চট্টগ্রাম

আরও এক মাস পর গাড়ি চলবে কালুরঘাট সেতুতে

কর্ণফুলী নদীর ওপর নির্মিত কালুরঘাট সেতু দিয়ে চট্টগ্রামের বোয়ালখালী এবং পটিয়া ও রাঙ্গুনিয়ার প্রায় প্রতিদিন ২৫ থেকে ৩০ হাজার মানুষ চট্টগ্রাম নগরে আসা-যাওয়া করতেন। এ সেতু সংস্কার কাজের জন্য বন্ধ করে দিয়ে ফেরি ও নৌকা চলাচল শুরু করে। এতে প্রতিনিয়তই ঘটছে ছোট বড় দুর্ঘটনা। দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এ অঞ্চলের মানুষদের।

নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সংস্কার কাজ শেষ করে গাড়ি ও পথচারী পারাপারের জন্য উম্মুক্ত করে দেওয়ার কথা থাকলেও নানা অজুহাতে এখনো কালুরঘাট সেতুর সংস্কারকাজ এখনো শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এতে নদীর দুই পাড়ের বাসিন্দাদের যাতায়াত ভোগান্তি বাড়ছেই। তবে, ঈদুল আজহার আগে পথচারী পারাপারের জন্য আলাদাভাবে করা হাঁটার পথ খুলে দেওয়ায় কিছুটা স্বস্তি মিলেছে তাদের।

এদিকে, সেতুটিতে যান চলাচলের জন্য উপযোগী করতে অন্তত আরও এক মাসের সময় প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা।

তারা জানান, সেতুর পিচঢালার কাজ (কার্পেটিং) এখনো ২৫ শতাংশ বাকি রয়েছে। এ ছাড়া ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধে সেতুর দুই প্রান্তে উচ্চতা প্রতিবন্ধকতা বসানো হবে। এই কাজ করতে সময় লাগবে।

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর ওপর ১৯৩১ সালে নির্মিত হয় কালুরঘাট রেলসেতু। ১৯৬২ সালে যান চলাচল শুরু হয়। এর আগে দুবার সংস্কার করা হয়েছিল। কালুরঘাট রেলসেতুর বয়স এখন ৯৩ বছর। ঢাকা-চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ট্রেন চলাচলের জন্য সেতুতে বড় ধরনের সংস্কারকাজের উদ্যোগ নেয় রেলওয়ের পূর্বাঞ্চল। কাজ শুরু হয় গত বছরের ১ আগস্ট থেকে। এ জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের সঙ্গে ৪৩ কোটি টাকার চুক্তি করে রেল। চুক্তি অনুযায়ী চলতি বছরের মার্চে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল।

সেতুর পিচঢালার কাজ (কার্পেটিং) এখনো ২৫ শতাংশ বাকি রয়েছে। এ ছাড়া ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধে সেতুর দুই প্রান্তে উচ্চতা প্রতিবন্ধকতা বসানো হবে। এই কাজ করতে সময় লাগবে।

সংস্কার কাজ শুরুর দিন থেকে পাশে যাতায়াতের বিকল্প হিসেবে ফেরি চালু করা হয়। সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের উদ্যোগে ফেরি চালু হয়। তবে শুরুর দিনই জোয়ারের পানিতে বেইলি সেতু ডুবে যায়। সাময়িকভাবে বন্ধ ছিল ফেরিও। শুরু থেকে ফেরি পারাপারে যে ভোগান্তি তা আর পুরোপুরি দূর হয়নি। এমনকি দুটি দুর্ঘটনায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া ফেরি পারাপারের সময় দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন অনেকেই।

রেলওয়ে ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলীরা বলছেন, রেলওয়ের পক্ষ থেকে সময়মতো সংস্কারকাজের বিল পরিশোধ করা হচ্ছে না। এ কারণে কাজের গতি কমিয়ে দিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এ ছাড়া দেশের বাইরে থেকে নির্মাণ উপকরণসামগ্রী আনার ক্ষেত্রেও সময় বেশি লেগেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে রেলওয়ের এক সেতু প্রকৌশলী বলেন, কালুরঘাট সেতুর পিচঢালার কাজ হয়েছে ৭৫ শতাংশ। আগামী সপ্তাহে বাকি কাজ শুরু হবে। তা শেষ করতে ১৫ দিন সময় লাগবে। এরপর তা যান চলাচলের উপযোগী হয়েছে কি না, তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পরামর্শক দল। এরপর পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে। এসব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে অন্তত আরও এক মাস সময় লাগবে।

নতুন কালুরঘাট সেতু নির্মাণ ও এ সেতু সংস্কার কাজ দ্রুত শেষ করতে বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে মানববন্ধন, সংশ্লিষ্ট এমপি-মন্ত্রী, সরকারি দপ্তরকে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। এরপরেও ‘যে লাউ সেই কদু’। সর্বশেষ সোমবার (২৪ জুন) চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের সামনে কালুরঘাট সেতু দ্রুত সংস্কারের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরাম।

এ সময় বক্তারা বলেন, কর্ণফুলী নদীর উপর কালুরঘাট সেতু বাস্তবায়ন চট্টগ্রামের জনগণের দীর্ঘদিনের দাবি। সেতুটি নির্মাণ হলে শহরের যানজট কমবে এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। চট্টগ্রামের জনগণ এই সেতুর জন্য বহুদিন ধরে অপেক্ষা করছে, এবং সরকারকে দ্রুত এই প্রকল্প বাস্তবায়নে উদ্যোগ নিতে হবে। কালুরঘাট সেতু নির্মাণ না হওয়ায় নগরবাসীকে প্রতিনিয়ত দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এটি কেবল পরিবহন ও যোগাযোগের সমস্যা নয়, বরং নগরের সামগ্রিক উন্নয়নের সাথে সম্পর্কিত। এখন যে সেতু রয়েছে সেটির সংস্কার কাজেও ধীরগতি। এটি খুবই দুঃখজনক। আমরা সেতুর সংস্কার কাজ দ্রুত শেষ করে গাড়ি চলাচলের জন্য উম্মুক্ত করার জোর দাবি জানাচ্ছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d