শরিকদের কেউ টাকা কম দিলে কোরবানি হবে?
একনিষ্ঠ চিত্তে আল্লাহর জন্য যেসব ইবাদত করা হয় তার অন্যতম একটি হলো কোরবানি। ঈদুল আজহার দিন মানুষ পশু জবাই করলেও এর মাধ্যমে উদ্দেশ্য থাকে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন।
পশুর গোশত খাওয়া কোনো মুমিন ব্যক্তির উদ্দেশ্য নয়। আল্লাহর কাছে কোরবানির পশুর রক্ত মাংস কিছুই পৌঁছায় না, তার কাছে মানুষের তাকওয়া ও খোদাভীতি পৌঁছায়। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে,
لَنۡ یَّنَالَ اللّٰهَ لُحُوۡمُهَا وَ لَا دِمَآؤُهَا وَ لٰکِنۡ یَّنَالُهُ التَّقۡوٰی مِنۡکُمۡ ؕ کَذٰلِکَ سَخَّرَهَا لَکُمۡ لِتُکَبِّرُوا اللّٰهَ عَلٰی مَا هَدٰىکُمۡ ؕ وَ بَشِّرِ الۡمُحۡسِنِیۡنَ
আল্লাহর কাছে পৌছায় না সেগুলোর গোশত এবং রক্ত, বরং তার কাছে পৌছায় তোমাদের তাকওয়া। এভাবেই তিনি এদেরকে তোমাদের বশীভূত করে দিয়েছেন যাতে তোমরা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা কর এজন্য যে, তিনি তোমাদেরকে হেদায়াত করেছেন; কাজেই আপনি সুসংবাদ দিন সৎকর্মপরায়ণদেরকে। (সূরা হজ, আয়াত : ৩৭)
আল্লাহর সন্তুষ্টি ও তাকওয়া অর্জনের জন্য সামর্থ্যবান মুসলমানেরা পশু কোরবানি করেন। কেউ একাকী আবার অনেকে কয়েকজন মিলে ভাগ ও শরিকানায় পশু কোরবানি করেন।
শরিকানায় কোরবানির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সংখ্যা সাত হতে পারে। এর থেকে বেশি মানুষ একসঙ্গে কোরবানি করার বিধান নেই। আর যারা একসঙ্গে মিলে শরিকানায় কোরবানি দেবেন, তাদের সবার অর্থ-সম্পদ স্বচ্ছ হতে হবে। এবং গোশত খাওয়ার নিয়তে কোরবানি করা যাবে না। এজন্য শরিকানায় কোরবানির আগে এসব বিষয় যাচাই-বাছাই করে নিতে হবে।
শরিকানায় কোরবানি করলে সাধারণত সবাই সমান টাকা দিয়ে থাকেন। তবে কখনো যদি কোনো শরিকের সম্পদের পরিমাণ কম থাকে এবং অন্য শরিকদের কেউ তার পক্ষ থেকে টাকা দিয়ে দেয়, তাহলে কোরবানি হবে কি না— এ নিয়ে সন্দেহ এবং ইসলামি বিধান জানতে চান অনেকেই।
যেমন একজন জানতে চেয়ে প্রশ্ন করেছেন—
`আমরা সহোদর তিনভাই মিলে প্রতি বছর একটি গরু কোরবানি করি। বড় ভাই এক ভাগ আর আমরা দুই ভাই তিন অংশ করে মোট ছয় ভাগ নিয়েছি। আমরা দুই ভাই সমান সমান টাকা দিয়ে অংশগ্রহণ করি। কিন্তু বড়ভাই আমাদের মধ্যে তুলনামূলক অসচ্ছল হওয়ায় তিনি তার অংশের পুরো টাকা দেন না’।
‘আমরা দুই ভাই বলেছি, ‘আপনি যা পারেন দেন, বাকিটা আমরা দুজনে দিয়ে দিব। অবশ্য গোশত সকলের অংশ হারেই বণ্টন করা হয়। টাকা কম-বেশির কারণে তাতে ব্যবধান করা হয় না; বরং ধরে নেওয়া হয় যে, আমরা ছোট দুই ভাই বড় ভাইয়ের টাকার আংশিক আদায় করে দিই’।
‘জানতে চাই, উল্লেখিত পদ্ধতিতে আমাদের কোরবানি বিশুদ্ধ হচ্ছে কি না’?
এমন পরিস্থিতির ক্ষেত্রে ইসলামি আইন ও ফেকাহশাস্ত্রবিদদের সমাধান হলো—
এমন পরিস্থিতির ক্ষেত্রে কোরবানি বিশুদ্ধ হবে। গরু-মহিষে শরিকে কোরবানি দেওয়ার জন্য শর্ত হল, কারো অংশ এক সপ্তমাংশের কম না হওয়া। প্রশ্নোক্ত অবস্থায় বড় ভাই যদিও তার অংশের চেয়ে কম দিচ্ছেন কিন্তু অন্য দুই ভাই তার অংশের বাকিটা দিয়ে দিবেন বলে উল্লেখ করেছেন। তাই বড় ভাইয়ের অংশ এক সপ্তমাংশের কম হয় না। তাই কোরবানি হয়ে যাবে।
(ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৬/২৯০; আল কাউসার অনলাইন, খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩১৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩০৫; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪৭৮)