জাতীয়ধর্ম

হজে গিয়ে বাংলাদেশিদের মৃত্যুর কারণ

আর্থিক ও শারীরিকভাবে সামর্থ্যবান লোকদের ওপর হজ ফরজ হয়। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অনেকের ক্ষেত্রেই দেখা যায়, যুবক অবস্থায় তাদের ওপর হজ ফরজ হয়, কিন্তু হজ পালন করে বৃদ্ধাবস্থায়। তাদের কারো কারো দৃষ্টিভঙ্গি হলো, সারা জীবনে নিজেদের দ্বারা যত পাপ ও গুনাহের কাজ সংগঠিত হবে, শেষ জীবনে হজ করে সেসব গুনাহ থেকে মুক্ত হয়ে পরবর্তীতে ধর্মীয় কাজ করে জীবনের শেষ দিনগুলো অতিবাহিত করবেন।

এসব লোকদের উদ্দেশে কথা হলো, এমন চিন্তা-ভাবনা মোটেও ভালো নয়। এমন নিয়তে হজ করলে তা পরকালের জন্য ভালো ফল বয়ে আনবে না বরং এটা হলো পরকালের ক্ষতি। বয়স্কজনিত কারণে হজের কঠিন কিছু কাজ সম্পাদন করতে গিয়ে নানা বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে হয়। এছাড়া হজে গিয়ে প্রচণ্ড গরমের কারণেও অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। যা বয়স্কদের জন্য সহনীয় পর্যায়ে থাকে না। ফলে মৃত্যুসহ নানা ধরণের অসুখে আক্রান্ত হতে হয়। দেরিতে হজ করার ফলে ইহকালের এসব ক্ষতি হয়।

হজ পালনের জন্য শারীরিক যে সক্ষমতা প্রয়োজন তা বৃদ্ধাবস্থায় খুব বেশি থাকে না। অথচ হজের অন্যতম শর্ত হলো শারীরিকভাবে সক্ষমতা থাকা। বাংলাদেশ থেকে বয়স্ক ব্যক্তিরাই বেশি হজে যান। তরুণ বয়সে হজে যাওয়ার প্রবণতা খুবই কম। অথচ বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে তরুণ বয়সেই হজে যাওয়ার প্রবণতা বেশি। বয়স্করা হজে যাওয়ায় প্রতি বছরেই বার্ধক্যজনিত কারণে বাংলাদেশি হাজিদের মৃত্যু হয়। এ বছর হজে গিয়ে সর্বশেষ ২৪ জুন পর্যন্ত ৪৪ বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে পঞ্চাশোর্ধ্বই ৪০ জন। আর পঞ্চাশের নিচে চারজন। এই সমীকরণ থেকেও বিষয়টি স্পষ্ট যে, বয়সের ভারই বাংলাদেশি হজ যাত্রীদের মৃত্যুর অন্যতম কারণ। তাই হজ ফরজ হলে শেষ জীবনের আশায় না থেকে যুবক অবস্থাতেই হজ করা বাঞ্ছনীয়।

কারও ওপর যুবক অবস্থায় হজ ফরজ হওয়ার পর যদি সে নিয়ত করে বৃদ্ধ অবস্থায় হজ করবে, আর বৃদ্ধ হওয়ার আগেই যদি মারা যায় তাহলে ফরজ হজ আদায় না করার কারণে গুনাহগার হতে হবে। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তির বায়তুল্লাহর হজ করার মতো পাথেয় ও যানবাহন আছে অথচ হজ পালন করল না, সে ইহুদি কিংবা খ্রিস্টান হয়ে মারা গেল কি না, তা বলা যায় না।’ (তিরমিজি)

হজের বাধ্যবাধকতা সারাজীবনে মাত্র একবার। সামর্থ্যবান হওয়া মাত্রই একবারের বেশি যতবারই হজ করা হোক না কেন, তা নফল ইবাদতের মর্যাদা ছাড়া আর কিছু নয়। লোক দেখানো হিসেবে কোনো ব্যক্তি যদি বারবার হজে গমন করে, তবে তা নিছক ভ্রমণ হবে। ধর্মীয় অনুশাসনের সঙ্গে এর সম্পর্ক নেই। তবে যাদের ওপর হজ ফরজ তাদের উচিত হলো, এ ফরজ অতিদ্রুত আদায় করে নেওয়া।

হজ ইসলামের অন্যতম মৌলিক স্তম্ভ। যা আর্থিক সচ্ছলতার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। আমাদের সমাজে হজে যাওয়ার মতো আর্থিক সামর্থ্যবান অসংখ্য মানুষ আছেন। তাদের অনেকেই সারাজীবন ব্যবসা-বাণিজ্য, রাজনীতি ও নানাবিধ কর্মব্যস্ততায় কাটিয়ে দেন। গোটা জীবনে হজের জন্য একটি মাস বরাদ্দ করতে পারেন না। এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

হজ আদায়ের ক্ষেত্রে ইসলামি স্কলারদের পরামর্শ হলো, আপনার সামর্থ্য আছে আর্থিকভাবে, সুতরাং আর বিলম্ব নয়, এখনই হজ আদায় করে ফেলুন। প্রত্যেকের শারীরিকভাবে সামর্থ্য থাকা অবস্থায় এবং বৃদ্ধ হওয়ার আগেই হজে যাওয়া উচিত। কারণ হজের সফরে বেশ কষ্টসাধ্য কিছু আমল করতে হয়, যা শারীরিকভাবে সামর্থ্য না থাকলে কষ্টদায়ক বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। এছাড়া সৌদি আরবের উত্তপ্ত আবহাওয়াও বয়স্কদের জন্য সহনীয় পর্যায়ের নয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d