বান্দরবানেও বেনজীরের কোটি টাকার সম্পত্তি
সাম্প্রতিক সময়ে দেশে আলোচিত পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদের কয়েক কোটি টাকার সম্পদের খোঁজ পাওয়া গেছে বান্দরবানেও।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বান্দরবানের সুয়ালক মৌজা এবং লামার ডলুছড়ি মৌজায় বেনজীর আহমেদ, তাঁর স্ত্রী ও মেয়ের নামে রয়েছে অন্তত ৮০ একর জায়গা। এর মধ্যে বিভিন্ন ফলজ-ফলদ, মাছের প্রজেক্ট, গরুর খামার ও রেস্টরুমসহ প্রায় কয়েক কোটি টাকার সম্পত্তি। যা স্থানীয়দের কাছে ‘এসপির জায়গা’ হিসেবে পরিচিত।
এদিকে বেশ কয়েকদিন আগে বান্দরবান সদরের সুয়ালক এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বিশাল এলাকাজুড়ে গড়ে তোলা হয়েছে মাছের প্রজেক্ট ও গরুর খামার। তার এ জায়গাটি যেতে সরকারিভাবে নির্মাণ করা হয়েছে রাস্তা। নেয়া হয়েছে বৈদ্যুতিক লাইনও। রয়েছে অবকাশ যাপনের জন্য দোতলা রেস্টহাউজ।
সেখানে গড়ে তোলা গরুর খামারের দায়িত্বে থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুই কর্মচারী জানান, এটি বেনজীর আহমেদের জায়গা হলেও দেখা শোনার দায়িত্বে রয়েছে বান্দরবান পৌর এলাকার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মি দো মং মারমার ছেলে ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মং ওয়াই চিং মারমা।
জায়গার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা এক নারী কেয়ারটেকার জানান, এ জায়গাটি এসপির জায়গা হিসেবেই পরিচিত সকলের কাছে। তবে কাগজপত্রে রয়েছে বেনজীর আহমেদ, তার স্ত্রী ও কন্যার নাম।
জানা গেছে, ২০১৬ সালে বেনজীর আহমেদ, তাঁর স্ত্রী জীশান মির্জা ও মেয়ে ফারহীন রিশতা বিনতে বেনজীরের নামে ৩১৪ নম্বর সুয়ালক মৌজায় ৬১৪ নম্বর দাগে ও ৩ নম্বর সিটে ২৫ একর জায়গা লিজ নিয়েছিলেন বান্দরবান পৌর এলাকার মধ্যমপাড়ার আবুল কাশেমের ছেলে শাহ জাহানের কাছ থেকে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ‘এসব জায়গায় একসময় অসহায় পরিবারের বসবাস থাকলেও ক্ষমতার জোরে নামমাত্র মূল্যে জমিগুলো বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছে।’
অভিযোগ আছে, এসব জমি ক্রয় করতে সহযোগিতা করেছেন বান্দরবান জেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মং ওয়াই চিং মারমা।
শনিবার (১ জুন) সরেজমিনে লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নের ডলুছড়ি মৌজার টংগ ঝিরিতে গিয়ে দেখা যায়, বেনজীর আহমদের সেখানেও রয়েছে আরো ৫৫ একর জায়গা। যেখানে একসময় অসহায় ও গরিব পরিবারের বসবাস ছিল। চাষাবাদের মাধ্যমে আয়ের একমাত্র উৎস ছিল এ জায়গাগুলোই। অথচ এসব অসহায় ও গরিব পরিবারগুলোকে টাকার লোভ দেখিয়ে জোরপূর্বক অল্প টাকা দিয়ে উচ্ছেদ করে সরে যেতে বাধ্য করা হয়।
টংগঝিরি পাড়ার সাবেক ইউপি সদস্য পাইসা প্রু ত্রিপুরা বলেন, ‘আমার এলাকায় বেনজীর আহমেদের ৫৫ একর জায়গা রয়েছে। এ জায়গাগুলোতে একসময় অসহায় পরিবারের বসবাস থাকলেও বর্তমানে জায়গাগুলো বেনজীর আহমেদের জায়গা হয়ে গেছে, আর আমরা এখন অসহায়।’
একই পাড়ার বাসিন্দা এরমনি ত্রিপুরা নামে আরেক ব্যক্তি বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ আর ‘এসপি’ (আইজিপি বেনজির) তাদের অনেক টাকা। তাই বাধ্য হয়ে আমরা জায়গাগুলো ছেড়ে দিয়েছি। কিন্তু জায়গাগুলো হারিয়ে এখন অনেক কষ্টের মধ্যে দিন যাচ্ছে আমাদের।’
কেউ জানতে চাইলে জায়গার ব্যাপারে কাউকে মুখ না খোলার জন্য প্রতিনিয়ত হুমকি আসছে বলেও জানান তিনি।
বান্দরবান সুয়ালক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান উ ক্য নু মারমা বলেন, ‘বেনজীর আহমেদের সুয়ালক মৌজার মাঝের পাড়ার জায়গাটি জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মং ওয়াই চিং দেখাশুনা করে। মাঝে মাঝে একজন এসপিও এখানে আসেন। তবে তার নাম জানি না।’
তিনি আরো বলেন, ‘বেনজীর আহমেদ জায়গাগুলো কিভাবে নিয়েছেন তা আমি জানি না। তিনি জায়গাগুলো উদ্ধার করে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের ফিরিয়ে দেবার দাবি জানান সরকারের কাছে।’
এদিকে, এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মং ওয়াই চিং। তিনি বলেন, ‘সুয়ালকের মাঝের পাড়ায় বেনজীর আহমেদের জায়গার পাশে আমার কিছু জায়গা আছে। সে সুবাদে এক পুলিশ কর্মকর্তার অনুরোধে আমি বেনজীর আহমেদের জায়গাগুলো দেখাশুনা করি।’ তবে লামার ডলুছড়ির টংগ ঝিরির জায়গা দখলের বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘ডলুছড়ি মৌজার জায়গার ব্যাপারে আমি কিছু জানিনা।’
বান্দরবান জেলা প্রশাসক শাহ্ মোজাহিদ উদ্দিন বলেন, ‘বান্দরবানে বেনজীর আহমেদের লিজের জায়গা যদি থাকে তবে সেটি আমি আসার আগেই হতে পারে। অভিযোগের বিষয়ে বিস্তারিত খবর নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’