নামের আগে-পরে ব্যবহৃত আরবি শব্দগুলোর বিশ্লেষণ
ধর্মীয় নেতা কিংবা ব্যক্তিত্বের নামের আগে বা পরে নানা ধরনের উপাধি লেখা হয়। ব্যবহৃত উপাধিসমূহের কিছু অর্থ বুঝা যায়, আর কিছু উপাধি বা নামের আগে পরে থাকা শব্দের অর্থ অনেকেই বোঝেন না; জানেন না।ক্ষেত্রবিশেষ এসব আবার সংক্ষেপেও লেখা হয়।
না জানা থেকে এগুলো পড়তে অনেকের ভুল হয়। কেননা, লেখার সময় সংক্ষেপণ রীতিসিদ্ধ হলেও পড়ার সময় কিন্তু সংক্ষেপণ রীতি সিদ্ধ নয়। বরং পড়ার সময় সংক্ষিপ্ত শব্দের বিস্তারিত রূপ পাঠ করাই হলো- নিয়মের কথা। নামের আগে-পরে ব্যবহৃত ওইসব শব্দের মাঝে রয়েছে-
সা., স., দ.
এ শব্দগুলো সংক্ষেপের যে কোনো একটি লেখা হয় শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নামের পর। সা., স. অথবা দ. যেটাই লেখা থাকুক; পড়তে হবে- সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। এর অর্থ, আল্লাহ তার (নবী মুহাম্মদ) ওপর রহমত ও শান্তি বর্ষণ করুক।
পরিভাষায় এ বাক্যের নাম দরুদ। তাই সংক্ষেপ করতে যেয়ে অনেক সময় ‘দ.’ লেখা হয়। আবার প্রথম বর্ণ ‘স’ হওয়ায় শব্দ সংক্ষেপ করে ‘সা.,’ কিংবা ‘স.’ লেখা হয়। তবে বেশ আগে ‘দ.’ লেখার প্রচলন থাকলেও বর্তমানে তা নেই বললেই চলে। এখন সবাই ‘সা.,’ অথবা ‘স.’ লেখে থাকেন।
তবে অভিজ্ঞ ইসলামি স্কলাররা এ বাক্যকে সংক্ষেপ করে লেখাকে পছন্দ করেন না। তারা সবসময় পূর্ণ বাক্য লেখার পক্ষপাতী।
আ.
এ শব্দসংক্ষেপ লেখা হয়ে থাকে শেষ নবী ব্যতীত অন্য সব নবীদের নামের পর। এর পূর্ণ রূপ হলো- ‘আলাইহিস সালাম। ’ অর্থ, তার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক।
রা., রাযি., রাজি. ও রাদি.
এ শব্দগুলোর যে কোনোটি লেখা হয়- সাহাবিদের নামের পরে। ইসলামের পরিভাষায় সাহাবি বলা হয়, যে ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণের পর শেষ নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সান্নিধ্য লাভে ধন্য হয়েছেন এবং মুসলিম অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন। এ শব্দ সংক্ষেপগুলোর পূর্ণরূপ একবচন পুরুষের ক্ষেত্রে ‘রাযিয়াল্লাহু আনহু’, বহুবচন পুরুষের ক্ষেত্রে ‘রাযিয়াল্লাহু আনহুম’, একবচন মহিলার ক্ষেত্রে ‘রাযিয়াল্লাহু আনহা’, বহুবচন নারীর ক্ষেত্রে ‘রাযিয়াল্লাহু আনহুন্না’ এবং দ্বি-বচন পুরুষ-মহিলা উভয়ের ক্ষেত্রে ‘রাযিয়াল্লাহু আনহুমা। ’ পূর্ণ বাক্যের অর্থ হলো- আল্লাহ তার অথবা তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন।
র., রহ.
র., রহ. শব্দ দু’টো সংক্ষেপ লেখা হয় নবী ও সাহাবি ব্যতীত বিশিষ্ট নেককার, পরহেজগার, মুত্তাকি মুসলিমদের মধ্যে যারা মারা গেছেন- তাদের নামের পর। পূর্ণ রূপ হলো-‘রাহমাতুল্লাহি আলাইহি। ’ বাক্যটির অর্থ- তার ওপর আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক।
দা. বা., মু. আ., হাফি.
এ শব্দসংক্ষেপগুলো লেখা হয়- বিশিষ্ট নেককার, পরহেজগার মুত্তাক মুসলিমদের মধ্যে যারা জীবিত আছেন- তাদের নামের পর। দা. বা.-এর পূর্ণ উচ্চারণ হলো- ‘দামাত বারাকাতুহুম। ’ অর্থ- তার কল্যাণসমূহ স্থায়ী হোক।
মু. আ.-এর পূর্ণ উচ্চারণ হলো- ‘মুদ্দাযিল্লুহুল আলি। ’ অর্থ- তার মহান ছায়া আমার ওপর দীর্ঘ হোক। রাহ.-এর পূর্ণ উচ্চারণ হলো- ‘হাফিযাহুল্লাহ। ’ অর্থ- আল্লাহ তার হেফাজত করুক।
মাও.
শব্দটি সংক্ষেপ লেখা হয় কওমি মাদ্রাসা থেকে তাকমিল বা দাওরায়ে হাদিস উত্তীর্ণ হয়েছেন অথবা আলিয়া মাদ্রাসা থেকে কামিল পাশ করেছেন তাদের নামের পূর্বে। এর পূর্ণ উচ্চারণ হলো- ‘মাওলানা। ’ অর্থ- আমাদের কল্যাণকামী বন্ধু।
এভাবে নামের আগে-পরে ছাড়াও মুসলিম সভ্যতায় ব্যবহারিক জীবনে বেশ কিছু আরবি বাক্য খুব গুরুত্ব ও যত্নের সঙ্গে ব্যবহৃত হয়। যেমন-
আলহামদুলিল্লাহ
কোনো শুভ সংবাদের আগে বা পরে এ বাক্যটি বলা হয়। যেমন, আলহামদুলিল্লাহ- আমি ভালো আছি। বাক্যটির অর্থ- সব প্রশংসা আল্লাহর।
ইন্নালিল্লাহ
ছোট-বড় যে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির শিকার হলে এ বাক্যটি বলা হয়। কোনো কিছু হারিয়ে গেলে বলতে হয়- ইন্নালিল্লাহ। আবার অনেক সময়, বিশেষত কারো মৃত্যুর সংবাদ দেওয়ার সময় আরেকটু বড় করে বলা হয়- ‘ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন। বাক্যটির অর্থ- আমরা সবাই আল্লাহর অধীন এবং আমরা সবাই তারই কাছে ফিরে যাব।
জাযাকাল্লাহ
ধন্যবাদ জানানোর জন্য এ বাক্যটি বলা হয়। এর অর্থ- আল্লাহ আপনাকে প্রতিদান দেবেন।
ইনশাআল্লাহ
ভবিষ্যতে কোনো কিছু করার ইচ্ছা ব্যক্ত করার আগে বা পরে এ বাক্যটি বলা হয়। যেমন- ইনশাআল্লাহ, আমি কাল আপনার সঙ্গে দেখা করব। অর্থ- যদি আল্লাহর ইচ্ছা হয়।
মাশাআল্লাহ
ভালো কোনো কিছু দেখলে এ বাক্য বলা হয়। যেমন- মাশাআল্লাহ, আপনার ছেলে খুব সুন্দর হয়েছে। মাশাআল্লাহ শব্দের অর্থ- আল্লাহ যেমন চেয়েছেন।