ফিলিস্তিনে হত্যাযজ্ঞ নিছক গণহত্যা নয়, মানবতা বিরোধী জঘন্য অপরাধ
ফিলিস্তিনে ইসরাইলের বর্বর গণহত্যা প্রতিবাদে সমাবেশ করেছে প্রগতিশীল রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন।
শনিবার (১ জুন) বিকেলে নগরীর চেরাগী পাহাড় মোড়ে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
এসময় বক্তারা বলেন, মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের মদদে, তাদের দেওয়া অর্থ আর অস্ত্রে ফিলিস্তিনে যে হত্যাযজ্ঞ ইসরাইলি দখলদার বাহিনী চালাচ্ছে, এটা নিছক গণহত্যা নয়। এটা মানবতার বিরুদ্ধে জঘন্যতম অপরাধ।
গত আট মাসে ৩৬ হাজার মানুষকে ইসরাইলিরা হত্যা করেছে। আর তাদের দোসর আমেরিকা নানা ছলাকলায়, কথার জাল বুনে এ অপরাধকে বৈধতা দিচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যে অশান্তি তৈরি করে সাম্রাজ্যবাদের বিস্তার ঘটানোই আমেরিকা-ইসরাইলের কৌশল। এ দুই দেশকে মানবতার শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করে বিশ্বের সকল বিবেকমান মানুষকে তাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। বিশ্বের সকল শান্তিকামী রাষ্ট্রকে যুদ্ধবাজ আমেরিকা-ইসরাইলের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে। বাংলাদেশকেও ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী জনতার পাশে দাঁড়াতে হবে রাষ্ট্রীয়ভাবে।
খেলাঘরের কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদারের সভাপতিত্বে ও সাংবাদিক রমেন দাশগুপ্তের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, কথাসাহিত্যিক-সাংবাদিক বিশ্বজিৎ চৌধুরী, নারীনেত্রী নূরজাহান খান, উদীচী চট্টগ্রাম জেলা সংসদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডা. চন্দন দাশ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি অধ্যাপক অশোক সাহা ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, সিপিবি দক্ষিণ জেলার সভাপতি অধ্যাপক কানাই দাশ, ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র চট্টগ্রাম জেলার আইন বিষয়ক সম্পাদক নুরুচ্ছাফা ভূঁইয়া, বোধন আবৃত্তি পরিষদের সভাপতি আবদুল হালিম দোভাষ, খেলাঘর কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য রথীন সেন, রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী সংস্থার সভাপতি লাকী দাশ, নজরুল সঙ্গীত শিল্পী সংস্থার সাধারণ সম্পাদক দীপেন চৌধুরী, ছড়াকার অধ্যাপক অ্যালেক্স আলীম, খেলাঘর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য দিলীপ দাশ, ন্যাপ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মিটুল দাশ গুপ্ত, বাংলাদেশ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক দেবপ্রিয় বড়ুয়া অয়ন, চট্টগ্রাম জেলা যুব ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক রাশিদুল সামির, চট্টগ্রাম জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি টিকলু কুমার দে, অগ্নিবীণা পাঠাগারের সাধারণ সম্পাদক সানি চৌধুরী এবং মুক্তধারা পাঠাগারের সংগঠক হামিদ উদ্দিন।
সভাপতির বক্তব্যে খেলাঘর কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার বলেন, ১৯৪৮ সালে ইসরাইল নামে এ লাঠিয়াল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর মধ্যপ্রাচ্যে সাম্রাজ্যবাদের শেকড় বিস্তৃত হয়েছে। আরব রাষ্ট্রগুলোতে যখন গাদ্দাফি বা সাদ্দাম হোসেনের মতো শাসক যারা সাম্রাজ্যবাদকে নির্দ্বিধায় কুর্নিশ করে না, তাদের মিথ্যা অজুহাত দেখিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তেমনি ভাবে আমেরিকা হামাসের মতো একটি সংগঠন জম্ম দিয়ে তাদের মাধ্যমে উসকানি সৃষ্টি করে মধ্যপ্রাচ্যে অশান্তি সৃষ্টি করার এবং মধ্যেপ্রাচ্যেকে ক্রমাগতভাবে সাম্রাজ্যবাদের নখরের মধ্যে আটকে রাখার পরিস্থিতি সৃষ্টির পাঁয়তারা করে চলেছে।
চট্টগ্রাম জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি অশোক সাহা বলেন, সাত দশক ধরে প্যালেস্টাইনের জনগণ যে জাতীয় মুক্তিসংগ্রাম করছে সেটাকে টুটি টিপে হত্যা করার শেষ আয়োজন চলছে গাজায়। এ ইসরাইলি জায়নবাদ আমেরিকার দালালরা দীর্ঘকাল ধরে প্যালেস্টাইনের লাখ লাখ মানুষ খুন করেছে। তারাই চক্রান্ত করে প্যালেস্টাইনের অবিসংবাদিত নেতা ইয়াসির আরাফাতকে খুন করেছে।
সাংবাদিক ও কথাসাহিত্যিক বিশ্বজিৎ চৌধুরী বলেন, ইসরাইলের ইহুদিরাও বিভিন্ন দেশে আজ ফিলিস্তিনে বর্বর গণহত্যার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে। এ যে মনোভাব একজন ইসরাইলি ইহুদির সে মনোভাব আজ সারা পৃথিবীর প্রত্যেকটি মানুষের। সাম্রাজ্যবাদী ক্ষমতাসীনেরা কারও কথা শুনে না। তারা পৃথিবীর প্রতিটি প্রান্তে যুদ্ধকে ছড়িয়ে রেখেছে। গাজায়ও তাদের অস্ত্রের ঝনঝনি আমরা শুনতে পায়। আমাদের এ প্রতিবাদ পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের প্রতিবাদের সঙ্গে একাকার হয়ে যাক।
নারীনেত্রী নূরজাহান খান বলেন, ফিলিস্তিনে যে গণহত্যা চালানো হচ্ছে সেটা অমানবিকতার শীর্ষ পর্যায়ে। পৃথিবীর অনেক দেশই এ বর্বর হত্যাযজ্ঞের বিরোধিতা করেছে। ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। আমরাও ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী জনতার পাশে আছি।
উদীচী চট্টগ্রাম জেলার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডা. চন্দন দাশ বলেন, ফিলিস্তিনে গণহত্যা আজ একদিন ধরে চলছে না। দীর্ঘদিন ধরে ইসরাইল এ হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে আসছে। গাজা থেকে হামাসের পক্ষ থেকে যে হামলা চালানো হয়েছে সেটা একটি মার্কিনীদের কৌশল। এ হামলাকে কেন্দ্র করে আজ সেখানে বর্বর গণহত্যা চালাচ্ছে ইসরাইল। শান্তিপ্রিয় মানুষ হিসেবে এটাকে কেউই মেনে নেবে না। গাজা আজ শিশুদের কবরে পরিণত হয়েছে।