আমেরিকা প্রথম স্যাংশন দিয়েছিল তারেক রহমানকে: হানিফ
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেন, বিএনপির তথাকথিত রোডমার্চ শেষ, এখন ১৮ অক্টোবরের আল্টিমেটাম। কথায় কথায় আল্টিমেটাম, আল্টিমেটামের কোনো শেষ নাই। বিএনপির মির্জা ফখরুলকে বলি, আল্টিমেটাম দেয়ার আগে একটু লজ্জার বিষয়টা ভেবে নেবেন। অবশ্য আপনারা তো লজ্জা পান না, আপনাদের লজ্জা নেই।
বিএনপির উদ্দেশে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেছেন, ‘ভিসা নীতি নিয়ে কথা বলার আগে আপনাদের একটু লজ্জিত হওয়ার দরকার ছিল। কারণ, আপনাদের নেতা তারেক রহমান, যাকে নিয়ে আপনারা এত বড়াই করছেন, সেই তো বাংলাদেশে প্রথম স্যাংশনের শিকার হয়েছে। তাকেই আমেরিকা ২০০৮ সালে সন্ত্রাসী হিসেবে প্রথম স্যাংশন দিয়েছিল।’
শুক্রবার চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ ঘোষিত শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। খবর বাসসের
বিএনপির রোডমার্চ কর্মসূচি আর দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের আল্টিমেটামের সমালোচনা করে হানিফ বলেন, ‘বিএনপির তথাকথিত রোডমার্চ শেষ, এখন ১৮ অক্টোবরের আল্টিমেটাম। কথায় কথায় আল্টিমেটাম, আল্টিমেটামের কোনো শেষ নাই। বিএনপির মির্জা ফখরুলকে বলি, আল্টিমেটাম দেয়ার আগে একটু লজ্জার বিষয়টা ভেবে নেবেন। অবশ্য আপনারা তো লজ্জা পান না, আপনাদের লজ্জা নেই।
‘সেই আল্টিমেটাম শুরু হয়েছিল ২০১৩ সাল থেকে। একদিকে খালেদা জিয়ার মামলার ট্রায়াল চলছিল, অন্যদিকে বিএনপি এতিমের টাকার লোভ যে সামলাতে পারে না, তাদের সেই তথাকথিত নেত্রীকে মামলা থেকে বাঁচাতে সারাদেশে জ্বালাও-পোড়াও শুরু করেছিল। আজ ২০২৩ সাল এখনো তাদের সেই আল্টিমেটামের শেষ হলো না।’
হানিফ বলেন, ‘তারা বলে জনগণ আর এ সরকারকে চায় না। তাহলে কাকে চায়? আপনাদের চায়? আপনারা কারা? আপনাদের নেত্রী এতিমের টাকার লোভ সামলাতে না পেরে আদালত কর্তৃক দণ্ডপ্রাপ্ত হয়েছেন। আরেক নেতা, আপনাদের মহান নেতা তারেক রহমান, যার বিরুদ্ধে চুরি, মানি লন্ডারিং, অর্থ আত্মসাতের মামলায় শুধু যাবজ্জীবন দণ্ড নয়, সুদূর সিঙ্গাপুরের আদালতও তার বিরুদ্ধে দণ্ড দিয়েছে।’
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে রাজাকারের সন্তান আখ্যা দিয়ে আওয়ামী লীগের এ নেতা বলেন, ‘মির্জা ফখরুল আপনি কার সন্তান আমরা জানি। আপনি চোখা রাজাকারের সন্তান। আপনি এবং আপনার পরিবার কি তা আপনার এলাকার মানুষও জানে।’
বৃহস্পতিবার মিরসরাইয়ে বিএনপির রোডমার্চ কর্মসূচিতে দেয়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীর বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘গতকাল আপনাদের মিরসরাইয়ে চট্টগ্রামে বাড়ি এমন একজন বিএনপি নেতা মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আমরা আবার মুক্তিযুদ্ধ শুরু করেছি। তাদের মুখে মুক্তিযুদ্ধ শব্দটা মানায় না। তারা রাজাকারের শাবক তারা রাজাকারের বংশধর। তাদের মুখে এমন বক্তব্য মানায় না।’
২০০১ পরবর্তী বিএনপি সরকারের সমালোচনা করে হানিফ বলেন, ‘বিএনপির সময়ে কয়েকটি অর্জন ছিল। তার মধ্যে একটি- পাঁচ পাঁচবার দুর্নীতিতে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। আরেকটি অর্জন ছিল- এ রাষ্ট্রকে জঙ্গিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরা। একযোগে বাংলাদেশের ৬৪ জেলায় সিরিজ বোমা হামলা চালিয়ে আপনারা দেশকে বিশ্ব দরবারে জঙ্গি রাষ্ট্র হিসেবে তুলে ধরেছিলেন।’
সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আমরা মিরসরাইবাসী প্রধানমন্ত্রীর কাছে ঋণী। ১৯৭২ সালে মহামায়া সেচ প্রকল্পের কথা প্রথম বঙ্গবন্ধুকে আমি বলেছিলাম। তিনি তাৎক্ষণিক এ প্রকেল্পর জন্য একটি পাইলট প্রকল্প দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার গঠন করার পর এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেন। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী যখন দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ার কথা বললেন তখন আমি ড. মশিউর রহমানকে নিয়ে মিরসরাইয়ে একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল করার প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীকে দিয়েছিলাম এবং তিনি তাৎক্ষণিক আমার কথায় রাজি হয়ে যান।’
আগামী নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আগামীতে আমি নির্বাচন করতে চাইছি না। সেক্ষেত্রে আমার ছেলে রুহেল মনোনয়ন চাইবে। তবে আপনাদের কথা দিতে হবে, দল যাকে মনোনয়ন দেবে তার পক্ষেই সবাই কাজ করে আবারো জননেত্রী শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী করতে হবে।’
আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রহমান বলেন, ‘সারা বাংলাদেশে আজ নির্বাচনের ঢেউ উঠেছে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আগামী ১৮ অক্টোবর চূড়ান্ত আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন। আমি বলতে চাই, সেদিন বিএনপির শোকযাত্রা হবে।’
মিরসরাই আসনে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে মোশাররফ-পুত্র রুহেলের নাম ঘোষণা করে তিনি বলেন, ‘মোশাররফ ভাই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য। তবুও আমি বলতে চাই, আমার ভাতিজা রুহেল (মোশাররফ-পুত্র) আগামীতে এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করুক।’
মিরসরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক একেএম জাহাঙ্গীর ভূঁইয়ার সঞ্চালনায় উপজেলার বারইয়ারহাট পৌর এলাকার হাইওয়ে চত্ত্বরে এ সমাবেশ হয়।