বন্ধ কূপে শুরুতেই গ্যাস মিলল ১৩ মিলিয়ন ঘনফুট
প্রায় এক যুগ বন্ধ থাকা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিতাস গ্যাস ফিল্ডের ১৪ নম্বর কূপ থেকে পুনরায় শুরু হয়েছে গ্যাস উত্তোলন। গতকাল মঙ্গলবার পরীক্ষামূলকভাবে কূপটি থেকে একদিনে প্রায় ১৩ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করেছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি-বাপেক্স।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শোয়েব দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ড কোম্পানি লিমিটেডের (বিজিএফসিএল) মালিকানাধীন কূপটি ২০২১ সালে বন্ধ হয়ে যায়। এরপর সেখানে ওয়ার্কওভার করে এ গ্যাসের সন্ধান মিলেছে। দু-এক দিনের মধ্যেই ক্লিনিং বা পরীক্ষামূলক উৎপাদন শেষে বাণিজ্যিকভাবে গ্যাস উত্তোলনের জন্য প্রস্তুত হবে। এরপর বিজিএফসিএল প্রসেস করে সুবিধামতো সময়ে শিগগির এ গ্যাস জাতীয় গ্রিডে বাণিজ্যিকভাবে সরবরাহ করবে বলে আশা করছি।’
তিনি আরও বলেন, যে স্তরে গ্যাস শেষ হয়ে গিয়েছিল তার ওপরের স্তর থেকে এ গ্যাস পাওয়া গেছে, যার অবস্থান ৩ হাজার ১৭ ফুট গভীরে।
গত মার্চ মাসের শেষদিকে বাপেক্সের রিগ বিজয়-১১-এর মাধ্যমে বন্ধ কূপটির ওয়ার্কওভার কার্যক্রম শুরু হয়। বাপেক্সের তরুণ মেধাবী অভিজ্ঞ খননবিদদের পরিশ্রমে এ কূপ থেকে গ্যাস উৎপাদন নিশ্চিত হয়েছে, যা দেশের বর্তমান জ¦ালানি সংকট মোকাবিলায় ভূমিকা রাখবে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
বর্তমানে বাপেক্সের চারটি কূপ খনন রিগ একসঙ্গে কৈলাশটিলা-৮, বেগমগঞ্জ-৪, রশিদপুর-৫, তিতাস-১৪ এ খনন ও ওয়ার্কওভারের কাজে নিয়োজিত আছে, যা বাপেক্সের ইতিহাসে এটি প্রথম।
প্রসঙ্গত, দেশের সবচেয়ে পুরনো তিতাস গ্যাস ফিল্ডের ২৩টি কূপ থেকে প্রতিদিন প্রায় ৩৯২ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়। তবে নানা কারণে চারটি কূপ বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে ২০০০ সালে খনন করা ২৯ দশমিক ৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন ১৪ নম্বর কূপটি থেকে গ্যাসের সঙ্গে অতিমাত্রায় পানি উঠতে থাকে।
একপর্যায়ে ২০২১ সালের ১ নভেম্বর ১৪ নম্বর কূপটি থেকে গ্যাস উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ ছাড়া অন্য গ্যাস ফিল্ডগুলোর বেশ কয়েকটি কূপ দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে।
গ্যাসের উৎপাদন বাড়াতে দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্ধ থাকা সাতটি গ্যাস কূপ ওয়ার্কওভারে ৫২৩ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে বিজিএফসিএল। এর মধ্যে চারটি কূপের ওয়ার্কওভার কাজ করবে বাপেক্স। আর দ্রুত গ্যাস উত্তোলনের স্বার্থে অন্য কূপগুলোর ওয়ার্কওভার কাজ করবে বিদেশি প্রতিষ্ঠান।
প্রায় ৫৫ বছরে তিতাস গ্যাস ফিল্ডের কূপগুলো থেকে প্রায় সাড়ে পাঁচ টিএসএফ গ্যাস উত্তোলন করা হয়েছে। তবে কূপগুলোতে গ্যাসের চাপ কমে যাওয়ায় উৎপাদনও কমছে। চাপ স্বাভাবিক রাখতে কয়েকটি কূপে ওয়েলহেড কম্প্রেশর স্থাপন করা হয়েছে। বন্ধ কূপগুলোর ওয়ার্কওভার শেষ হলে বিজিএফসিএলের গ্যাস ফিল্ডগুলো থেকে গ্যাসের উৎপাদন আরও বাড়বে বলে আশা করছেন কর্মকর্তারা।