কক্সবাজারচট্টগ্রাম

মিয়ানমারে তীব্র সংঘাতে বাংলাদেশে ঢুকছেন রোহিঙ্গারা

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু টাউনশিপ এলাকায় সংঘাত আর তীব্র হয়েছে। মর্টার শেল, গ্রেনেড-বোমার বিস্ফোরণের শব্দ থেমে থেমে ভেসে আসছে সীমান্তবর্তী টেকনাফের বিভিন্ন এলাকায়।

শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর) রাত থেকে শুরু হওয়া সেই শব্দ শোনা গেছে শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টা পর্যন্ত। এতে টেকনাফের বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এমনকি রাতে ওপারে বিস্ফোরণের বিকট শব্দে এপারে ঘুম ভেঙে শিশুরা কান্নাকাটি শুরু করে দিচ্ছে।

অন্যদিকে, রাখাইনে চলমান সংঘাতের মধ্যে সীমান্তে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা বাড়লেও রাখাইন থেকে রোহিঙ্গাদের অনেকেই পালিয়ে বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছেন।

একাধিক সূত্রমতে, গত দুই সপ্তাহে বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে প্রায় ১২ হাজার রোহিঙ্গা। সীমান্তের ওপারে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ার চেষ্টায় রয়েছেন আরও প্রায় ৫০ হাজার রোহিঙ্গা।

সূত্রমতে, গত ছয় মাস ধরে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সংঘাত চলছে। এখন সরকারি বাহিনীর সঙ্গে আরাকান আর্মির সংঘাত সবচেয়ে তীব্র আকার ধারণ করেছে।

স্থানীয়রা বলছেন, ওপারের বিস্ফোরণে এপারের ঘরবাড়ি কাঁপছে। বিস্ফোরণের শব্দ শুনে মনে হয় বসতঘরের চালার ওপর বোমা এসে পড়ছে।

উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, “বিজিবি ও কোস্টগার্ড বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে এরই মধ্যে অনেক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছেন। বাংলাদেশে ঢুকে পড়ার জন্য রাখাইন রাজ্যের বিভিন্ন পয়েন্টে কয়েক হাজার রোহিঙ্গা জড়ো হয়ে রয়েছেন।”

টেকনাফের জনপ্রতিনিধিরা জানান, রাতের অন্ধকারে মংডু টাউনশিপের সুদাপাড়া, ফয়েজীপাড়া, সিকদারপাড়া ও নুরুল্লাপাড়া গ্রাম থেকে রোহিঙ্গারা নৌকা নিয়ে নাফ নদী অতিক্রম করে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ছেন। বেশির ভাগ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকছেন জাদিমোরা, দমদমিয়া, কেরুনতলি, বরইতলি, নাইট্যংপাড়া, জালিয়াপাড়া, নাজিরপাড়া, মৌলভীপাড়া, নয়াপাড়া, শাহপরীর দ্বীপ, জালিয়াপাড়া, মিস্ত্রিপাড়া, ঘোলারচর, খুরেরমুখ, আলীর ডেইল, মহেষখালীয়াপাড়া, লম্বরী, তুলাতলি, রাজারছড়া, বাহারছড়া উপকূল দিয়ে।

শুক্রবার রাতেই দেশে ঢুকে পড়েছেন চার শতাধিক রোহিঙ্গা। মংডুর উত্তরের প্যারাংপুরু ও দক্ষিণের ফাদংচা এলাকায় প্রায় ৫০ হাজার রোহিঙ্গা জড়ো হয়ে বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টায় রয়েছেন। রাখাইনের চলমান সংঘাতে সম্প্রতি ঘরবাড়ি থেকে উচ্ছেদ হয়েছেন।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, “সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটছে। অনুপ্রবেশের সময় বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাকে নাফ নদী থেকে পুনরায় মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। অনুপ্রবেশ ঠেকাতে নাফ নদী ও সীমান্তে টহল জোরদার করা হয়েছে।”

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) কার্যালয়ের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ সামছু-দ্দৌজা বলেন, “বিভিন্ন আশ্রয়শিবিরে নতুন করে রোহিঙ্গারা আশ্রয় নিচ্ছেন। তবে এ পর্যন্ত কত রোহিঙ্গা ঢুকেছে তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই।”
সূত্র : প্রথম আলো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d