দেশজুড়ে

ঘূর্ণিঝড় রেমালে পাঁচ জেলায় ছয়জনের মৃত্যু

ঘূর্ণিঝড় রেমাল দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হানার পর এখন স্থল গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়টির তাণ্ডবে এখন পর্যন্ত দেশের পাঁচ জেলায় ছয়জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

উপকূলীয় এলাকায় রাতভর তাণ্ডব চালানো রেমালে বরিশালে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া ভোলা, চট্টগ্রাম, পটুয়াখালী ও সাতক্ষীরায় একজন করে মারা গেছেন। ঢাকা মেইলের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর।

ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে সৃষ্ট ঝড়-বৃষ্টিতে বরিশালের রুপাতলী এলাকায় একটি ভবনের ছাদের দেয়াল ধসে খাবারের হোটেলের টিনের ওপর পড়ে দুইজন নিহত হয়েছেন।

নিহতরা হলেন- লোকমান হোটেলের মালিক লোকমান ও কর্মী মোকসেদুর রহমান। এ ঘটনায় শাকিব নামে আরও এক হোটেলের কর্মী আহত হয়েছেন। তাকে বরিশাল শেরে-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

নগরীর ২৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সুলতান মাহমুদ বলেন, ভোরে লোকমান, মোকসেদুর ও শাকিব টিনশেডের তৈরি হোটেলের ভেতরে ঘুমিয়ে ছিলেন। এ সময় বাইরে ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে পাশের তিনতলা ভবনের ছাদের দেয়ালের কিছু অংশ ধসে হোটেলের টিনের চালে ওপর পড়লে ঘটনাস্থলেই দুইজন মারা যান।

চট্টগ্রাম নগরের বায়েজিদ থানাধীন টেক্সটাইল আবাসিক এলাকায় নির্মাণাধীন ভবনের দেয়াল ধসে সাইফুল ইসলাম হৃদয় (২৬) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। সকালে চন্দননগর বেলতলায় এ ঘটনা ঘটে।

ফায়ার সার্ভিসের বায়েজিদ বোস্তামী স্টেশনের কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, সকাল সাড়ে ৭টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের একটি টিম গিয়ে কাজ করে। এ ঘটনায় অন্য কেউ নিখোঁজ আছে কি না তা তল্লাশি চালিয়ে দেখা হচ্ছে।

ভোলায় ঘরচাপায় নারীর মৃত্যু

ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে ভোলায় ঘরচাপা পড়ে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। তার নাম মনেজা খাতুন (৫০)। সকালে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন লালমোহন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তৌহিদুল ইসলাম।

মনেজা খাতুন ভোলার লালমোহনের পশ্চিম চরউমেদ ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের চরউমেদ গ্রামের তেলী বাড়ির আব্দুল কাদেরের স্ত্রী।

স্থানীয়দের বরাতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, ওই নারী ও তার এক নাতি ঘরে ঘুমিয়েছিলেন। ভোর আনুমানিক ৪টার দিকে ঝড়ো বাতাসে টিনের ঘর ভেঙে চাপা পড়ে তিনি ঘটনাস্থলে মারা যান। তবে তার নাতির কোনো ক্ষতি হয়নি।

পটুয়াখালী ও সাতক্ষীরায় নিহত ২

পটুয়াখালীতে বোন ও ফুফুকে আশ্রয়কেন্দ্রে আনতে যাওয়ার সময় পানির তোড়ে ভেসে মারা গেছেন মো. শরীফ হাওলাদার নামে এক যুবক। ঘূর্ণিঝড়ে প্রাণ ঝরেছে আরও এক বয়স্ক ব্যক্তির। নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার সময় সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায় মারা যান শওকাত মোড়ল নামে ৬৫ বছর বয়সী ওই বৃদ্ধ।

রোববার দুপুরে কলাপাড়া উপজেলার ধূলাসর ইউনিয়নের কাউয়ারচর এলাকায় তলিয়ে যাওয়া সড়ক সাঁতার কেটে পার হতে গেলে স্রোতের তোড়ে ভেসে যান শরীফ হাওলাদার। এক ঘণ্টা পর ওই স্থান থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করেন স্থানীয়রা।

নিহত শরীফ ওই ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের অনন্তপাড়া এলাকার আবদুর রহিম হাওলাদারের ছেলে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রবিউল বলেন, শরীফের ফুফু কাউয়ারচর এলাকায় বসবাস করেন। ওই বাড়িতে তার বোনও ছিল। দুপুরের দিকে শরীফ তার বড় ভাই ও ফুফাকে নিয়ে বোন এবং ফুফুকে উদ্ধার করতে যায়। পথে বেড়িবাঁধের বাইরে একটি গ্রামীণ সড়ক পানিতে তলিয়ে গিয়েছিল। শরীফ সাঁতার কেটে সড়কটি পার হয়ে ফুফুর ঘরে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু ঢেউয়ের তোড়ে তিনি হারিয়ে যান।

অন্যদিকে ঘূর্ণিঝড় থেকে বাঁচতে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে যাওয়ার সময় সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায় পথে শওকাত মোড়ল নামে ওই বৃদ্ধের মৃত্যু হয়।

শ্যামনগর থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ বলেন, ঘূর্ণিঝড়কে কেন্দ্র করে নাপিতখালী গ্রামে খোলা আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার সময় তার মৃত্যু হয়েছে। হয়ত হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d