক মহিমান্বিত ফেরেশতা। ’ (সুরা : ইউসুফ, আয়াত : ৩১)
দায়িত্ব পালনে তাদের ক্লান্তি ও অবাধ্যতা নেই
সৃষ্টিগতভাবে ফেরেশতাদের আল্লাহর অবাধ্যতার শক্তি দেওয়া হয়নি। সর্বদা তারা আল্লাহর হুকুম পালন করেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘…তারা (ফেরেশতারা) তা অমান্য করে না, যা আল্লাহ তাদের আদেশ করেন। তারা যা করতে আদিষ্ট হয়, তা-ই করে। ’ (সুরা : তাহরিম, আয়াত : ৬)
নিজ নিজ দায়িত্ব পালনে কোনো ক্লান্তি-শ্রান্তি ও অবসাদ ফেরেশতাদের আসে না। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘…যারা তোমার প্রতিপালকের সামনে আছে, তারা তো দিন ও রাতে তার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে। তারা ক্লান্তি বোধ করে না। ’ (সুরা হামিম সিজদা, আয়াত : ৩৮)
তারা খুবই শৃঙ্খলাবদ্ধ থাকেন
ফেরেশতারা খুবই শৃঙ্খলাপরায়ণ। তাদের শৃঙ্খলা সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে, ‘(কিয়ামতের দিন) তোমার প্রতিপালক উপস্থিত হবেন। সারিবদ্ধভাবে ফেরেশতারাও (উপস্থিত হবেন)। ’ (সুরা : ফাজর, আয়াত : ২২)
তাদের রয়েছে বিভিন্ন দায়িত্ব ও কর্তব্য
আল্লাহ তাআলা ফেরেশতাদের কারো কারো নাম ও কর্ম সম্পর্কে আমাদের জানিয়েছেন। আর অবশিষ্টদের সম্পর্কে কেবল তিনিই জানেন। আল্লাহ তাদের দায়িত্বে বিভিন্ন কর্ম-দায়িত্ব অর্পণ করেছেন। একেক দলকে একেক কাজে নিয়োজিত করেছেন।