স্বাস্থ্য

রাসেলস ভাইপারে কামড়ানো সেই কৃষক এখন সম্পূর্ণ সুস্থ

রাজশাহীতে গত মাসের শেষের দিন বিষধর সাপ রাসেলস ভাইপার হেফজুল আলী (৪৫) নামের এক কৃষককে কামড়েছিল। কামড়ে ভয় না পেয়ে পিটিয়ে মেরে সাপটি নিয়েই হাসপাতালে পৌঁছান তিনি।

চিকিৎসার জন্য তাকে আইসিইউতেও থাকতে হয়েছিল। পরে সুস্থ হয়ে তিনি বাড়ি ফেরেন।
রোববার (২৩ জুন) সেই হেফজুল আবারও গিয়েছিলেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে। তবে চিকিৎসার জন্য নয়, পরিবার নিয়ে গিয়েছিলেন আইসিইউ ইনচার্জের সঙ্গে দেখা করতে।

রোববার রাতে নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে এ নিয়ে একটি পোস্ট দিয়েছেন রামেক হাসপাতালের আইসিইউ ইনচার্জ চিকিৎসক আবু হেনা মোস্তফা কামাল।

পোস্টে তিনি জানান, রাসেলস ভাইপারে আক্রান্ত রোগীরাও প্রাণে বাঁচেন এবং সুস্থ হন। হেফজুল তার দৃষ্টান্ত। তাই রাসেলস ভাইপার নিয়ে অহেতুক আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।

রাসেলস ভাইপারে কাটা ব্যক্তিকে দুই ঘণ্টার মধ্যেই হাসপাতালে নেওয়া গেলে চিকিৎসা সম্ভব। সেজন্য বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে মনে রাখার পরামর্শ দেন এ চিকিৎসক।

পোস্টে তিনি জানান, বাড়ি রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার (একটি) গ্রামে। পদ্মা নদী থেকে মিনিট তিনেকের পথ। গত ৩১ মে জমিতে ঘাস কাটার সময় একটি সাপ দেখতে পেয়ে নিজেই সাপটিকে আক্রমণ করে বসেন।

চিকিৎসক আরও জানান, নিচু হয়ে থাকায় ডান চোয়ালে (সাপটি) কামড় দিয়ে দেয়। তিনি সাপটি মেরে পলিথিন ব্যাগে করে একজনের মোটরসাইকেলে চেপে প্রথমে স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চলে আসেন।

তিনি লেখেন, কর্তব্যরত চিকিৎসক তাৎক্ষণিকভাবে আইসিইউতে অনুরোধ করায় ভর্তির ব্যবস্থা হয়েছিল। সাপের কামড় দেওয়া থেকে শুরু করে আইসিইউতে আসতে সময় লেগেছিল দেড় ঘণ্টা। মহান আল্লাহর দয়ায় এবং দ্রুত সময়ে আইসিইউতে আমরা নিয়মমাফিক চিকিৎসা দেওয়ায় তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যান।

চিকিৎসক আবু হেনা মোস্তফা কামাল পোস্টে আরও জানান, ২০১২ সাল থেকে রাসেলস ভাইপারে কামড়ানো অনেক রোগী রামেক হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসা পেয়েছেন। সাপে কামড়ানোর দুই ঘণ্টার মধ্যে যারা আসতে পেরেছেন, তাদের প্রায় সবাই সম্পূর্ণ সুস্থ হয়েছেন। তবে দেরিতে চিকিৎসা পাওয়া রোগীদের প্রায় সবারই ডায়ালাইসিস লেগেছে। আক্রান্ত স্থানে পচন ধরেছে।

তিনি লেখেন, ওঝারা যেন সাপে কাটা রোগীদের অতিদ্রুত হাসপাতালে পাঠানোর পরামর্শ দেন। রাসেলস ভাইপার সাপ নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে সঠিক তথ্য জানুন। আমরা যারা দীর্ঘদিন রাসেলস ভাইপারে কাটা রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছি, যারা প্রাণীবিদ্যা নিয়ে কাজ করছেন, সেই বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে সঠিক তথ্য জানুন।

চিকিৎসক লেখেন, রাসেলস ভাইপার নিজে আক্রান্ত না হলে সাধারণত কাউকে কামড় দেয় না। আমাদের আইসিইউতে ভর্তি রোগীরা এ তথ্য দিয়েছেন। ভয় পাওয়া বা ঘাবড়ানোর কিছু নেই। সাপে কামড়ানো যেকোনো রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে আনুন। নদী তীরবর্তী এবং চরাঞ্চলের কৃষক ভাইদের গামবুট পায়ে মাঠে কাজ করতে উৎসাহিত করুন। রাসেলস ভাইপারকে আক্রমণ বা বিরক্ত করবেন না। এ সাপেদের নিজের মতো থাকতে দিন, এতে আপনিও নিরাপদে থাকবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d