অফিস সহায়ককে আটকাতে বেতন শিটে সই করছেন না ভারপ্রাপ্ত উপজেলা চেয়ারম্যান
অফিস সহায়কের সঙ্গে দ্বন্দ্বের জের ধরে কর্মচারীদের বেতন শিটে সাক্ষর না করার অভিযোগ উঠেছে সীতাকুণ্ড উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জয়নব জলির বিরুদ্ধে। গত দুই মাসের বেতন না পেয়ে কষ্টে পড়েছেন ওই অফিস সহকারীসহ চার কর্মচারী।
জানা গেছে, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের যৌথ স্বাক্ষরে পরিষদের অধীনে কর্মরত কর্মচারীদের বেতন হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কেএম রফিকুল ইসলাম বেতন শিটে স্বাক্ষর করে দিলেও উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জয়নব বিবি জলি স্বাক্ষর করছেন না। ফলে আটকে রয়েছে চার কর্মচারীর ডিসেম্বর এবং জানুয়ারি মাসের বেতন। গত দুই মাস ধরে মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন তাঁরা।
অফিস সহায়ক মোয়াজ্জেম হোসেন সুমন বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ব্যক্তিগতভাবে আমাকে অপছন্দ করেন। তাই তিনি আমি যাতে বেতনের টাকা তুলতে না পারি সেজন্য বেতন শিটে স্বাক্ষর করছেন না। এমনকি তিনি পূর্বের উপজেলা চেয়ারম্যান ও বর্তমান এমপি মহোদয়ের আমলে পাস হওয়া আমার তিন মাসের ভ্রমণের বিলও আটকে দিয়েছেন।
অফিস সহায়ক আজিম উদ্দিন বলেন, ডিসেম্বর ও জানুয়ারি দুই মাসের বেতন না পাওয়াতে আমাদের সংসার খরচ চালাতে অনেক কষ্ট হচ্ছে, ধারদেনা করে এই মুহূর্তে আমরা সংসার চালাচ্ছি।
উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কার্যালয়ের কম্পিউটার অপারেটর অঞ্জনা দত্ত বলেন, মোয়াজ্জেম হোসেন সুমনকে বাদ দিয়ে জানুয়ারি মাসের বেতন শিট তৈরি করতে বলেছেন উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। কিন্তু ওই শিটে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্বাক্ষর না করায় সবার বেতন আটকে থাকে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কে এম রফিকুল ইসলাম বলেন, বেতন আটকে রাখার এখতিয়ার কারোই নেই। কেউ যদি চাকরি থেকে বরখাস্ত হয় তবুও সরকারের নিয়ম অনুযায়ী তাকে খোরপোষ দেওয়া হয়। পরিষদের কর্মচারীদের ডিসেম্বর মাসের বেতন শিটে আমি স্বাক্ষর করে দিয়েছি কিন্তু ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান কেন আটকে রেখেছেন সেটা আমার বোধগম্য নয়। তবে একজন কর্মচারীকে বাদ দিয়ে অপর তিনজনের জানুয়ারি মাসের বেতন শিট আমার কাছে আনা হলে নিয়মের ব্যত্যয় ঘটার কারণে আমি তাতে স্বাক্ষর করিনি।
উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জয়নাব বিবি জলি বলেন,” মোয়াজ্জেম হোসেন সুমন একজন অফিস সহায়ক হয়েও আমার সাথে বেয়াদবি করার কারণে আমি তার নাম বাদ দিয়ে বাকি তিনজনের বেতন শিট রেডি করতে বলেছি। কিন্তু সেখানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহোদয় স্বাক্ষর না করায় সবার বেতন আটকে যায়।
এভাবে বেতন আটকানোর কোন এখতিয়ার আপনার আছে কিনা, এটা সরকারি নিয়মে পড়ে কিনা প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে সে আমাকে কোনরকম তোয়াক্কা না করে বারবার হেনস্থা করছে। এ কারণে আমি তার বেতন আটকে রেখেছি। এই ঘটনায় যদি আমার কোন শাস্তি হয় হোক। আপনাদেরও যা ইচ্ছা তা লিখে দেন।”
প্রসঙ্গত এর আগে গত নভেম্বর মাসে মোয়াজ্জেম হোসেন সুমনের বিরুদ্ধে অসদাচরণ ও দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগে বিভাগীয় কমিশনার ও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছিলেন উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জয়নব বিবি জলি।
একই সময় সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও বর্তমান সংসদ সদস্য এসএম আল মামুনের অনুসারি হওয়াতে ভারপ্রাপ্ত উপজেলা চেয়ারম্যান জয়নাব বিবি জলি কর্তৃক তাকে নানাভাবে হয়রানি করার অভিযোগে বিভাগীয় কমিশনার বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন অফিস সহায়ক মোয়াজ্জেম হোসেন সুমন।