আক্রমণের ঝড় তুলেও কষ্টে ইতালিকে হারাল স্পেন
মোরাতা-ইয়ামাল-উইলিয়ামসদের ঝড়ের মুখে উড়ে যাওয়ার অবস্থা হলো ইতালির। আক্রমণের ঝাপটা সামলাতে গিয়ে পাল্টা আক্রমণে মাঝমাঠই তেমন পার হতে পারছিল না তারা। প্রথমার্ধে কোনোমতে জাল অক্ষত রাখতে পারলেও, বিরতির পর আর পারল না লুসিয়ানো স্পালেত্তির দল। গতবারের চ্যাম্পিয়নদের হারিয়ে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের নকআউট পর্বে জায়গা করে নিল স্পেন।
জার্মানির পশ্চিমের শহর গেলসেনকিরশেন বৃহস্পতিবার রাতে ‘বি’ গ্রুপের ম্যাচে ১-০ গোলে জিতেছে লুইস দে লা ফুয়েন্তের দল। আত্মঘাতী গোলটি করেন রিকার্দো কালাফিওরি।
স্কোরলাইন দেখে একেবারেই ম্যাচের পরিস্থিতি বোঝার উপায় নেই। দ্বিতীয়ার্ধে কিছু সময় বাদে পুরো ম্যাচেই রক্ষণে ব্যস্ত সময় কাটাতে হয় ইতালিকে। ৫৫ শতাংশের বেশি সময় বল দখলে রেখে স্পেন যেখানে গোলের জন্য ২০টি শট নিয়ে ৯টি লক্ষ্যে রাখে, সেখানে ইতালি শটই নিতে পারে মাত্র চারটি। অবশ্য ইতালিয়ানদের এই শটগুলো প্রতিপক্ষকে খুব যে ভাবাতে পেরেছে, তাও নয়।
দুই ম্যাচে দুই জয়ে ৬ পয়েন্ট নিয়ে ‘বি’ গ্রুপের শীর্ষে স্পেন। ৩ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে ইতালি। আলবেনিয়া ও ক্রোয়েশিয়ার পয়েন্ট ১ করে।
বদলে যাওয়া স্পেনের ভয়ঙ্কর রূপ আগেই দেখেছে ক্রোয়েশিয়া। ইতালির বিপক্ষেও তাদের আক্রমণের তীব্রতার দেখা মিলতে শুরু করে শুরুতেই। দ্বিতীয় মিনিটে এগিয়ে যাওয়ার সুবর্ণ সুযোগ পেয়ে যায় দলটি, পেদ্রির হেডে কোনোমতো এক হাত দিয়ে বল ক্রসবারের ওপর দিয়ে বাইরে পাঠান জানলুইজি দোন্নারুম্মা।
তিনবারের ইউরোপ চ্যাম্পিয়নরা দশম মিনিটে আরেকটি দারুণ সুযোগ তৈরি করে; কিন্তু এবার হেড লক্ষ্যেই রাখতে পারেননি নিকো উইলিয়ামস। খানিক পর আলভারো মোরাতার শট রক্ষণে প্রতিহত হয়।
চার দিন আগে সবচেয়ে কম বয়সে ইউরোয় খেলতে নেমে রেকর্ড গড়া এবং দারুণ পারফরম্যান্সে নজর কাড়া লামিনে ইয়ামাল ২৫তম মিনিটে চমৎকার নৈপুণ্য দেখান। বল পায়ে এঁকেবেঁকে প্রতিপক্ষের অনেক খেলোয়াড়ের মধ্যে দিয়ে এগিয়ে ঢুকে পড়েন বক্সে। সেখানে তিনি পজেশন হারালেও বল পান মোরাতা, এই অভিজ্ঞ স্ট্রাইকারও ড্রিবল করে আরেকটু এগিয়ে দুরূহ কোণ থেকে দোন্নারুম্মা বরাবর শট নেন।
প্রতিপক্ষের আগ্রাসী ফুটবলের সামনে প্রথমার্ধে একদমই সুবিধা করতে পারেনি ইতালি। এই সময়ে তারা কয়েকবার পাল্টা আক্রমণে উঠলেও, স্প্যানিশদের রক্ষণের শেষ বাধাও পার হতে পারেনি তারা। বিরতির ঠিক আগে দূর থেকে গোলের উদ্দেশ্যে নিজেদের প্রথম শটটি নেন নিকোলো বারেল্লা, যদিও সেটা লক্ষ্যের ধারেকাছেও ছিল না।
দ্বিতীয়ার্ধের ষষ্ঠ মিনিটে স্পেনের আরেকটি পরিষ্কার সুযোগ নষ্ট হয়; কুকুরেইয়ার কাটব্যাক পেনাল্টি স্পটের কাছে ফাঁকায় পেয়ে শট লক্ষ্যে রাখতে পারেননি পেদ্রি।
প্রতিপক্ষের মিনিটে মিনিটের আক্রমণ সামলাতে গিয়ে খানিক বাদে আত্মঘাতী হয়ে বসে ইতালি। ৫৫তম মিনিটে বাঁ দিক থেকে উইলিয়ামসের ক্রসে হেড করেন মোরাতা, দোন্নারুম্মা ঝাঁপিয়ে ঠেকানোর পর দূরের পোস্টে ছুটে আসা ডিফেন্ডার কালাফিওরির পায়ে লেগে বল যায় জালে।
তিন মিনিট পর দোন্নারুম্মার দুর্দান্ত সেভে ব্যবধান হয়নি দ্বিগুণ। মোরাতার বুলেট গতির শট লাফিয়ে এক হাত দিয়ে ফেরান পিএসজি গোলরক্ষক। ৭১তম মিনিটে উইলিয়ামসের জোরাল শট ক্রসবার কাঁপালে ঘুরে দাঁড়ানোর আশা বেঁচে থাকে ইতালির।
চার মিনিট যোগ করা সময়েও দারুণ দুটি আক্রমণ করে স্পেন। কিন্তু পুরো ম্যাচে দুর্দান্ত সব সেভ করা দোন্নারুম্মার বাধা এড়ানো যায়নি, উইলিয়ামসের বদলি হিসেবে প্রথমবারের মতো ইউরোয় খেলতে নামা আইওসে পেরেসের দুটি প্রচেষ্টা অসাধারণ নৈপুণ্যে রুখে দেন তারকা গোলরক্ষক।