চট্টগ্রাম চেম্বারে ‘একঘরে’ হচ্ছেন লতিফপুত্র
অবশেষে চট্টগ্রাম চেম্বারে ‘একা’ হয়ে পড়ছেন সভাপতি ওমর হাজ্জাজ। তিনি সাবেক সংসদ সদস্য এম এ লতিফের তৃতীয় ছেলে। বুধবার (২৮ আগস্ট) চেম্বারের সিনিয়র সহসভাপতি তরফদার মো. রুহুল আমিন এবং পরিচালক জহিরুল ইসলাম চৌধুরী আলমগীর পদত্যাগ করেছেন। এরপরই সহসভাপতি মাহবুবকন্যা রাইসাসহ আরো একাধিকজনের পদত্যাগের প্রস্তুতির কথা জানা গেছে। দুয়েকজন পদত্যাগের ইঙ্গিতও দিয়েছেন সরাসরি।
পারিবারিক বলয়ে শতবর্ষী এ সংগঠন ‘কব্জা’ করে রাখার অভিযোগ ছিল সাবেক সংসদ সদস্য এম এ লতিফের বিরুদ্ধে। তাঁর এ বলয়ে ‘সেকেন্ড ইন কমান্ড’ হিসেবে যুক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে দি ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) সভাপতি মাহবুবুল হকের বিরুদ্ধেও। তাঁর মেয়ে রাইসা মাহবুব রয়েছেন সংগঠনের সহসভাপতি পদে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সহসভাপতি রাইসা মাহবুব, পরিচালক অঞ্জন শেখর দাশ, মো রাকিবুর রহমান টুটুল ও মাহফুজুল হক শাহসহ অন্তত ১০ জন পদত্যাগের প্রস্তুতি নিয়েছেন। বুধবার তাঁদের মধ্যে অনেকে চট্টগ্রাম চেম্বার কার্যালয়ে পদত্যাগপত্র নিয়ে গিয়েছিলেন।
পদত্যাগের ইঙ্গিত দিয়ে চেম্বার পরিচালক অঞ্জন শেখর দাশ বলেন, ‘আমরা পরিবর্তিত সময়ের সঙ্গেও ঠিকভাবে কাজ করতে চাই। এছাড়া এখনতো চিটাগং চেম্বারের কোনো কাজ হচ্ছে না। এমন বন্যায়ও আমরা এ সংগঠন থেকে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারিনি। নতুন করে যখন সব ঢেলে সাজানোর কথা উঠেছে, আমরাও এতে সম্মত আছি।’
এর আগে সরকার পতনের পর ১৮ ও ২৫ আগস্ট দফায় দফায় বিক্ষোভ সমাবেশ করে চট্টগ্রাম চেম্বারকে স্বৈরশাসন ও পরিবারতন্ত্র থেকে মুক্ত করার দাবি জানান ব্যবসায়ীরা। ‘বঞ্চিত ব্যবসায়ী ফোরাম’ এর ব্যানারে তারা ভোটবিহীন কমিটি বাতিল করে দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানানো হয়। ‘চট্টগ্রামের সকল ব্যবসায়ী সমাজ’ ও ‘বঞ্চিত ব্যবসায়ী ফোরাম’ ব্যানারে এসব কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেন চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি এস এম নুরুল হক ও চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক এস এম সাইফুল আলম।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে চিটাগং চেম্বারের সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি এস এম নুরুল হক সিভয়েস২৪’কে বলেন, ‘বর্তমান বোর্ডের অনেকের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। অনেকে পদত্যাগ করার জন্য চেম্বারে গেছেন, অনেকে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আশা করি, কয়েকদিনের মধ্যে প্রায় সবাই পদত্যাগ করবেন। এখন আমরা চাই, চেম্বারে সৃষ্ট পরিবারতন্ত্র ও স্বৈরতন্ত্র ভেঙে ব্যবসা বান্ধব একটি পরিবেশ গড়ে উঠুক।’
বর্তমান অবস্থা বুঝতে পেরে পদত্যাগকারীদের ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নতুন করে তৃণমূল ব্যবসায়ীদের চেম্বার সদস্য করে এবং যারা বর্তমান সদস্য আছেন, তাদের টিন ও ট্রেড লাইসেন্স যাচাই করে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচিত নেতৃত্বের হাতে দায়িত্ব দেওয়া হোক। এজন্য প্রয়োজনে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা চাওয়া হতে পারে।’
এদিকে চেম্বারের সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি এস.এম. নুরুল হকের নেতৃত্বে বিএনপিপন্থী ব্যবসায়ীদের একটি অংশ লতিফপুত্র ওমর হাজ্জাজের সমঝোতার প্রস্তাবে সায় দিয়েছেন বলে গুঞ্জন চাউর হয়েছে। বলা হচ্ছে, লতিফপুত্র ওমর, মাহবুবকন্যা রাইসাসহ পারিবারিক বলয়ে কমিটিতে আসা সবাই পদত্যাগ করে কো-অপ্টের মাধ্যমে চেম্বারের সভাপতির চেয়ারে বসতে পারেন নুরুল হক! কিন্তু কেউ কেউ এটি অপপ্রচার বলে দাবি করেছেন।
তবে সাধারণ ব্যবসায়ীদের দাবি, লতিফ-মাহবুব পরিবারের রাহুমুক্ত করে দক্ষ একজন প্রশাসক নিয়োগের মাধ্যমে ভোটার তালিকা সংশোধন করতে। এরপর নির্বাচনের মাধ্যমে বৈধ কোনো কমিটি করতে হবে।
২০১৩ সালের ৩০ মার্চ সর্বশেষ নির্বাচনে মোরশেদ-সালাম ঐক্য পরিষদকে হারিয়ে চট্টগ্রাম চেম্বারের নেতৃত্বে আসেন মাহবুবুল আলম-নুরুন নেওয়াজ সেলিম পরিষদ। সেবার ভোটের বৈতরণী পার করেই বিনাভোটের অধ্যায় শুরু করেন এম এ লতিফ-মাহবুব আলম। চারবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সভাপতির চেয়ারে বসেন মাহবুবুল আলম।
‘বিনাভোটের’ সভাপতি মাহবুবুল আলম এফবিসিসিআইয়ের চেয়ারে বসলে ৮ আগস্ট আবারো বিনাভোটে চেম্বার সভাপতির চেয়ারে বসানো হয় সাবেক সংসদ সদস্য এম এ লতিফের তৃতীয় সন্তান ওমর হাজ্জাজকে। সঙ্গে রাখা হয় লতিফের আরেক ছেলে ওমর মুক্তাদির এবং মাহবুবকন্যা রাইসা মাহবুব ও তার ভাই আলমগীর পারভেজকে।