আত্মগোপনে বাঁশখালীর ১০ ইউপি চেয়ারম্যান, ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষ
বৈষম্যের বিরুদ্ধে ছাত্রদের আন্দোলনে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর বাঁশখালীর ১০টি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আত্মগোপনে চলে গেছেন, তাদের অফিস ফাঁকা পড়ে আছে। এই নেতৃত্বহীনতার কারণে, সাধারণ মানুষ, যারা ইউনিয়ন পরিষদে প্রয়োজনীয় সেবা নিতে যান, তারা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর থেকে বাঁশখালীর আওয়ামী লীগ নেতা এবং নৌকা প্রতীকে নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যানরা এলাকা ছেড়ে আত্মগোপনে চলে গেছেন। তবে, সাধনপুর ইউপি চেয়ারম্যান কে এম সালাহউদ্দিন কামাল, পুকুরিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আসহাব উদ্দিন, শেখেরখীল ইউপি চেয়ারম্যান মোরশেদুল ইসলাম ফারুকী এবং বাহারছড়ার রেজাউল করিম ইউনুস নিয়মিত অফিস করছেন।
অনুপস্থিত চেয়ারম্যানরা হলেন ছনুয়া ইউপি চেয়ারম্যান হারুনুর রশীদ, পুঁইছড়ির তারেকুর রহমান, চাম্বলের মুজিবুল হক চৌধুরী, শীলকূপের কায়েস সরওয়ার সুমন, বৈলছড়ির কফিল উদ্দিন, সরলের রশীদ আহমদ চৌধুরী, খানখানাবাদের জসীম হায়দার, কালীপুরের শাহাদাত আলম এবং কাথরিয়ার ইবনে আমিন।
ছনুয়া ইউপি চেয়ারম্যান হারুনুর রশীদ সম্পর্কে মোজাম্বিকে পালানোর গুঞ্জন থাকলেও তিনি বাড়িতেই আছেন, যদিও ইউনিয়ন পরিষদে অনুপস্থিত।
অন্যদিকে, গণ্ডামারা ইউনিয়ন পরিষদের বহিষ্কৃত চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা লেয়াকত আলী জামিনে মুক্ত হয়ে এলাকায় ফিরেছেন। তিনি ‘স্বৈরাচার হাসিনাকে হুমকি’ দেওয়ার অপবাদে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন এবং একাধিক মামলায় জেলে ছিলেন বলে দাবি করেন। এখন তিনি চেয়ারম্যান পদ ফিরে পেতে আইনি লড়াই করছেন এবং আবার জনগণের সেবায় ফিরতে আশাবাদী।
গত ৫ আগস্ট বাঁশখালী আওয়ামী লীগের প্রধান কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। একই সময়ে চাম্বল ইউপি চেয়ারম্যান মুজিবুল হক চৌধুরীর বাড়িতেও আগুন দেওয়া হয়, যার ফলে তার এবং তার ভাইয়ের বাড়ি ভস্মীভূত হয়। মুজিবুল হক চৌধুরী পিটার হাসকে হুমকি দেওয়ার জন্য আলোচনায় ছিলেন।
এর আগে ৪ আগস্ট জামায়াত নিয়ন্ত্রিত চাম্বল জেনারেল হাসপাতালে অগ্নিসংযোগ ও ছাত্রদের মারধরের অভিযোগ ওঠে মুজিবুল হক চৌধুরী, বাঁশখালী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম ও ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোছাইনের বিরুদ্ধে। পরদিন ছাত্রদের বিজয় মিছিলের পর মোহাম্মদ হোসাইনের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর হয়।
এরপর থেকে বাঁশখালী উপজেলা চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম, ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোছাইন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নুরীমন আক্তারও অফিসে অনুপস্থিত রয়েছেন।
বাঁশখালীর চাম্বল এলাকার একজন বাসিন্দা বলেন, চাকরির আবেদনের জন্য চেয়ারম্যান সনদ নিতে গত তিনদিন ধরে পরিষদে ঘুরছেন। কিন্তু চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতির কারণে সেটি তিনি পাচ্ছেন না। চেয়ারম্যান সনদ না পেলে তার চাকরির আবেদন করা হবে না।
একই এলাকার একজন শিক্ষার্থী বলেন, স্থায়ী বাসিন্দা সনদ ছাড়া ছাত্রাবাসে সিট বরাদ্দ পেতে আবেদন করতে পারছি না। এ কাজে কয়েকদিন ধরে পরিষদে ঘুরছি। প্রতিদিন যাতায়াতে অর্থ ও শ্রম ব্যয় করতে হচ্ছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছি।
অন্যদিকে, বাঁশখালী উপজেলা বিএনপি, এর অঙ্গসংগঠন এবং জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন টিম তৈরি করে উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স, থানা, মন্দির এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ি পাহারা দিচ্ছেন। শনিবার, জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মী এবং সেনাবাহিনীর কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে থানার কার্যক্রম পুরোপুরিভাবে শুরু হয়েছে।
এদিকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অস্বাভাবিক থাকার সুযোগ নিয়ে সাধনপুর ইউনিয়নের বৈলগাঁও এলাকায় ত্রিপল টাঙিয়ে স্কেভেটর দিয়ে পাহাড় কাটার অভিযোগ উঠেছে সাবেক ইউপি সদস্য মোহাম্মদ ফেরদৌসের বিরুদ্ধে। অভিযোগ স্বীকার করে মো. ফেরদৌস একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘মাটিগুলো কেটে আমি কোথাও নিয়ে যাইনি। ওখানে সমান করে দিয়েছি। ওটা আমার জায়গা।’ আপনার জায়গা হলে ত্রিপল দিয়ে লোকচক্ষুর আড়ালে কেন পাহাড় কাটলেন— এমন প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।
বাঁশখালী থানার ওসি তোফায়েল আহমদ বলেন, ‘আমরা বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জনসাধারণকে থানায় সেবা নিতে আসার জন্য বলেছি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’