লাইফস্টাইল

আনন্দ উপভোগ করতে গিয়ে যেন বিষাদ নেমে না আসে

ঈদুল আজহার লম্বা ছুটিতে মা-মাটির টানে গ্রামে ছুটে যান নগরবাসী। জীবন-জীবিকার টানে পরিবারের ছিঁড়ে যাওয়া বন্ধন আবার জোড়া লাগে ঈদ উৎসবকে ঘিরে। কিন্তু উৎসব উদযাপনে অসতর্ক হলে ঘটে যেতে পারে বড় বিপদ! তাই সতর্ক হওয়ার কোনো বিকল্প নেই। এই ক্ষেত্রে কিছু কাজ আপনার ঈদযাত্রাকে করবে আনন্দময়। ঈদযাত্রা হবে নিরাপদ।

কাজের তালিকা করুন:

সবার আগে কাজের একটি তালিকা তৈরি করুন। কার জন্য কী নিতে চান, ব্যাগে কী নিতে হবে, কোন কাজগুলো আগে সারতে হবে, ঈদে কোথায় কোথায় যেতে চান, সবকিছু একটি নোটে লিখে নিন। সব স্মার্টফোনেই নোট করার সুবিধা থাকে। সেটি ব্যবহার করতে পারেন। এতে আপনার কাজগুলো করা সহজ হবে। ভুলে গেলেও তালিকা দেখে মনে করে নেওয়া যাবে।

ব্যাগ গুছিয়ে নিন:

বাড়িতে যাওয়ার আগে সময় করে ব্যাগ গুছিয়ে নিন। নয়তো শেষ মুহূর্তে এসে গোছাতে গেলে তাড়াহুড়োয় অনেক কিছুই ভুলে ফেলে যেতে পারেন। অতিরিক্ত জিনিসপত্র টানবেন না। যতটুকুু দরকার, ততটুকুই নিন। ফোনের চার্জার, প্রয়োজনীয় ওষুধ ও কাগজপত্রের ফটোকপি ইত্যাদি গুছিয়ে সঙ্গে রাখুন। প্রয়োজনের সময় যেন সবকিছু হাতের কাছেই পাওয়া যায়।

অপার আনন্দ নিয়ে বাড়ি যাওয়ার আগে বাসার গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানির লাইন বন্ধ করতে ভুল করবেন না। এতে গ্যাস বা সিলিন্ডার বিস্ফোরণ এড়ানোর পাশাপাশি বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে সৃষ্ট অগ্নিকান্ড রোধ করা যাবে। বাসা-বাড়ির নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দিন। এক্ষেত্রে সিসিটিভি ‘অন’ করে গেলে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনায় জড়িতদের খুঁজে পেতে সহজ হবে।

টাকা ও স্বর্ণালংকার নিরাপদে রাখুন:

ফাঁকা বাসায় নগদ টাকা বা স্বর্ণালংকার রাখবেন না। থাকলে চুরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বাসায় নগদ টাকা বা স্বর্ণালংকার থাকলে ঈদে গ্রামে যাওয়ার আগে তা নিরাপদ স্থানে সরিয়ে রাখুন। প্রয়োজনে শহরে থাকা আত্মীয়-স্বজনদের কাছে রেখে যান। সামান্য সতর্কতা আপনাকে বড় ধরনের বিপদ থেকে রক্ষা করবে। আপনার মূল্যবান সম্পদ নিরাপদে রাখবে।

বাসার গাছ ও পোষা প্রাণী:

বাড়ির গাছগুলোতে পর্যাপ্ত পানি দিয়ে যান, যাতে আপনার অনুপস্থিতিতেও তারা বেঁচে থাকে। পোষা প্রাণী থাকলে তাকে একা বাসায় রেখে যাবেন না। সম্ভব হলে সঙ্গে করে নিয়ে চলুন অথবা পরিচিত কারও বাসায় রেখে যান। প্রয়োজনে পোষা প্রাণীদের কেয়ার সেন্টারে নামমাত্র মূল্যে চাইলেই নিজের পোষা প্রাণীকে রেখে যেতে পারবেন আপনি।

ফ্রিজ ও ডাস্টবিন খালি করুন:

বাড়ি যাওয়ার আগে ফ্রিজ ও ডাস্টবিন যথাসম্ভব খালি রাখার চেষ্টা করুন। নইলে দীর্ঘ ছুটি শেষে বাড়ি ফিরে দেখা যায়, ফ্রিজে থাকা খাবার নষ্ট হয়ে গেছে। তখন চাইলেও সেই বাসি খাবার খাওয়া সম্ভব হয় না। অন্যদিকে ডাস্টবিন পরিষ্কার না করলে ময়লা জমে দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয়। ঘর বন্ধ থাকায় দুর্গন্ধ বেরও হতে পারে না, এ কারণে ছুটি শেষে ঘরে ফিরে মুখোমুখি হতে হয় দুর্গন্ধের।

ঘর ভালোভাবে তালাবদ্ধ করুন:

শুধু বাড়ির প্রধান দরজায়ই নয়, সবগুলো দরজা ও জানালা ভালোভাবে লক করুন। লক করা হলে আরেকবার টেনে দেখবেন ভালোভাবে লক হয়েছে কিনা। সবগুলো তালার চাবি সঙ্গে রাখুন। খেয়াল রাখবেন যেন বেড়াতে গিয়ে চাবি হারিয়ে না যায়। নয়তো ফিরে এসে বিপদে পড়তে পারেন। সবকিছু শেষে বাড়ির সবগুলো কক্ষের একটি করে ছবি তুলে নিন।

অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে ভ্রমণ নয়:

ঈদে বাড়ি ফেরার সময়ে সড়ক, রেল বা নৌ পথে অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভ্রমণ করবেন না। যাতায়াতের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্কতা ও নিরাপত্তা মাথায় রাখতে হবে। অচেনা মানুষের সাথে সখ্যতা গড়ে না তুলে ভ্রমণের সঙ্গীকে নিরাপদ দূরত্বে রাখাই হবে বাঞ্ছনীয়। যাত্রাপথে একটু সতর্ক থাকুন। দ্রুত নয়, নিরাপদে বাড়ি ফেরাকেই অগ্রাধিকার দিন।

চোখের আড়াল হতে দেবেন না শিশুদের:

ঈদ উৎসবের সুবাদে নতুন প্রজন্মও মেতে উঠে আনন্দে। শেকড়ের টানে হয়ত তারা বাড়ি ফেরে না। কিন্তু তাদের কাছে বাড়ি ফেরার আনন্দ মানে চাচাতো, মামাতো, ফুফাতো, খালাতো ভাই-বোনের মিলনমেলা। দাদা-দাদি, নানা-নানিসহ পূর্ব আত্মজদের দোয়া, ভালোবাসায় সিক্ত হওয়ার ঐশ্বরিক সুখ। ঈদে তাদের প্রতি বাড়তি নজর দিন। চোখে চোখে রাখুন।

পুকুর, ডোবা, জলাশয় থেকে সাবধান:

ঈদের সময় পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু নিত্য ব্যাপার হয়ে গেছে। গ্রামের সাঁতার জানা ছেলে-মেয়ের সাথে শহর থেকে গ্রামে বেড়াতে যাওয়া ছেলে-মেয়েরা পুকুর-জলাশয়ে নেমে পড়ে। অভিভাবকদের নজরের বাইরে থাকায় এবং সাঁতার না জানায় বেঘোরে প্রাণ দিতে হয় তাদের। আনন্দ উপভোগ করতে গিয়ে পরিবারে নেমে আসে বিষাদের ছায়া। সাবধান হোন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d