চট্টগ্রামবন্দর

বন্দরের এক্স-ওয়াই শেডকে ‘ওয়্যারহাউস স্টেশন’ ঘোষণা

চট্টগ্রাম বন্দরের অভ্যন্তরে কনটেইনার খুলে পণ্য খালাসের প্রচলিত প্রথা বন্ধে গৃহীত উদ্যোগে দেরিতে হলেও সাড়া দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এবার এলসিএল (একই কনটেইনারে একাধিক আমদানিকারকের পণ্য) পণ্য বন্দরের বাইরে থেকে খালাসের জন্য প্রস্তুত করা বন্দর স্টেডিয়াম সংলগ্ন এক্স ও ওয়াই শেডের ১৫ দশমিক ৪১ একর জায়গাকে ‘ওয়্যারহাউস স্টেশন’ ঘোষণা করেছে এনবিআর।

গত ১৭ মে এনবিআর থেকে নগরীর বন্দর থানাধীন মধ্যম হালিশহর মৌজার ১৫ দশমিক ৪১ একর জায়গাকে দুটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে (নং-২৩/২০২৪/কাস্টমস ও নং-২৪/২০২৪/কাস্টমস) ওয়্যারহাউস স্টেশন ও পণ্য লোড-আনলোডের জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

তবে এখানে কার্যক্রম শুরু করতে হলে আরো কিছু ধাপ বাকি রয়েছে, যা শেষ করে অপারেশন শুরু করতে অন্তত দুই মাস সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন এক্স-ওয়াই শেডে কাজের জন্য বন্দর মনোনীত বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বে-কার্গো সেন্টার।

প্রতিষ্ঠানটির মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন) কাজী আশিক আহমেদ পূর্বকোণকে বলেন, অবশেষে এক্স-ওয়াই শেড ব্যবহারের জন্য এনবিআর থেকে প্রজ্ঞাপন আকারে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এখন চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস থেকে শীঘ্রই একটি অফিসিয়াল অনুমোদন দেওয়া হবে। আর বন্দর কর্তৃপক্ষের সাথে বে কার্গো সেন্টারের একটি অপারেশনাল চুক্তি হবে। এরই মধ্যে আমরা এলসিএল কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের জন্য কনটেইনার রিচ স্ট্যাকার ও পণ্য বোঝাইয়ের ফ্রক লিফট নিয়ে আসবো। এসব প্রক্রিয়া শেষ করতে আরো অন্তত দুই মাস সময় লাগবে।

উল্লেখ্য, বন্দরের চার নম্বর গেট থেকে প্রায় ২ কিলোমিটার দূরে বন্দর স্টেডিয়াম সংলগ্ন পুরাতন এক্স এবং ওয়াই নামের দুটি শেডকে নতুন করে সাজানো হয়েছে। সেখান থেকেই এলসিএল কার্গোর পণ্য খালাস হবে। ইতিমধ্যে শেডগুলো পণ্য আনস্টাফিংয়ের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত হয়েছে। তৈরি হয়েছে ডেলিভারি ইয়ার্ড।

এদিকে, এক্স ওয়াই শেড থেকে ডেলিভারি কার্যক্রম শুরু করতে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে বন্ড লাইসেন্সের আবেদন করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। এর প্রেক্ষিতে বিভিন্ন স্টেক হোল্ডারদের সাথে বৈঠক করে কাস্টম হাউস কর্তৃপক্ষ। দ্বিতীয় দফায় গত ডিসেম্বরে আবারও আবেদন করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। সেই আবেদনে সায় দেয় এনবিআর।

ওই এক্স ওয়াই শেড উন্নয়ন ও পরিচালনার জন্য চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ২০২২ সালের ৮ সেপ্টেম্বর বে কার্গো সেন্টার নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পাঁচ বছরের চুক্তি করে। চুক্তির পরপরই শেড দুটি সংস্কারের কাজ শুরু করা হয়। শেডগুলো এখন অপারেশনের জন্য প্রস্তুত। এছাড়া, সড়ক ও ইয়ার্ড নির্মাণ কাজও শেষ হয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটির মতে, বন্দর কর্তৃপক্ষ কনটেইনার হ্যান্ডলিং ও পণ্য খালাস সংক্রান্ত কাজে

পাঁচ একর জমির ওপরে এক্স ও ওয়াই শেড দুটির আয়তন ১৮ হাজার ৯০৬ বর্গমিটার। বন্দরের বর্তমান ট্যারিফ অনুযায়ী এ থেকে ভাড়া আদায় করা হবে বলে জানিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এমনকি বন্দরের ভেতর যে ট্যারিফে এলসিএল পণ্য খালাস হয়, একই ট্যারিফ এক্স ও ওয়াই শেডও প্রযোজ্য হবে বলে জানিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।

চট্টগ্রাম বন্দর থেকে প্রতিদিন গড়ে ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার পণ্যবাহী কনটেইনার ডেলিভারি হয়। যার প্রায় ১০ শতাংশ পণ্য থাকে এলসিএল কনটেইনারের। প্রতিটি এলসিএল কনটেইনারে থাকে একাধিক আমদানিকারকের পণ্য। যা বন্দরের অভ্যন্তরে খুলে বিভিন্ন শেডে রাখা হয়। সেখান থেকে ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানে করে ডেলিভারি করা হয়।

এছাড়া, চট্টগ্রাম বন্দর ২০০৪ সাল থেকে আইএসপিএস (ইন্টারন্যাশনাল শিপ এন্ড পোর্ট ফ্যাসিলিটি সিকিউরিটি) কোড বাস্তবায়ন করে আসছে। এই কোড বাস্তবায়নে ইউএস কোস্ট গার্ডের প্রতিনিধিদলের একাধিক পরিদর্শনে বন্দরের ডেলিভারি কার্যক্রম বন্দরের বাইরে সরানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। আইএসপিএস কোড বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে ডেলিভারি কার্যক্রম সরানোর উদ্যোগ নেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d