নগর আওয়ামী লীগ অফিসের আয়ু নেই
বয়সের ভারে ন্যুব্জ পুরো ভবন। ‘অন্ধকারাচ্ছন্ন’ কক্ষ। থমকে গেছে নেতাকর্মীদের পদচারণা। নেতার বাসভবন, থিয়েটার কিংবা কনভেশন হলই আশ্রয়স্থল চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের। ৭৫ বছর বয়সেও ‘ঘর’ করে উঠতে পারেনি ঐতিহ্যবাহী এ দলের শাখা ইউনিট। মিটিং, মিছিল, সভা-সমাবেশের পরিকল্পনা-প্রস্তুতি সবই হচ্ছে বাইরে বাইরে।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিন রবিবার (২৩ জুন) চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের অফিসে ঘুরে দেখা গেছে, দারুল ফজল মার্কেটের ২য় তলায় তালাবদ্ধ অবস্থায় পড়ে আছে দলটির শাখা অফিস। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত কোনো নেতাকর্মী বা দাপ্তরিক কাউকে অফিস বা ওই ভবনের আশপাশে দেখা যায়নি। জানা গেছে, ২০২২ সালের ১৭ জুনে ভবনটির একাংশ ভেঙে পড়ে একজন আহত হওয়ার পর থেকে মহানগর আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে কোনো নেতাকর্মী আসেন না। ভবনটিতে রয়েছে যুবলীগ, ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়ন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদসহ প্রগতিশীল বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের কার্যালয়ও।
দপ্তরের কর্মচারী আমির হাওলাদার বলেন, ‘এখনতো অফিসে কেউ আসেন না। সবধরনের কর্মসূচি বিভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠিত হয়। এবারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীও লালদীঘি ময়দানে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এখানে কোনো কর্মসূচি না থাকায় সবাই লালদীঘি চলে গেছেন।’
এ প্রসঙ্গে মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন বাবুল বলেন, ‘এখন খুব গরম তো, তাই আমাদের অফিসে কোনো কর্মসূচি রাখা হয় না। সম্প্রতি আমরা ছোটখাটো মিটিংগুলো মাহাতাব ভাই, নাছির ভাই ও আমার বাসায় করছি। আর বড় যেকোনো আয়োজন থিয়েটার ইনস্টিটিউট, কাজীর দেউড়ি আন্তর্জাতিক কনভেনশন হল বা এধরনের জায়গায় করছি। এবারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজনটা লালদীঘি ময়দানে করা হয়েছে।’
দাপ্তরিক অফিসের জীর্ণদশা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে যে অফিসটা আছে, ওটার অবস্থা খুবই নাজুক। ওটা চাইলে সংস্কার করা যায়। কিন্তু সমস্যা হলো জায়গাটি অর্পিত সম্পত্তি। এটা আমরা জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে ভাড়া নেওয়া। তবে এটিকে সংস্কার করে নতুন করে একটি দাপ্তরিক অফিস করার জন্য আমরা একটি পরিকল্পনা প্রস্তাবনা আকারে তৈরি করেছি। আমরা জেলা প্রশাসক, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও গণপূর্তসহ সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরে এ প্রস্তাবনা দিয়েছি।’
দলীয় কার্যালয় সংস্কার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দিন সিভয়েস২৪-কে বলেন, ‘আমরা একটি প্রস্তাবনা দিয়েছি। ওটা নিয়ে কিছুদিন আগেও সিডিএর চেয়ারম্যান মহোদয়ের সঙ্গে কথা হয়েছে। উনিও খুব আন্তরিকভাবে আমাদের দলীয় কার্যালয়ের সংস্কার কাজে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। কিন্তু ওখানে জায়গা নিয়ে বেশ কিছু জটিলতা আছে। এটি নিয়ে আমাদের মহিউদ্দিন ভাইও (এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী) অনেক চেষ্টা করেছেন।’
জটিলতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এখানে তো শুধু আমাদের দলীয় কার্যালয় না, কমিউনিস্ট পার্টি, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও অন্যান্য সংগঠনের কার্যালয় আছে। দোকানপাটও আছে। এটা নিয়ে কয়েকটি মামলাও আছে। আবার ভবনটিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়েরও একটা বিষয় আছে। তাই আমরা যে প্রস্তাবনা তৈরি করেছি, সেখানে ভবনটিকে হাই-রাইজ ভবন করার প্রস্তাব দিয়েছি। প্রস্তাবনায় বর্তমানে থাকা অফিসগুলোকে পুনর্বহাল করে, প্রয়োজনে তাদের অফিস আরও বড় করে দেওয়ার নিশ্চয়তা দিবো। এ নিয়ে লিখিত একটি প্রস্তাবনা তৈরি করে রেখেছি। কিছুদিন পরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত করবো। তখন এ প্রস্তাবনাটি উনাকে আমরা দিবো।’
উৎসবমুখর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন
পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী দলের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ রবিবার বিকেল সাড়ে ৩টায় ঐতিহাসিক লালদীঘি ময়দান থেকে বর্ণাঢ্য র্যালি বের করে। র্যালিতে নগরের ৪১টি ওয়ার্ড থেকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করেন। পাশাপাশি অংশগ্রহণ করেছেে সকল অঙ্গ সংগঠনও। আনন্দ ও উৎসবমুখর পরিবেশে লালদীঘি মাঠে আনন্দ র্যালি উদ্বোধন করা হয়। অনুষ্ঠানে যোগ দেয়া হাজার হাজার দলীয় ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের সহযোগে ব্যানার, ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ডসহ বাদ্যবাজনার মধ্য দিয়ে বিশাল র্যালিটি লালদীঘির মাঠ থেকে বেরিয়ে আন্দরকিল্লা, মোমিন রোড, বৌদ্ধ মন্দির, ডিসি হিল, টিএন্ডটি, জহুর মার্কেটের সামনে দিয়ে প্রদক্ষিণ করে আবার একই স্থানে ফিরে আসে।
পরে অনুষ্ঠিত সমাবেশে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহাতাব উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের ডাকে আমরা একটি স্বাধীন দেশ পেয়েছি। এখন বাংলাদেশে টানেল হচ্ছে, মেট্রোরেল হচ্ছে। উন্নয়নের সাক্ষর রাখছে বিভিন্ন অভূতপূর্ব অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে। এরপরও কেউ কেউ ষড়যন্ত্র করছে। আমাদের সবাইকে এ ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সজাগ থাকতে হবে।’
মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, ‘আজ থেকে ৭৫ বছর আগে এক কঠিন ক্রান্তিকালে আওয়ামী লীগের জন্ম হয়েছিল ঐতিহাসিক প্রয়োজনে। আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠার পর থেকে বাঙালির যা কিছু অর্জন ও সাফল্য তা আওয়ামী লীগের মুকুটে পালক হিসেবে গুচ্ছবদ্ধ হয়ে আছে। সাফল্যের এই পালকগুলো অগণিত নেতাকর্মীর ত্যাগ, পরিশ্রম ও নিষ্ঠা এবং দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রামের ফসল হিসেবে অর্জিত হয়েছে। তাই আওয়ামী লীগ বার বার কঠিন সময়কে জয় করে একটি দুর্জয় শক্তিতে পরিণত হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বহুমুখী বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ সংকটের মধ্যেও আওয়ামী লীগ দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ বিশ্বসভায় মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। আওয়ামী লীগ মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়ে স্বাধীনতা অর্জনসহ এ দেশের মানুষকে ভোট ও ভাতের অধিকার দিয়েছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পরিপূর্ণ অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এই অগ্রযাত্রা কেউ রুখতে পারবে না।’
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ একটি বহুমাত্রিক গণসংগঠন। এই সংগঠনের ঐক্যের ভিত্তি হলো সকল স্তরের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ শক্তি। বিভেদ ও বিভাজন পরিহার করে ঐক্যের শক্তিকে বলিয়ান করতে হবে।’
এতে আরও বক্তব্য রাখেন মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ, শফিক আদনান, চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনি, এডভোকেট শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, চন্দন ধর, মশিউর রহমান চৌধুরী প্রমুখ।