চট্টগ্রাম

প্রত্যাশিত অগ্রগতি নেই জঙ্গল সলিমপুর প্রকল্পের

জঙ্গল সলিমপুর। সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য হিসেবে পরিচিত। সরকারি পাহাড় কেটে গড়ে তোলা হয়েছে বিশাল এই অবৈধ সাম্রাজ্য। পাহাড়খেকো-দখলকারীদের উচ্ছেদ করে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসহ উন্নয়নের মহাপরিকল্পনা নিয়েছিল সরকার। জায়গা বরাদ্দ চেয়ে ৪৮ প্রতিষ্ঠান জেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন করেছিল।

২০২২ সালে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে নান্দনিক উপ-শহর গড়ে তোলার মহাপরিকল্পনা নিয়েছিল সরকার। সেই লক্ষ্যে জঙ্গল সলিমপুরে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদে সাঁড়াশি অভিযানও শুরু করেছিল জেলা প্রশাসন। দফায় দফায় প্রস্তাবিত প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেছিলেন সরকারের তৎকালীন একাধিক মন্ত্রী ও সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। অবৈধ দখলকারী ও সন্ত্রাসীদের প্রতিরোধ টপকিয়ে এই রাজ্যে প্রবেশ করা অনেকটা চ্যালেঞ্জ ছিল প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। ২০২২ সালের ১৪ মে প্রধানমন্ত্রীর তৎকালীন মুখ্যসচিব পরিদর্শনের সময় মানববন্ধন করেছিল কয়েকশ’ মহিলা। টানা তিন মাস ধরে অবৈধ বসতি উচ্ছেদ ও প্রকল্প বাস্তবায়নে নানা কর্ম-পরিকল্পনা নিয়ে কঠোর অবস্থানে ছিল সরকার। কিন্তু পরবর্তীতে দৃশ্যতঃ থমকে যায় সরকারের মহাপরিকল্পনা। অগ্রগতি ছাড়াই দুই বছর ধরে পড়ে রয়েছে নান্দনিক উপ-শহর গড়ে তোলার এই মহাপ্রকল্প।

জেলা প্রশাসনের নথি ঘেঁটে দেখা যায়, জঙ্গল সলিমপুর, লতিফপুর, ভাটিয়ারি, জালালবাদ ও উত্তর পাহাড়তলী মৌজায় ৩০৭০ একর জায়গা রয়েছে। খাস খতিয়ানভুক্ত সরকারি এই জায়গা ছাড়াও ব্যক্তি মালিকানাধীন জায়গা রয়েছে। ৭০ শতাংশ পাহাড় কেটে উজাড় করে হাজার হাজার পরিবারের বসবাস গড়ে ওঠেছে।

মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সভা: ২০২২ সালের ১২ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সভা কক্ষে জঙ্গল সলিমপুরের ৩১শ একর খাস জমি অবৈধ দলখমুক্ত ও উন্নয়নে মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের বিষয়ে সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেছিলেন প্রধানমন্ত্রীর তৎকালীন মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস।
সভার কার্যবিবরণী ঘেঁটে দেখা যায়, ২০১৩-১৪ সালে বায়েজিদ লিংক রোড চালু হওয়ার পর পাহাড়খেকো, ভূমিদস্যু ও সন্ত্রাসীরা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। বিভিন্ন ছিন্নমূল সমিতির নামে পাহাড়-টিলা কেটে সরকারি জায়গা দখল করে চলেছে। এতে প্লট তৈরি করে বেচাকেনা করা হয়। নিম্নবিত্ত থেকে শুরু করে উচ্চবিত্ত শ্রেণির লোকজন খাসজমি কিনে অপরিকল্পিত ও ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনা নির্মাণ করে চলেছে। সন্ত্রাসী-অপরাধীদের আশ্রয়স্থল ও অস্ত্র তৈরির কারখানা গড়ে ওঠেছিল।

সভায় বলা হয়, সিডিএ’র লিংক রোড এলাকার আশপাশে প্রতি শতক জায়গা ৭-৮ লাখ টাকা বেচাকেনা চলছে। সেই হিসাবে ৩১শ খাস জমির মূল্য ৭-৮ হাজার কোটি টাকা। এছাড়াও জঙ্গল সলিমপুরে বৃক্ষসহ খনিজ সম্পদ রয়েছে। সবমিলে ১০-১২ হাজার কোটি টাকার সরকারি সম্পদ পাহাড়খেকো, ভূমিদস্যু ও সন্ত্রাসীরা দখল করে রেখেছে।

সভায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ ও মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নসহ ২০টি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।

২০২২ সালের ৩০ জুলাই চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে জঙ্গল সলিমপুরে সরকারের মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন সংক্রান্ত সভা হয়। সভায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

জমি চেয়েছে ৪৮ প্রতিষ্ঠান : জঙ্গল সলিমপুরে স্থাপনা নির্মাণের জন্য জায়গা চেয়ে আবেদন করেছে সামরিক-বেসামরিক, সরকারি-বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাষিত সংস্থা ৪৮ প্রতিষ্ঠান। সেনানিবাস, মিলিটারি একাডেমি, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার, হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল, স্পোর্টস ভিলেজ, সাফারি পার্ক, ইকো পার্ক, বিনোদনকেন্দ্র, উচ্চক্ষমতার বেতার সম্প্রচারকেন্দ্র, কাস্টমস ডাম্পিং হাউস, সবুজ শিল্প এলাকা, বিএমএ, ডায়াবেটিক হাসপাতাল, আনসার ভিডিপি প্রশিক্ষণকেন্দ্রসহ নানা স্থাপনা নির্মাণের কথা ছিল। এছাড়াও সিটি করপোরেশন, সিডিএ, ওয়াসা, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ, বিসিক, পুলিশ, শিল্প পুলিশ, র‌্যাব-৭, বিজিএমইএ, চট্টগ্রাম চেম্বার, ফায়ার সার্ভিস, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, খাদ্য বিভাগসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সরকারি খাস জমি বরাদ্দ চেয়ে জেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন করেছে।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, জমি অধিগ্রহণ ছাড়াই খাস জমিতে সরকারি প্রতিষ্ঠান নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যাবে। এতে প্রকল্প ব্যয় অনেকাংশে কমে আসবে।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান গতকাল পূর্বকোণকে বলেন, ‘সবাই নির্বাচনে ব্যস্ত থাকায় জঙ্গল সলিমপুরের প্রকল্প ও মাস্টারপ্ল্যানের অগ্রগতি হয়নি। সামনে এ বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d