অর্থনীতিচট্টগ্রাম

আবারও ‘আকাশ ছোঁয়া’ ডিমের দাম, দায় কার?

উচ্চমূল্যের মাছ-মাংসের নাগাল না পাওয়া মানুষের আমিষের চাহিদা মেটায় ডিম। তবে আবারও নাগালের বাইরে চলে গেছে পণ্যটির দাম। গেল পাঁচদিনে খুচরায় প্রতি ডজন ডিমের দাম বেড়েছে ২৪ থেকে ৩৬ টাকা। এর কারণ হিসেবে খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, তারাও পাইকারিতে বেশি দরে ডিম কিনছেন।

তবে প্রাণিসম্পদ দপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে কর্পোরেট খামারগুলো। প্রতিদিন সকালে নিজেদের খেয়াল-খুশি মতো দাম নির্ধারণ করে দেয় তারা। এদিকে কর্পোরেট খামারিরা বলছেন ভিন্ন কথা, তাদের দাবি বাজার নির্ধারণ করে দাম।

গতকাল সোমবার নগরের ২ নম্বর গেট, কাজীর দেউড়ি, অক্সিজেন মোড়, পাহাড়তলী বাজার, চকবাজার, বহদ্দারহাটসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি ডজন ডিম ১৬৮ থেকে ১৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে খুচরায়। সেই হিসেবে খুচরায় প্রতিপিস ডিমের দাম পড়ছে ১৪ থেকে ১৫ টাকা। তবে গেল ১৯ জুনও প্রতি ডজন ডিমের দাম ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকার মধ্যে ছিল। সেই হিসেবে গেল পাঁচ দিনে প্রতি ডজন ডিমের দাম বেড়েছে ২৪ থেকে ৩৬ টাকা পর্যন্ত।

খামারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সোমবার প্রতি ১০০ পিস ডিম ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ২৭০ টাকায় সরবরাহ করেছেন তারা। অবশ্য গেল ১৯ জুন-১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় ডিম সরবরাহ করেছিলেন তারা। খামারিদের দাবি, গেল রমজানে ডিমের দাম কমে যাওয়ায় অনেক খামারি উৎপাদন খরচ ও বিক্রির মধ্যে সমন্বয় করতে না পেরে খামার বন্ধ করে দেন। তাছাড়া সাম্প্রতিক দাবদাহে মারা গেছে বেশ কিছু ডিম দেওয়া মুরগি। এতেই ধাক্কা লেগেছে সরবরাহ চেইনে। বাজারে ঘাটতি তৈরি হওয়ায় বেড়েছে পণ্যটির দাম।

খুচরা বিক্রেতা ও খামারিদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী পাইকারি ও খুচরায় প্রতি পিস ডিমের দামের তফাৎ দেড় থেকে আড়াই টাকা পর্যন্ত। এত বেশি ফারাকের জন্য দুপক্ষই দুষছেন মধ্যস্বত্ত্বভোগীদের। রাউজান এলাকার খামারি তমিজ উদ্দিন বলেন, খামারিরা সহজে ডিমে মুনাফা করতে পারে না। সবচেয়ে বেশি মুনাফা করে মধ্যস্বত্ত্বভোগীরা। কয়েকবার হাত বদলের কারণে পণ্যটির দাম বাড়ে।

অনেকটা একই কথা বলেন অক্সিজেন এলাকার মুদি দোকানি মহব্বত আলী। তিনি বলেন, আমরা বেশি দাম দিয়ে কিনি। ভ্যানে করে পার্টিরা এখানে ডিম নিয়ে আসে, তারা প্রতি পিস ডিমে দুই-তিন টাকা করে লাভ করে।

ডিমের এমন মূল্যবৃদ্ধির কারণ হিসেবে চট্টগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. নজরুল ইসলাম দায়ী করছেন করপোরেট খামারি ও বাজার ব্যবস্থাকে। তিনি বলেন, কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিদিন সকালে খেয়াল-খুশি মতো ডিমের দাম নির্ধারণ করে দেয়। এতেই দামের তারতম্য ঘটে। তাছাড়া সম্প্রতি ডিমের দাম না পেয়ে অনেক খামারি খামার বন্ধ করে ফেলেছেন, গরমে কিছু মুরগি মারাও গেছে। সবমিলিয়ে বাজারে ডিমের একটা ঘাটতি তৈরি হয়েছে।

তবে পচনশীল পণ্য হওয়ায় ডিমের দামের তারতম্য হয় বলে দাবি মুরগির বাচ্চা ও ডিম উৎপাদনকারী হ্যাচারি মালিকদের সংগঠন ‘ব্রিডার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’র প্রেসিডেন্ট মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, ডলার ও প্রাসঙ্গিক জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধির কারণে প্রতিপিস ডিমের উৎপাদন খরচ এখন ১২.৬০ টাকা। বাজারে যখন সরবরাহ বেশি থাকে আর চাহিদা কম থাকে তখন কম দামে লোকসানে ডিম বিক্রি করতে হয় খামারিদের। তবে চাহিদা বাড়লে একটু দাম পায়, তাও নগণ্য। আর এটা পচনশীল পণ্য হওয়ায় দাম কম থাকলেও বিক্রি করতে হয়, রাখা যায় না। এজন্য প্রতিদিন বাজার অনুযায়ী দাম নির্ধারণ হয়। কৃষি বিপণন ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সঙ্গে ডিমের একটি স্থায়ী দাম নির্ধারণে চেষ্টা চলছে বলেও জানান তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d