হাটহাজারীতে শিক্ষার্থী হত্যা মামলা, জানেনই না সাক্ষী!
প্রায় সাড়ে তিন বছর আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের প্রতিবাদে মিছিল করতে গিয়ে হাটহাজারী থানার সামনে পুলিশের গুলিতে মাদ্রাসার শিক্ষার্থী হাফেজ মাওলানা কাজী নজরুল ইসলাম নিহত হয়েছিলেন। সেই ঘটনার তিন বছর পরে ওই শিক্ষার্থীর বাবা কাজী জাহাঙ্গীর হোসেন ৪১ জনের নাম উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। তবে এর মধ্যে মামলার দুজন সাক্ষী জানিয়েছেন, তারা মামলার বিষয়ে অবগত নন। আবার মামলার আসামি তালিকায় আছে দৈনিক মানবজমিনের হাটহাজারী উপজেলার প্রতিনিধি আবু শাহেদের নামও।
মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) চট্টগ্রাম সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলার আবেদন করেন নিহতের বাবা কাজী জাহাঙ্গীর হোসেন। শুনানি শেষে বিচারক শাহরিয়ার ইকবাল আবেদনটি এজাহার হিসেবে রেকর্ড করতে হাটহাজারী থানাকে নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান বাদীর আইনজীবী তাওহীদুল ইসলাম।
মামলায় জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান চেয়ারম্যান ও উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি এম এ সালাম, হেফাজতের প্রয়াত আমির মাওলানা আহমদ শফীর ছেলে মাওলানা আনাস মাদানী, চট্টগ্রামের তৎকালীন এসপি এস এম রশিদুল হক, ওসি রফিকুল ইসলামসহ ৪১ জনের নামে ও অজ্ঞাতপরিচয়ের অন্তত ১৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে। আসামিদের তালিকায় দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার হাটহাজারী প্রতিনিধি মো. আবু শাহেদকে ৩৫ নম্বরে রাখা হয়।
এদিকে, ঘটনার পর হাটহাজারী এলাকায় সংবাদ সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত ছিলেন সাংবাদিক মো. আবু শাহেদ। তিনি এ ঘটনার সাথে জড়িত না থেকেও তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এ ঘটনায় হাটহাজারী প্রেস ক্লাব ও সাংবাদিক সংগঠনগুলো নিন্দা জানিয়েছে। অবিলম্বে আবু শাহেদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রত্যাহারের জোর দাবি জানান সাংবাদিক নেতারা।
মামলার দুই নম্বর সাক্ষী প্রবাসী আব্দুল্লাহ আল মামুন তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আজকে চট্টগ্রাম কোর্টে একটি মামলা হয়েছে সেই মামলায় আমাকে ২ নম্বর সাক্ষি করা হয়েছে। আমি বর্তমানে প্রবাসি। এই মামলা কে করেছে, কারা করেছে আমি জানিনা। এই মামলার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই।’
ওই মামলার পাঁচ নম্বর সাক্ষী জিয়াউর রহমান ফারুকী ফেসবুকের মন্তব্যের ঘরে লিখেছেন, ‘আমার সাথে এই মামলার সাথে ন্যূনতম কোন সম্পর্ক নাই। কিন্তু গতকাল হঠাৎ সাক্ষীতে আমার নাম দেখলাম। কে বা কারা এই মামলা করছে তাও জানি না।’
এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ মহসীন বলেন, পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যদি এসব মামলায় হয়রানির শিকার হয় তাহলে বৈষম্যবিরোধী যে আন্দোলন দেশে চলমান এটা ব্যাহত হবে। অতি উৎসাহী হয়ে কেউ কেউ সাংবাদিকদের আসামি করছেন। কিন্তু ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়, এমন ব্যক্তি যেন হয়রানির শিকার না হন তা নজর রাখা উচিত। কারণ, মামলার লক্ষ্য হলো- সুবিচার পাওয়া। হয়রানি করার উদ্দেশ্যে পেশাজীবীদের বিরুদ্ধে মামলা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
হেফাজতে ইসলাম কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, মামলাগুলো কারা করতেছে, এসব মামলায় কাদের নাম দেয়া হচ্ছে আমার কিছুই জানা নেই। মামলার ব্যাপারে আমাদের কোন পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে না। তবে এই মামলায় মানবজমিন পত্রিকার হাটহাজারী প্রতিনিধি আবু শাহেদ’র নাম আসায় আমরা খুব দুঃখ প্রকাশ করছি। হেফাজতে ইসলামের নেতৃবৃন্দের সাথে আমি এই বিষয়ে আলাপ করব।