দেশজুড়ে

আশুলিয়ায় এক কারখানার শ্রমিকদের বিক্ষোভ, বন্ধ ৫২টি

সাভারের আশুলিয়ায় বকেয়া বেতনের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছে একটি তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। এছাড়া শ্রমিক অসন্তোষের জেরে অন্তত ৫২টি পোশাক কারখানার উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।

এদের মধ্যে ৪৩টি কারখানা অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বাকি ৯টিতে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে সড়ক অবরোধের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (ওসি) আবু বকর সিদ্দিক।

এর আগে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড সড়কের নরসিংহপুর এলাকায় জেনারেশন নেক্সট পোশাক কারখানার কয়েক হাজার শ্রমিক সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নতুন করে শ্রমিক অসন্তোষের জেরে শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ায় প্রায় ৫২টি কারখানার উৎপাদন বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে কর্তৃপক্ষ। এগুলোর মধ্যে ৪৩টি কারখানা শ্রম আইন ২০০৬ এর ১৩(১) ধারা মোতাবেক অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছেন কর্তৃপক্ষ। বেশ কিছু কারখানার গেটে ১৩(১) ধারার নোটিশ দেখা গেছে। এছাড়া জেনারেশন নেক্সট নামের পোশাক কারখানার শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন।

হা-মীম গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠানের গেটে দেওয়া একটি নোটিশে লেখা হয়, দ্যাটস ইট স্পোর্টস ওয়ার লিমিটেড, এ্যাপারেল গ্যালারি লিমিটেড, রিফাত গার্মেন্টস লিমিটেড, এক্সপ্রেস ওয়াশিং অ্যান্ড ডাইং লিমিটেড, আর্টিস্টিক ডিজাইন লিমিটেড, নেক্সট কালেকশন লিমিটেড এর সকল কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শ্রমিক জানানো যাচ্ছে যে, আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলের বর্তমান সহিংসতা ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিবেচনায় শ্রমিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সার্বিক নিরাপত্তার স্বার্থে বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এর ধারা ১৩ (১) অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর (সোমবার) হতে উল্লেখিত কারখানাসমূহ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হলো। পরবর্তীতে আঞ্চলিক পরিবেশ নিরাপদ হলে শ্রমিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কর্মপরিবেশ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে নোটিশের মাধ্যমে কারখানা খোলার তারিখ জানিয়ে দেওয়া হবে। কারখানায় নিরাপত্তা বিভাগ এই নোটিশের আওতামুক্ত থাকবে।

অনন্ত গ্রুপের একটি কারখানার গেটেও একই নোটিশ দেখতে পাওয়া যায়।

সড়ক অবরোধ করা শ্রমিকরা জানান, অন্যান্য কারখানার শ্রমিকরা বিভিন্ন দাবি করলেও তারা উৎপাদন চালু রেখেছেন। অন্যান্য কারখানার শ্রমিকরা কারখানায় এসে ঝামেলা করলেও সব শ্রমিক কাজ করেছে। কিন্তু আমাদের কারখানা বন্ধ করে রেখেছে কর্তৃপক্ষ। গত মাসসহ চলতি মাসের বেতন পরিশোধ না করে কারখানা বন্ধ করে রাখা হয়েছে। শ্রমিকরা বাসা ভাড়া ও দোকানের বাকি পরিশোধ করতে পারছেন না। সারা মাস কাজ করে বাড়িওয়ালা ও দোকান মালিকের লাঞ্ছনা সহ্য করতে হচ্ছে। এর আগে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বেতন পরিশোধের আশ্বাস দেওয়া হলেও বেতন পরিশোধ করেনি মালিকপক্ষ। তাই আজ বাধ্য হয়ে শ্রমিকরা রাস্তায় নেমেছে।

শিল্প পুলিশ জানায়, শ্রমিক অসন্তোষের জেরে গতকাল থেকে আবারও এই অঞ্চলে বেশ কিছু তৈরি পোশাক কারখানা বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। প্রায় ৫২টি কারখানায় উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে ৪৩টি কারখানা শ্রম আইন ২০০৬ সালের ১৩ (১) ধারায় বন্ধ রয়েছে।

আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (ওসি) আবু বকর সিদ্দিক বলেন, সকালে নরসিংহপুর এলাকায় একটি কারখানার শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করলে ঘটনাস্থলে পুলিশের টিম পাঠানো হয়েছে। এছাড়া আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত আছেন।

আশুলিয়া শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার সারোয়ার আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আজ শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ায় ৫২টি কারখানায় উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। ১৩(১) ধারায় বন্ধ রয়েছে ৪৩টি পোশাক কারখানা। বাকিগুলো সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। বিভিন্ন পয়েন্টে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d